বোমা মেরে গুলি করে সোনার দোকানে ডাকাতিতে ৮ চক্র
Published: 15th, March 2025 GMT
ঢাকা ও এর উপকণ্ঠে সোনার দোকানে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত আট চক্রের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বোমা মেরে, গুলি করে তাঁরা শুধু সোনার দোকানেই ডাকাতি করেন। রাজধানীর বনশ্রীতে বাসার সামনে থেকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার মামলা তদন্তে নেমে এসব চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে।
শুধু বনশ্রীর সোনার ব্যবসায়ীকে গুলি করে ডাকাতি নয়, ৯ মার্চ সাভারের আশুলিয়ায় এবং গত বছরের জুলাই ও আগস্টে ঢাকার ডেমরা ও কেরানীগঞ্জে বোমা ও ককটেল ফাটিয়ে দুটি সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় এসব চক্রের সদস্যরা জড়িত বলে জানিয়েছে তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।
আরও পড়ুনবনশ্রীতে হামলা ও ধানমন্ডির ঘটনায় সরেজমিনে যা জানা গেল২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রতিটি চক্রে ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য রয়েছেন। সোনার দোকানে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত এসব চক্রের সদস্যদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা থাকে। সোনার দোকানে ডাকাতি করতে গিয়ে কখনো তাঁরা দোকানের মালিক ও কর্মচারীকে গুলি করেন। আবার কখনো বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে ডাকাতি করেন তাঁরা।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, সোনার দোকানে ডাকাতিতে জড়িত একাধিক চক্রকে শনাক্ত করা হয়েছে। বনশ্রীর ঘটনার পর এসব চক্রের সদস্যরা আরও একাধিক সোনার দোকানে ডাকাতির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র বলছে, বোমা মেরে সোনার দোকানে ডাকাতিতে সারা দেশে অর্ধশতাধিক চক্রের তিন শতাধিক সদস্য সক্রিয় রয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশের বাড়ি বরিশাল। এ ছাড়া এসব চক্রে কুমিল্লা, পাবনা, কুড়িগ্রাম ও মানিকগঞ্জের চরাঞ্চলের কিছু লোক রয়েছেন।
শুধু বনশ্রীর সোনার ব্যবসায়ীকে গুলি করে ডাকাতি নয়, ৯ মার্চ সাভারের আশুলিয়ায় এবং গত বছরের জুলাই ও আগস্টে ঢাকার ডেমরা ও কেরানীগঞ্জে বোমা ও ককটেল ফাটিয়ে দুটি সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় এসব চক্রের সদস্যরা জড়িত বলে জানিয়েছে তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।ঢাকায় সক্রিয় আট চক্রতদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঢাকা ও আশপাশের এলাকার সোনার দোকানে ডাকাতি করলেও তাঁদের অধিকাংশই থাকেন ঢাকার দয়াগঞ্জ, মীরহাজীরবাগ, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায়। প্রতিটি চক্রের কয়েকজন থাকেন, যাঁরা ঘুরে ঘুরে ‘টার্গেট’ ঠিক করেন। সেই দোকান রেকি করে আরেক দল। পরে মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ইমো অ্যাপ ব্যবহার করে ঢাকার বাইরে বসে পরিকল্পনা করেন। ডাকাতির দুই থেকে তিন দিন আগে অস্ত্র, বোমা নিয়ে ঢাকার একটি বাসায় ওঠেন। সেখান থেকে সোনার দোকানে ডাকাতি করেন তাঁরা। ডাকাতি শেষে সোনা ও নগদ টাকা ভাগাভাগি করে যাঁর যাঁর নিজ গ্রামে চলে যান। প্রতিটি ডাকাতির ঘটনার পর বাসা পরিবর্তন করেন চক্রের সদস্যরা। পরিকল্পনা থেকে ডাকাতি করা পর্যন্ত মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন না তাঁরা।
ঢাকা ও এর উপকণ্ঠে ডাকাতি করে অন্তত আটটি চক্র। চক্রগুলো হলো লেংড়া হাসান, দেলোয়ার ওরফে কাইল্যা দেলোয়ার, ইয়াসিন মাল, গোড়া মনির, ছগির, বড় ছগির, আল-আমিন ও কাউসার। প্রতিটি চক্রে ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য কাজ করেন। দলের প্রধানদের নামে এসব চক্রের নামকরণ করা হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় একাধিক মামলা রয়েছে। ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে একাধিকবার কারাগারে গেছেন। জামিনে বেরিয়ে আবারও ডাকাতি করেন চক্রের সদস্যরা।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঢাকা ও আশপাশের এলাকার সোনার দোকানে ডাকাতি করলেও তাঁদের অধিকাংশই থাকেন ঢাকার দয়াগঞ্জ, মীরহাজীরবাগ, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায়। প্রতিটি চক্রের কয়েকজন থাকেন, যাঁরা ঘুরে ঘুরে ‘টার্গেট’ ঠিক করেন। সেই দোকান রেকি করে আরেক দল। পরে মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ইমো অ্যাপ ব্যবহার করে ঢাকার বাইরে বসে পরিকল্পনা করেন।ডাকাতির সোনা কেনেন দুলালতদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে সোনা ডাকাতির ঘটনা তদন্তে নেমে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে একটি ডাকাত দলের প্রধান ইয়াসিন মালকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তবে জিজ্ঞাসাবাদে বনশ্রীর ঘটনায় তিনি জড়িত নন বলে দাবি করেন। তবে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে দুলাল চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। এই দুলাল সোনার দোকানে ডাকাতিতে জড়িত চক্রগুলোর কাছ থেকে সোনা কিনে বিক্রি করেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুলালকে জিজ্ঞাসাবাদে বনশ্রীতে ডাকাতিতে জড়িত সাতজনের তথ্য পাওয়া যায়। পরে ঢাকা ও বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো.
দুলাল সম্পর্কে তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, দুলাল চৌধুরীর একসময় ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকায় সোনার দোকান ছিল। পরে ডাকাত চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকায় যতগুলো চক্র ডাকাতি করে, তাদের থেকে সোনা কিনে নেন দুলাল চৌধুরী। বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে ডাকাতির সোনা কিনে বিক্রি করেন তিনি। পাশাপাশি সম্প্রতি তিনি ডাকাত দলের সঙ্গে ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়েছেন।
বংশপরম্পরায় ডাকাত তাঁরাঢাকায় সোনার দোকান ডাকাতি করে যে আটটি চক্র তাদের একটির প্রধান ইয়াসিন মাল। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বরিশালের ইয়াসিন মালের বড় ভাই ইয়াকুব মাল ছিলেন দুর্ধর্ষ ডাকাত সরদার। কয়েক বছর আগে বন্ধুকযুদ্ধে মারা যান ইয়াকুব। পরে ইয়াসিন মাল এই চক্রের প্রধান হয়ে যান।
ইয়াসিন মালের সঙ্গে ডাকাতি করেন তাঁর ভাতিজা রাকিব মাল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা বংশপরম্পরায় সোনার দোকানে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। ইয়াসিন মালের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫টির মতো মামলা রয়েছে। একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেছেন। জামিনে বেরিয়ে আবার জড়িয়ে পড়েছেন ডাকাতিতে।
ঢাকায় যতগুলো চক্র ডাকাতি করে, তাদের থেকে সোনা কিনে নেন দুলাল চৌধুরী। বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে ডাকাতির সোনা কিনে বিক্রি করেন তিনি। পাশাপাশি সম্প্রতি তিনি ডাকাত দলের সঙ্গে ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়েছেন।উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ড ক ত র ঘটন ব যবস য় ক স ত র বলছ র এল ক য় র ঘটন য় র ঘটন র বনশ র র বনশ র ত এক ধ ক কর ন ত তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন: বিএনপির যে প্রার্থীদের সঙ্গে লড়বেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতাদের যেসব আসনে নির্বাচন করার কথা রয়েছে, সেখানেও প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আরো পড়ুন:
বিএনপির প্রার্থী তালিকায় নেই তারকারা
কুষ্টিয়ায় মনোনয়নবঞ্চিত সোহরাব- সমর্থকদের বিক্ষোভ
বিএনপির ঘোষিত আসনভিত্তিক তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা-১১ (বাড্ডা-ভাটারা-রামপুরা) আসনের তাদের প্রার্থী এম এ কাইয়ুম। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম।
রংপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ এনামুল হক ভরসা। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
পঞ্চগড়-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ নওশাদ জমির। এই আসনে নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের।
কুমিল্লা-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
চাঁদপুর-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী করা হয়েছে মো. মমিনুল হককে। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত আমাদের দলের আসনভিত্তিক মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়নি। যখন চূড়ান্ত করা হবে, আপনাদের জানানো হবে।”
এর আগে রবিবার (৩ নভেম্বর) সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা ৩০০ আসন ধরে এগোচ্ছি। ঢাকা থেকেই আমি দাঁড়াব। আর কে কোন আসনে দাঁড়াবেন, আমরা প্রার্থী তালিকা এ মাসেই দিতে পারি।”
অবশ্য বিএনপি ও এনসিপি চূড়ান্ত মনোনয়ন না দেওয়া পর্যন্ত যে কোনো আসনে যেকোনো সময় পরিবর্তন আসতে পারে বলে তারা ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
ঢাকা/রায়হান/রাসেল