গির্জায় সুব্রত বৈদ্য হত্যা মামলায় সব আসামি খালাস
Published: 13th, March 2025 GMT
১৩ বছর আগে রাজধানীর মিরপুরের একটি গির্জায় সুব্রত বৈদ্যকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সব আসামি খালাস পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮ এর বিচারক মো. মঞ্জুরুল হোসেন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে খালাসের রায় দেন।
খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—রিপন দাস, শিমন শিকদার এবং প্রভুদান বাড়ৈ। তাদের মধ্যে প্রভুদান বাড়ৈ পলাতক। অপর দুই আসামিকে রায় ঘোষণার সময় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফজলুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বিচার চলাকালে সুব্রত বৈদ্যর প্রেমিকা নীপা দাস, তার বাবা নিবারণ দাস ও মা লিন্ডা দাস মারা গেছেন। তাদের আগেই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
২০১১ সালে সুব্রত বৈদ্য মিরপুর বাংলা কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে পড়াশোনা করতেন। চার বোনের একমাত্র ভাই সুব্রত। আর্থিক অনটনের কারণে মা-বাবা লেখাপড়ার খরচ জোগাতে না পারায় সুব্রত মিরপুর মাজার রোডের দ্বিতীয় কলোনির মেথদ লিস্ট চার্চ সানডে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ওই চার্চের নিচ তলায় নীপা দাসের বাসা ছিল। নিপা দাসের সঙ্গে সুব্রতর প্রেমের সম্পর্ক হয়। এ নিয়ে নীপা দাসের ভাই, বাবা ও মায়ের সঙ্গে সুব্রতর সম্পর্ক খারাপ হয়। তারা নীপা দাসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে সুব্রতকে চাপ দেন। সম্পর্ক ছিন্ন না করলে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়। পরে ২০১১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চার্চে ছাত্রছাত্রীদের ধর্মীয় বিষয়ে পড়ানোর পর চতুর্থ তলায় নীপা তার প্রেমিক সুব্রতকে ডেকে নেন। ওই দিন দুপুর আড়াইটায় নীপা টেলিফোনে সুব্রতের স্বজনদের জানান সুব্রত অসুস্থ। সুব্রতর মা, ভাই, বোন গির্জায় গিয়ে দেখেন তাকে নিয়ে নীপা, তার মা-বাবা ও ভাইরা নিচে নামছেন। তাকে দ্রুত মিরপুরের ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নীপার পরিবার জানায়, সুব্রত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কিন্তু, ময়নাতদন্তে জানা যায়, সুব্রতকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সুব্রতের বোন সুবর্ণা বৈদ্য প্রথমে দারুস সালাম থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তিনি থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেওয়া হয়নি। তখন সুবর্ণা বৈদ্য ঢাকার আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত দারুস সালাম থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
দারুস সালাম থানার এসআই শাহিন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ তদন্ত শেষে ছয় জনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
পরে বিচারের জন্য আদালতে গেলে দীর্ঘদিন ধরে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১৩ মার্চ রায়ের তারিখ ধার্য করেন আদালত।
ঢাকা/মামুন/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ৭ দিনের রিমান্ডে
দুর্নীতি ও রায় জালিয়াতির অভিযোগের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে পুলিশ তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্ল্যাহর আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
২০২৪ সালের ২৭ অগাস্ট শাহবাগ থানায় দুর্নীতি ও রায় জালিয়াতির অভিযোগের মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
গত ২৪ জুলাই সকালে ঢাকার ধানমন্ডির বাসা থেকে সাবেক এ প্রধান বিচারপতিকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
সম্প্রতি তার গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সংগঠনটি দাবি করেছে, ‘বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্র ধ্বংসের মূল কারিগর’ তিনি।
খায়রুল হক ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এবং ২০১১ সালের ১৭ মে বয়স অনুযায়ী অবসর গ্রহণ করেন। বিচারপতি হিসেবে তার সবচেয়ে আলোচিত এবং বিতর্কিত রায় ছিল সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী, অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে। ওই রায়ের পর দেশে আর কোনো নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়নি।
বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ২০১১ সালে এই রায় ঘোষণা করে। এতে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অসাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পরিপন্থি। এরপর থেকে নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই সরকারে থেকে নির্বাচন পরিচালনা করছে। বিরোধী দলগুলোর দাবি, এই রায়ের মধ্য দিয়েই দেশে একতরফা নির্বাচন ও গণতন্ত্রহীনতার ভিত্তি তৈরি হয়।
২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানে তিনি আইন সংস্কার সংক্রান্ত নানা প্রস্তাব ও গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন সময় আইনি সেমিনার, বক্তৃতা এবং পরামর্শমূলক কাজে অংশ নিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবী ও মহলগুলো তাকে ‘সংবিধান রক্ষার সাহসী রূপকার’ হিসেবে অভিহিত করলেও, বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর মতে তিনি ‘বিচার বিভাগের রাজনৈতিকীকরণের পথপ্রদর্শক’।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বলেছে, ‘তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করে তিনি দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন।’
ঢাকা/কেএন/ইভা