শিশুরা পবিত্র, মাসুম বা নিষ্পাপ। শিশুরা রোজাও পালন করে আগ্রহ ও দৃঢ়তার সঙ্গে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘সব শিশু ফিতরাত বা প্রকৃতি তথা মানবধর্ম ইসলামের ওপরই জন্মগ্রহণ করে; তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি বানায়, নাসারা বানায় অথবা অগ্নিপূজক (মুশরিক) বানায়।’ (বুখারি: ১৩৮৫ ও মুসলিম: ২৬৫৮)
আল্লাহ তাআলার অগণিত নিয়ামতের মধ্যে সুসন্তান অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত, ‘আল্লাহ তোমাদের থেকে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদের জন্য পুত্র ও পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দিয়েছেন।’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৭২)
নাবালেগ শিশুদের নামাজ, রোজা ও আমলের সওয়াব পিতা-মাতা ও অভিভাবকেরা পাবেন। নাবালেগ শিশু রোজা রেখে ভেঙে ফেললে তার কাজা বা কাফফারা কিছুই লাগবে না। এই অঞ্চলে সাধারণত মেয়েরা ১১ থেকে ১৩ বছরে এবং ছেলেরা ১৩ থেকে ১৫ বছরে বালেগ বা সাবালক হয়; তখন থেকেই এদের নামাজ–রোজা ইত্যাদি ফরজ হয়। যদিও ৭ বছর থেকে শিখন ও ১০ বছর থেকে বাস্তব প্রশিক্ষণমূলক আমল শুরু করাতে হয়।
শিশুদের নামাজ–রোজাসহ ইবাদতে এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে অভ্যস্ত করাতে হবে, যাতে মানসিক ও নৈতিক শক্তিতে বলীয়ান হতে পারেসন্তানের শৈশব সুন্দর হলে সে ইহকাল ও পরকালে গর্বের ধন হবে। মহানবী (সা.
আল্লাহ তাআলা অনাগত সন্তানের জন্য দোয়া ও শুভকামনা শিখিয়েছেন, ‘হে আমার প্রভু! আমাকে সুসন্তান দান করুন।’ (সুরা-৩৭ ছফফাত, আয়াত: ১০০)। ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের সাথিদের ও আমাদের সন্তানদের আমাদের জন্য চোখের শীতলতায় পরিণত করুন আর আমাদের মুত্তাকিনদের প্রধান করুন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৫) ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের উভয়কে আপনার অনুগত করুন, আর আমাদের বংশধরদিগকেও আপনার অনুগত করুন; আপনার বিধান আমাদের প্রত্যক্ষ করান এবং আমাদের প্রতি মনোনিবেশ করুন! নিশ্চয় আপনি তওবা কবুলকারী ও দয়ালু।’
(সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৮)। সন্তান যেন বার্ধক্যে পিতা–মাতাকে নিঃসঙ্গ ফেলে না রাখে, সে জন্য প্রার্থনা: ‘হে আমার প্রভু! আমাকে একা ছেড়ে দেবেন না, আপনিই তো সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী দাতা।’ (সুরা-২১ আম্বিয়া, আয়াত: ৮৯)। সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন উত্তম পারিবারিক পরিবেশ। কোরআনে করিমের ভাষায়, ‘হে আমার প্রভু! আমাকে উত্তম পরিবার দান করুন, নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৩৮)
কোনো শিশু যদি অভিভাবকের অবহেলার কারণে পথচ্যুত হয়ে যায়, তাহলে সে হাশরের দিনে আল্লাহর কাছে অভিভাবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে, ‘হে আমাদের রব! আমরা আমাদের অভিভাবক ও বড়দের অনুসরণ করেছি, তারা আমাদের বিপথগামী করেছে।
হে আমাদের প্রভু! আপনি তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং মহা অভিশম্পাত করুন।’ (সুরা-৩৩ আহজাব, আয়াত: ৬৭-৬৮)। তারা আরও বলবে, ‘হে আমাদের প্রভু! যেসব জিন ও ইনসান আমাদের বিপথগামী করেছে, তাদের আমাদের সামনে আনয়ন করে প্রকাশ করুন। আমরা তাদের আমাদের পদতলে পিষ্ট করব, যাতে তারা হীন-লাঞ্ছিত-অপমানিত হয়।’ (সুরা-৪১ হা-মিম সাজদাহ, আয়াত: ২৯)।
শিশুদের নামাজ–রোজাসহ ইবাদতে এবং ধর্মীয় আচার–অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে অভ্যস্ত করাতে হবে, যাতে মানসিক ও নৈতিক শক্তিতে বলীয়ান হতে পারে। কোরআন, হাদিস ও ধর্মগ্রন্থ এবং ধর্মীয় সাহিত্য পাঠে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বোঝাতে হবে। আত্মীয়স্বজন, পাড়া–প্রতিবেশী ও সমাজের সবার সঙ্গে মেশার সুযোগ তৈরি করতে হবে। হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের সন্তানদের স্নেহ করো এবং তাদের ভালো ব্যবহার শেখাও।’ (বুখারি) ‘সন্তানকে সদাচার শিক্ষা দেওয়া দান–খয়রাতের চেয়েও উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ)। ‘তোমরা সন্তানদের জ্ঞান দান করো; কেননা তারা তোমাদের পরবর্তী যুগের জন্য সৃষ্ট।’ (বায়হাকি)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়; তবে তিনটি কাজের প্রতিদান পেতে থাকে। এমন দান যার কল্যাণ চলমান থাকে, এমন জ্ঞান যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে, এমন সৎকর্মশীল সন্তান যে তার (পিতা–মাতার) জন্য দোয়া করে।’ (ইবনে কাসির)।
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র আম দ র ত কর ন র জন য আল ল হ
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?