আসছে ঈদুল ফিতরে নৌপথে ঘরমুখো যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দিচ্ছে সরকার। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট ও আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে যাত্রীদের শঙ্কা দূর করার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এবার ঈদযাত্রায় প্রতিটি লঞ্চে কমপক্ষে চারজন করে আনসার মোতায়েন করা হবে। নৌপথ ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে নৌবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত ও বিশেষ টহল থাকবে। 

এবারের ঈদযাত্রায় লঞ্চে অনুমোদিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহনের বিরুদ্ধেও কঠোরতা দেখাবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও তার অধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতি ঈদেই এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নজরদারি থাকে। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণেই এবারের ঈদে যাত্রী হয়রানি রোধে অতিরিক্ত যাত্রী ও বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।      
এর আগে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নৌপথে সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ নৌচলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানকল্পে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ডাকা বৈঠকেও নৌযানে ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টিই বিশেষ প্রাধান্য পায়। গত বৃহস্পতিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উপস্থিত নৌপরিবহন মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও বিদ্যমান পরিস্থিতি তুলে ধরে নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানায়। 
বৈঠক শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন ঈদুল ফিতরে নৌপথে ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যাবতীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। 

নিরাপত্তার যত পদক্ষেপ
সব লঞ্চে ১৫ রমজান থেকে ঈদ-পরবর্তী দু’দিন পর্যন্ত চারজন করে আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ জন্য সরকার নির্ধারিত ডিউটি ভাতা লঞ্চ মালিকদের বহন করতে হবে। একই সময়কালে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও লঞ্চগুলোকে হকারমুক্ত রাখাতে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও কমিউনিটি পুলিশ মোতায়েন করা হবে। নারায়ণগঞ্জ, গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর এবং বরিশাল-ভোলা নৌপথসহ অন্যান্য নৌপথে ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং শ্রমিক ও যাত্রীদের হয়রানি ও ভীতিমূলক অবস্থা ঠেকাতে নৌবাহিনীসহ পুলিশ, র‌্যাব, নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল থাকবে।
যাত্রী নিরাপত্তায় সদরঘাট টার্মিনালমুখী সড়ককে যানজট ও হকারমুক্ত রাখতে পদক্ষেপ নেবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে প্রতিটি ঘাট এলাকায় ভিজিলেন্স টিম গঠন এবং প্রতিটি নদীবন্দর, টার্মিনাল ও ঘাট পয়েন্টের গেট জেটি ও পন্টুনভিত্তিক রোস্টার ডিউটির ব্যবস্থা গ্রহণ। এ ছাড়া নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে যাত্রী সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ এবং ঢাকা নদীবন্দরে (সদরঘাট) ওয়াচ টাওয়ার থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।

আরও যেসব পদক্ষেপ
ঈদযাত্রা ঘিরে নৌপথের নিরাপত্তা বিধানে আরও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে– রাতে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ ও দিনে স্পিডবোট যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরিধান নিশ্চিত করা, ১৫ রমজান থেকে ঈদ-পরবর্তী পাঁচ দিন রাতদিন সার্বক্ষণিক অভ্যন্তরীণ নৌপথে বাল্কহেড (বালুবাহী জাহাজ) চলাচল বন্ধ রাখা ও বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ; ঈদের আগের ও পরের তিন দিন করে ফেরিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও দ্রুত পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া সাধারণ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পারাপার বন্ধ রাখা, যানজট মোকাবিলায় সাতটি ফেরিঘাটে ৪৬টি ফেরি চালু রাখা, সব নদীবন্দরে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা, বিআইডব্লিউটিএর কন্ট্রোল রুম ও হটলাইন চালু, নৌপথে যে কোনো দুর্ঘটনায় উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় উদ্ধারকারী জাহাজ প্রস্তুত রাখা, লঞ্চে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাশাপাশি প্রয়োজনে ভাসমান নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে লঞ্চের ছাদে ওঠার সিঁড়ি অপসারণ, লঞ্চে যাত্রী ওঠানোর জন্য ক্যানভাসিং সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা, নদীর মাঝপথে যাত্রী উঠানো বন্ধ, লঞ্চ বা ফেরিঘাটে কর্মরত স্টাফদের নির্ধারিত ইউনিফর্ম ও আইডি কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক করা, টার্মিনালগুলোতে যাত্রী সচেতনতামূলক ও সতর্কতামূলক বাণী এবং নৌ বিজ্ঞপ্তি প্রচার ও প্রদর্শন।     
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ সমকালকে বলেন, নৌপথে ঈদযাত্রা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যের করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ 
যাত্রীদের চলাচল আনন্দমুখর ও স্বস্তিদায়ক করবে বলে আশা করছি। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদয ত র ন পর বহন ম পদক ষ প ঈদয ত র

এছাড়াও পড়ুন:

বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম

উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।

এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে  ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ