ঢাকা ও এর উপকণ্ঠে সোনার দোকানে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত আট চক্রের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বোমা মেরে, গুলি করে তাঁরা শুধু সোনার দোকানেই ডাকাতি করেন। রাজধানীর বনশ্রীতে বাসার সামনে থেকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার মামলা তদন্তে নেমে এসব চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে।

শুধু বনশ্রীর সোনার ব্যবসায়ীকে গুলি করে ডাকাতি নয়, ৯ মার্চ সাভারের আশুলিয়ায় এবং গত বছরের জুলাই ও আগস্টে ঢাকার ডেমরা ও কেরানীগঞ্জে বোমা ও ককটেল ফাটিয়ে দুটি সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় এসব চক্রের সদস্যরা জড়িত বলে জানিয়েছে তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

আরও পড়ুনবনশ্রীতে হামলা ও ধানমন্ডির ঘটনায় সরেজমিনে যা জানা গেল২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রতিটি চক্রে ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য রয়েছেন। সোনার দোকানে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত এসব চক্রের সদস্যদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা থাকে। সোনার দোকানে ডাকাতি করতে গিয়ে কখনো তাঁরা দোকানের মালিক ও কর্মচারীকে গুলি করেন। আবার কখনো বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে ডাকাতি করেন তাঁরা।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, সোনার দোকানে ডাকাতিতে জড়িত একাধিক চক্রকে শনাক্ত করা হয়েছে। বনশ্রীর ঘটনার পর এসব চক্রের সদস্যরা আরও একাধিক সোনার দোকানে ডাকাতির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র বলছে, বোমা মেরে সোনার দোকানে ডাকাতিতে সারা দেশে অর্ধশতাধিক চক্রের তিন শতাধিক সদস্য সক্রিয় রয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশের বাড়ি বরিশাল। এ ছাড়া এসব চক্রে কুমিল্লা, পাবনা, কুড়িগ্রাম ও মানিকগঞ্জের চরাঞ্চলের কিছু লোক রয়েছেন।

শুধু বনশ্রীর সোনার ব্যবসায়ীকে গুলি করে ডাকাতি নয়, ৯ মার্চ সাভারের আশুলিয়ায় এবং গত বছরের জুলাই ও আগস্টে ঢাকার ডেমরা ও কেরানীগঞ্জে বোমা ও ককটেল ফাটিয়ে দুটি সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় এসব চক্রের সদস্যরা জড়িত বলে জানিয়েছে তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।ঢাকায় সক্রিয় আট চক্র

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঢাকা ও আশপাশের এলাকার সোনার দোকানে ডাকাতি করলেও তাঁদের অধিকাংশই থাকেন ঢাকার দয়াগঞ্জ, মীরহাজীরবাগ, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায়। প্রতিটি চক্রের কয়েকজন থাকেন, যাঁরা ঘুরে ঘুরে ‘টার্গেট’ ঠিক করেন। সেই দোকান রেকি করে আরেক দল। পরে মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ইমো অ্যাপ ব্যবহার করে ঢাকার বাইরে বসে পরিকল্পনা করেন। ডাকাতির দুই থেকে তিন দিন আগে অস্ত্র, বোমা নিয়ে ঢাকার একটি বাসায় ওঠেন। সেখান থেকে সোনার দোকানে ডাকাতি করেন তাঁরা। ডাকাতি শেষে সোনা ও নগদ টাকা ভাগাভাগি করে যাঁর যাঁর নিজ গ্রামে চলে যান। প্রতিটি ডাকাতির ঘটনার পর বাসা পরিবর্তন করেন চক্রের সদস্যরা। পরিকল্পনা থেকে ডাকাতি করা পর্যন্ত মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন না তাঁরা।

ঢাকা ও এর উপকণ্ঠে ডাকাতি করে অন্তত আটটি চক্র। চক্রগুলো হলো লেংড়া হাসান, দেলোয়ার ওরফে কাইল্যা দেলোয়ার, ইয়াসিন মাল, গোড়া মনির, ছগির, বড় ছগির, আল-আমিন ও কাউসার। প্রতিটি চক্রে ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য কাজ করেন। দলের প্রধানদের নামে এসব চক্রের নামকরণ করা হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় একাধিক মামলা রয়েছে। ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে একাধিকবার কারাগারে গেছেন। জামিনে বেরিয়ে আবারও ডাকাতি করেন চক্রের সদস্যরা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঢাকা ও আশপাশের এলাকার সোনার দোকানে ডাকাতি করলেও তাঁদের অধিকাংশই থাকেন ঢাকার দয়াগঞ্জ, মীরহাজীরবাগ, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায়। প্রতিটি চক্রের কয়েকজন থাকেন, যাঁরা ঘুরে ঘুরে ‘টার্গেট’ ঠিক করেন। সেই দোকান রেকি করে আরেক দল। পরে মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ইমো অ্যাপ ব্যবহার করে ঢাকার বাইরে বসে পরিকল্পনা করেন।ডাকাতির সোনা কেনেন দুলাল

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে সোনা ডাকাতির ঘটনা তদন্তে নেমে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে একটি ডাকাত দলের প্রধান ইয়াসিন মালকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তবে জিজ্ঞাসাবাদে বনশ্রীর ঘটনায় তিনি জড়িত নন বলে দাবি করেন। তবে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে দুলাল চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। এই দুলাল সোনার দোকানে ডাকাতিতে জড়িত চক্রগুলোর কাছ থেকে সোনা কিনে বিক্রি করেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুলালকে জিজ্ঞাসাবাদে বনশ্রীতে ডাকাতিতে জড়িত সাতজনের তথ্য পাওয়া যায়। পরে ঢাকা ও বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো.

কাউছার (৩১), মো. ফরহাদ (৬৪), মো. খলিলুর রহমান (৫০), মো. সুমন (৩০), দুলাল চৌধুরী (৪৩) ও মো. আমিনুল (৩৫)। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে মো. কাউসার বনশ্রীতে এ ডাকাতির ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন।

দুলাল সম্পর্কে তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, দুলাল চৌধুরীর একসময় ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকায় সোনার দোকান ছিল। পরে ডাকাত চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকায় যতগুলো চক্র ডাকাতি করে, তাদের থেকে সোনা কিনে নেন দুলাল চৌধুরী। বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে ডাকাতির সোনা কিনে বিক্রি করেন তিনি। পাশাপাশি সম্প্রতি তিনি ডাকাত দলের সঙ্গে ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়েছেন।

বংশপরম্পরায় ডাকাত তাঁরা

ঢাকায় সোনার দোকান ডাকাতি করে যে আটটি চক্র তাদের একটির প্রধান ইয়াসিন মাল। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বরিশালের ইয়াসিন মালের বড় ভাই ইয়াকুব মাল ছিলেন দুর্ধর্ষ ডাকাত সরদার। কয়েক বছর আগে বন্ধুকযুদ্ধে মারা যান ইয়াকুব। পরে ইয়াসিন মাল এই চক্রের প্রধান হয়ে যান।

ইয়াসিন মালের সঙ্গে ডাকাতি করেন তাঁর ভাতিজা রাকিব মাল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা বংশপরম্পরায় সোনার দোকানে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। ইয়াসিন মালের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫টির মতো মামলা রয়েছে। একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেছেন। জামিনে বেরিয়ে আবার জড়িয়ে পড়েছেন ডাকাতিতে।

ঢাকায় যতগুলো চক্র ডাকাতি করে, তাদের থেকে সোনা কিনে নেন দুলাল চৌধুরী। বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে ডাকাতির সোনা কিনে বিক্রি করেন তিনি। পাশাপাশি সম্প্রতি তিনি ডাকাত দলের সঙ্গে ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়েছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ড ক ত র ঘটন ব যবস য় ক স ত র বলছ র এল ক য় র ঘটন য় র ঘটন র বনশ র র বনশ র ত এক ধ ক কর ন ত তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ