মোগল ধাঁচের ১৫ গম্বুজের হামিদিয়া তাজ মসজিদ
Published: 12th, March 2025 GMT
সড়কের পাশেই অবস্থিত মসজিদটি। স্থাপনাজুড়েই বাহারি রঙের ছড়াছড়ি। সামনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সুউচ্চ দুটি মিনার, যা সহজেই দৃষ্টি কাড়ে যে কারও। হামিদিয়া তাজ জামে মসজিদ নামের এই ধর্মীয় স্থাপনা অবস্থিত চট্টগ্রাম নগরের নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কের চন্দনপুরা এলাকায়। এটি তাই পরিচিত চন্দনপুরা মসজিদ নামে। তবে মসজিদ-ই-সিরাজ উদ-দৌলা নামেও চেনেন অনেকে।
মোগল ধাঁচে গড়ে তোলা মসজিদটিতে রয়েছে ছোট-বড় ১৫টি গম্বুজ। মাঝখানে থাকা গম্বুজটি বেশ বড়। গম্বুজের চারপাশে লেখা রয়েছে জীবদ্দশায় জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া ১০ সাহাবির নাম, ইসলামি পরিভাষায় যাঁদের বলা হয় ‘আশরায়ে মুবাশশারা’। প্রতিটি গম্বুজে যাওয়ার জন্য সিঁড়িও রয়েছে।
মসজিদের ভেতরে-বাইরে দেখা যায় লতাপাতা আর ফুলের নকশা করা নানা কারুকাজ। লাল, সাদা, সবুজ, হলুদসহ নানা রং ব্যবহার করা হয়েছে এতে। দরজা-জানালা, মিনার-মিহরাব সবখানেই বর্ণিল কারুকাজ চোখে পড়ে।
গত বৃহস্পতিবার মসজিদটির প্রশস্ত ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, দুপাশে রয়েছে ওপরে ওঠার সিঁড়ি। বাঁ দিকে গিয়ে কিছুটা সামনে এগোলেই অজুখানা। নিচতলায় নামাজঘরে ঢোকার তিনটি দরজা রয়েছে। ভেতরে দুপাশের আটটি জানালাও বেশ বড়। এসব জানালা দিয়ে মসজিদে আলো-বাতাস চলাচল স্বাভাবিক থাকার কথা। তবে স্থাপনা নির্মাণের কারণে বর্তমানে উত্তর পাশের জানালাগুলো দিয়ে আলো-বাতাস চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
মসজিদে মাঝখানে থাকা গম্বুজটি বেশ বড়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল