বছর পঁচিশের ক্রিস গেইলকে কতজনই বা চিনেছিলেন, যতটা না তাঁকে চেনা গিয়েছিল বুড়ো বয়সে! ক্যারিবিয়ান এ তারকা ‘ইউনিভার্সাল বস’ হয়েছেন তো পঁয়ত্রিশের পরে এসে। তার সেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছক্কা মারার ভঙ্গিটা দেখা গেছে ক্যারিয়ারের শেষের দিকেই। ক্রিকেটে আসলে এমন কিছু ব্যাপার থাকে, যা ব্যাকরণের মধ্যে ফেলা যায় না। যেখানে অনেকেই পঁয়ত্রিশের আগেই হাঁপিয়ে ওঠেন, সেখানে কেউ কেউ জ্বলে ওঠেন আগের চেয়েও ভয়ংকর হয়ে। 

ক্রিস গেইল, কুমারা সাঙ্গাকারা, ম্যাথু হেডেন, মোহাম্মদ হাফিজরা তাদের সেরা সময়টা কাটিয়েছেন পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব ক্যারিয়ারে। তাদের প্রত্যেকের স্ট্রাইকরেট বেড়েছে এই সময়ে। সেই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন বোধহয় বছর সাঁইত্রিশের ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। যিনি কিনা গত দুই বছরে ব্যাটিংয়ে আরও বেশি আগ্রাসী, আরও বেশি বলশালী হয়েছেন।

 আঠারো বছরের ক্যারিয়ারে প্রথম ষোলো বছর, রোহিতের স্ট্রাইকরেট ছিল ৮৯.

০২; গত আড়াই বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৭.৩৭তে। গড় আগে যা ছিল ৪৮.৬, সেটা সামান্যই বেড়েছে ৪৯.৬। অর্থাৎ রানের গড় ঠিক রেখে রান তোলার গতি বেড়েছে তার এই সময়ের মধ্যে। 

য়সের সঙ্গে সঙ্গে ধারে ও ভারে নিজেকে যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন রোহিত, তারপর তিনি বলতেই পারেন, ‘আমি এখনই অবসর নিচ্ছি না।’

গত আড়াই বছরের মধ্যে যেন স্বর্ণ সময় পার করছেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে ট্রফি জেতার অর্জনে কিংবদন্তি ইমরান খানের পাশে চলে এসেছেন। পাঁচ বা এর বেশি দল নিয়ে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি চারটি করে ট্রফি জিতেছেন মাত্র চার অধিনায়ক। পাকিস্তানের কিংবদন্তি ইমরান খান ১৯৯২ বিশ্বকাপ জেতার আগে অস্ট্রাল- এশিয়া কাপ জিতেছিলেন ১৯৮৬ ও ১৯৯০ সালে। 

এ ছাড়া ১৯৮৯ সালের ওয়ার্ল্ড সিরিজ এনে দিয়েছিলেন পাকিস্তানকে। অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি জিতেছিলেন ২০০৬ ও ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ধোনি এনেছিলেন ২০১১ বিশ্বকাপ, ২০০৭ টি২০ বিশ্বকাপ, ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ২০১৬ এশিয়া কাপ। আর অধিনায়ক রোহিত জিতেছেন ২০১৮ ও ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ, ২০২৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপ আর এবারের ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এই চারটি শিরোপার তিনটিই তিনি জিতেছেন পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব বয়সে পরিণত একজন হয়ে। বয়সেই সৌন্দর্য বেড়েছে তাদের।

৩৫ বছরের পর পারফরম্যান্স     ৩৫ বছরের আগের পারফরম্যান্স
ব্যাটার              রান          স্ট্রাইকরেট       রান     স্ট্রাইকরেট
রোহিত শর্মা      ১৮৮৫         ১১৭.৩৭     ৯২৮৩     ৮৯.০২
ক্রিস গেইল       ১৬৭০         ১০৮.৬৫     ৮৮১০     ৮৪.০৫
কুমারা সাঙ্গাকারা ৩৩৯২       ৯১.১৩        ১০৮৪২     ৭৫.৬৮ 
ম্যাথু হেডেন        ১৮৯৯          ৯১.১৩      ৪২৩৪       ৭৫.৮১
মোহাম্মদ হাফিজ   ১৫৬০        ৮৪.২৮    ৫০৫৪      ৭৪.৫২
# পঁয়ত্রিশ বছর বয়সের পর কমপক্ষে ১৫০০ রান করা ব্যাটারদের মধ্যে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ট র ইকর ট বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়

অভাগাদের বছরে ‘কুফা’ কাটানোর তালিকায় সর্বশেষ নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে গতকাল অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টেস্টের রাজদণ্ড হাতে পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়াদের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসর শেষ হয়েছে।

তবে এর রেশ থাকতেই চলে এসেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর বা চক্র। ২০২৫-২৭ চক্রের শুরুটা হচ্ছে বাংলাদেশকে দিয়েই। আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই প্রথম সিরিজ।

ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বছর পার দিলেও রেকর্ড ভালো নয়। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আসার পর থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ক্রমশ উন্নতির দিকে।

প্রথম চক্রে (২০১৯-২১) কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দ্বিতীয় চক্রে (২০২১-২৩) মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক জয় বাদ দিলে বলার মতো কিছু নেই। প্রথম দুই চক্র শেষ করতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে।

তবে তৃতীয় চক্রে (২০২৩-২৫) বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশ আশাব্যঞ্জক। ১২ টেস্ট খেলে জিতেছে চারটিতে। এর মধ্যে গত বছর পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের সুখস্মৃতিও আছে। পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান ছিল সাত নম্বরে; পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে। তিন চক্র মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৩১ টেস্ট। জিতেছে পাঁচটি, ড্র করে দুটি আর হেরেছে ২৪টি।

এবার কী হবে? শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে আশার বাণীই শুনিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল। তিনি বলেছেন, ‘গত চক্রে আমরা চারটা ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে এই চক্রে কীভাবে আরও একটা-দুইটা ম্যাচ বেশি জিততে পারি।’ সেটা কতটুকু সম্ভব, সময়ই বলে দেবে।

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের তিন চক্রের মতো এবারও অংশ নিচ্ছে ৯ দল। প্রত্যেক দল খেলবে ছয়টি করে সিরিজ—তিনটি নিজেদের মাঠে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। পয়েন্ট সিস্টেমেও কোনো পরিবর্তন আসেনি (জিতলে ১২, ড্র করলে ৪, টাই করলে ৬ পয়েন্ট)।

তবে এবার ম্যাচের সংখ্যা গত দুবারের চেয়ে একটি বেড়েছে। ফাইনালসহ মোট ম্যাচ হবে ৭১টি, সিরিজ ২৭টি। প্রত্যেক সিরিজেই সর্বনিম্ন দুই ও সর্বোচ্চ পাঁচটি ম্যাচ হবে।

চতুর্থ চক্রের ফাইনালও লর্ডসে আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ম্যাচ হবে ২০২৭ সালের জুনে। ফাইনালের আগে শেষ সিরিজ হবে সেই বছরের মার্চে; পাকিস্তানে দুটি টেস্ট খেলতে যাবে নিউজিল্যান্ড।

এবার সবচেয়ে বেশি ২২ ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। সবচেয়ে কম ১২টি করে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা, যাদের সিরিজ দিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের চক্র। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ দলের টেস্ট সিরিজ এই একটিই। নাজমুল-মুশফিক-তাইজুলদের বাকি পাঁচ সিরিজই ২০২৬ ও ২০২৭ সালে। সব সিরিজেই দুটি করে ম্যাচ।

২০২৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ মার্চে, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই বছরের আগস্টে দল যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। ২০০৩ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেটিই হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রথম টেস্ট সিরিজ।

এই চক্রে বাংলাদেশের ঘরের মাঠে দ্বিতীয় সিরিজ খেলবে ২০২৬ সালের অক্টোবরে; খেলতে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের মাসে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। বাংলাদেশের শেষ সিরিজ দেশের মাটিতেই; ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসবে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালের পর এটিই হবে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ।

অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো খবর হলো ২০২৫-২৭ চক্রে বাংলাদেশ যে ছয় দলের বিপক্ষে খেলবে, এর চারটির বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তারা হারেনি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করেছে আর পাকিস্তানকে করেছে ধবলধোলাই (দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়)। সিরিজ হেরেছে শ্রীলঙ্কা আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট পরিসংখ‌্যান
  • টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়
  • ব্রাজিলে আলোকাড়া রিবেইরোয় চোখ আর্সেনাল-নাপোলির
  • ব্রাজিলে আলো কাড়া রিবেইরোয় চোখ আর্সেনাল-নাপোলির
  • রিবেইরোয় চোখ আর্সেনাল-নাপোলির 
  • কোচ কাবরেরার পদত্যাগ দাবি, অনিশ্চয়তায় ভবিষ্যৎ