ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেংয়ের অবহেলিত জন্মস্থান এখন জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র
Published: 12th, March 2025 GMT
প্রযুক্তি দুনিয়ায় হইচই ফেলে দেওয়া ডিপসিক এআই চ্যাটবটের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং তারকা বনেছেন বেশ আগেই। এবার লিয়াং ওয়েনফেংয়ের জন্মস্থান দক্ষিণ চীনের গুয়াংডং প্রদেশের মিলিলিং গ্রাম পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। একসময়ের অবহেলিত ছোট গ্রামটির বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিকাজ। কেউ আবার জুতার কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে ডিপসিক চ্যাটবট উন্মুক্ত করার পরপরই গ্রামটিতে দর্শনার্থীরা আসতে থাকেন। সম্প্রতি দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে স্থানীয় প্রশাসন গ্রামটির ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়ন শুরু করেছে। বাড়িঘরে নতুন রং করার পাশাপাশি রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক নর্দমাব্যবস্থাও।
মিলিলিং গ্রাম কমিটির পরিচালক লিয়াং ওয়েনফেন জানিয়েছেন, গত জানুয়ারির শুরু থেকেই গ্রামে পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে বসন্ত উৎসবের ছুটির সময় (গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি) প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজারের বেশি দর্শনার্থী এসেছেন এই গ্রামে। অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতার কারণে শুরুতে পর্যটকদের নানা অসুবিধার মুখে পড়তে হতো। পর্যাপ্ত শৌচাগার ছিল না, রাস্তাঘাট সরু ও খানাখন্দে ভরা ছিল। এই সংকট নিরসনে স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু করেছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যটনসুবিধা বাড়াতে মিলিলিং গ্রামের ২৯টি বাড়ির বাহ্যিক অংশ সংস্কার করা হয়েছে। জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। রাস্তা প্রশস্ত করার পাশাপাশি সৌন্দর্য বাড়াতে নতুন গাছও লাগানো হয়েছে।
আরও পড়ুনতারকা বনে গেছেন ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫গ্রামের এক বাসিন্দা সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, ‘অনেকে গ্রামে এসে হাত ভর্তি করে মাটি কিংবা ছোট ছোট পাথর নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার গাছের পাতা ছিঁড়ে নিচ্ছেন।’ তবে পর্যটকদের এই অতিরিক্ত আগ্রহ লিয়াং ওয়েনফেংয়ের পরিবারের জন্য কিছুটা বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, গ্রামের বাড়িতে লিয়াং ওয়েনফেংয়ের দাদা একা বাস করেন। পর্যটকদের কৌতূহলী দৃষ্টি ও সম্ভাব্য অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে তিনি এখন বেশির ভাগ সময় ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখেন।
আরও পড়ুনচীনের ডিপসিক এআই মডেল নিয়ে কেন এত আলোচনা২৮ জানুয়ারি ২০২৫প্রসঙ্গত, লিয়াং ওয়েনফেং মিলিলিং গ্রাম থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন। বিশ্বজুড়ে আলোচনার শীর্ষে থাকলেও ওয়েনফেং নিজেকে আড়ালে রাখতে চান। তাই তিনি বরাবরই জনসমক্ষে আসার বিষয়টি এড়িয়ে চলছেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস