যারা দীর্ঘ মেয়াদে নিরাপদ বিনিয়োগ বেছে নিতে চান, তারা স্বর্ণে বিনিয়োগ করতে পারেন। এ খাতে বিনিয়োগের সহজ উপায় নিয়ে এসেছে ‘গোল্ড কিনেন’ নামের একটি অ্যাপ। এর মাধ্যমে যে কোনো সময় স্বর্ণ
কেনা, সঞ্চয় করা এবং প্রয়োজনে বিক্রি বা উত্তোলন করতে পারবেন গ্রাহক। সঞ্চিত স্বর্ণ বেচাকেনা করা যাবে বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) নির্ধারিত অফিসিয়াল বাজার মূল্যে। 
দেশে প্রথমবারের মতো অ্যাপের মাধ্যমে স্বর্ণ সঞ্চয় করার এই ব্যবসা চালু হয়েছে কামরান সঞ্জয় রহমান, রাফাতুল বারি লাবিব ও আতেফ হাসান নামের তিন উদ্যোক্তার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। উদ্যোক্তারা জানিয়েছন, তাদের লক্ষ্য ক্রেতার জন্য হলমার্ক ও সার্টিফায়েড ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ক্রয়, সঞ্চয় এবং উত্তোলন সহজ ও সাশ্রয়ী করে তোলা। অ্যাপটির মাধ্যমে উত্তোলন করা স্বর্ণ ঢাকা সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় সুরক্ষিত এবং বীমাকৃত ডেলিভারির মাধ্যমে এবং দেশজুড়ে ১৫০-এর বেশি নির্বাচিত পিকআপ পয়েন্টের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। 
তারা জানিয়েছেন, ‘গোল্ড কিনেন’ অ্যাপের মাধ্যমে স্বর্ণ কিনলে সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং নিরাপত্তা হিসেবে সম্পূর্ণরূপে বীমা করা থাকবে। সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত তিন, ছয় এবং বারো মাস মেয়াদে স্বর্ণ সঞ্চয় শুরু করা যাবে। প্রতি মাসে নির্ধারিত অর্থের সমপরিমাণ স্বর্ণ সঞ্চিত হবে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে। অ্যাপে সঞ্চিত স্বর্ণ যে কোনো সময় ১, ৫, ও ১০ গ্রামের স্বর্ণের বার অথবা ২ ও ৪ গ্রামের স্বর্ণের কয়েনরূপে উত্তোলন করা যাবে। গ্রাহকের অ্যাপে সংরক্ষিত স্বর্ণ থেকে প্রিয়জনকে উপহার দেওয়া যাবে। বিক্রিও করা যাবে যখন-তখন। বিক্রীত অর্থ জমা হবে গ্রাহকের ব্যাংক অথবা মোবাইল ওয়ালেট অ্যাকাউন্টে।
উদ্যোক্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অ্যাপে গোল্ড ক্রয় ও উত্তোলনের সব পেমেন্ট বিকাশ, নগদ, ভিসা এবং মাস্টারকার্ডের পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। তা ছাড়া ২২ ক্যারেট হলমার্ক প্রত্যায়িত খাঁটি স্বর্ণ এবং তা এখন দেশজুড়ে প্রত্যয়নপত্রের সঙ্গে গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করা হয়। কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনার জন্য যথাযথ সব সরকারি সংস্থার অনুমোদন, যেমন– গোল্ড ডিলিং লাইসেন্স, ডিবিআইডি ইত্যাদির বৈধতা রয়েছে। এর পাশাপাশি গোল্ড কিনেন-এর ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এবং বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সদস্যপদও রয়েছে।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে এটি কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। বাণিজ্যিকভাবে ২০২৩ সালের এপ্রিলে পুরোপুরিভাবে অ্যাপটি সর্বসাধারণের জন্য ব্যবহারযোগ্য করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে সমকালকে বিস্তারিত জানান গোল্ড কিনেন অ্যাপের প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা আতেফ হাসান। তিনি বলেন, দেশে স্বর্ণ কেনার প্রথম অ্যাপ ‘গোল্ড কিনেন’। এর মূল লক্ষ্য, মানুষের কাছে স্বর্ণকে আয়ত্তসাধ্য সঞ্চয়ের মাধ্যম গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা নিজের ইচ্ছে মতো যে কোনো পরিমাণের স্বর্ণ কিনে তা সিকিউরড ব্যাংক-গ্রেড ভল্টে সঞ্চয় করতে পারবেন। এক গ্রাম থেকে শুরু করে সঞ্চিত গোল্ড থেকে স্বর্ণের বার ও কয়েন উত্তোলনের সুযোগ রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স বর ণ স বর ণ ক ন গ র হক র

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়