বিরল বন চালতার ফুল পাহাড়িদের প্রিয় সবজি
Published: 15th, March 2025 GMT
রাঙামাটি শহরের বনরূপা বাজারে সমতাঘাট এলাকায় বুধবার হাটের দিন সকালে একজন বিক্রেতার চারপাশে বেশ ভিড়। ভিড় সরিয়ে কাছে যেতেই দেখা গেল, থুরঙে (বাঁশের ঝুড়ি) করে বিক্রি করছেন আমের মুকুলের মতো হলদে-সবুজ একধরনের সবজি। মুহূর্তেই স্পষ্ট হলো ভিড়ের কারণ। এ যে ‘অগোয্যা’ বা ‘আগাজা গুলো’। চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে এ নামে পরিচিত সবজিটি অতি আদরণীয়। কেবল চাকমা নয়, সব পাহাড়ি সম্প্রদায়ের প্রিয় সবজি এটি। ৬০০ টাকা কেজি দাম হাঁকছিলেন বিক্রেতা। কিন্তু দামের পরোয়া কে করে, মুহূর্তেই শেষ সব সবজি।
‘আগোয্যা’ বা ‘আগাজা’ আসলে বিরল বন চালতার ফুল। এই ফুল পাহাড়িরা রান্না করে খায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এর স্বাদ অমৃতের মতো। সচরাচর বাজারে পাওয়া যায় না বলে দাম যতই হোক, আনার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায়।
পরিবেশবিদ ও লেখক মৃত্যুঞ্জয় রায়ের একটি লেখা থেকে জানা গেছে, ইংরেজিতে গাছটির নাম ‘ডগ টিক’ বা ‘নেপালি এলিফ্যান্ট আপেল’। অহমিয়া ভাষায় ‘অকশি’। ঢাকা-ময়মনসিংহ অঞ্চলে এর নাম ‘আকুশি’, ‘আকশি’, ‘কারকোটা’, ‘আজুগি’, ‘আজুলি’ ইত্যাদি; চট্টগ্রামে ‘হারগজা’ বা ‘আরগেজা’; সিলেটে ‘একুশ’। ক্ষুদ্র জনজাতির ভাষায়ও এ গাছের বিচিত্র নাম আছে। ত্রিপুরারা একে বলে ‘মানদুই বাঠায়’ ও মারমারা ‘জাংব্রেসি’। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের কাছে বন চালতা এক মহামূল্যবান ভেষজ বৃক্ষ।
বন চালতা আসলে চালতারই সহোদর। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম dillenia pentagyna। পরিবার ডিলেনিয়েসি। বন চালতা মাঝারি আকারের বৃক্ষ হলেও মাঝেমধ্যে বেশ বড় গাছও চোখে পড়ে। পাতা লম্বাটে ডিম্বাকার, কিনারা খাঁজকাটা, পাতার গোড়ার দিকটা সামান্য সরু।
বন চালতাগাছ পাহাড়ের বিভিন্ন বনে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। মার্চ মাসের শুরুতেই বাজারে এর ফুল আসতে শুরু করে। পাহাড়িরা বিভিন্ন বন ও জঙ্গল থেকে ফুল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। ফুল ছাড়া এর ফলও খাওয়া হয় একইভাবে। ফুল ও ফল চিংড়ি ও মাছ দিয়ে রান্না করা হয়। এ ছাড়া অনেকে ভর্তা করেও খান। পাতাবিহীন অবস্থায় বসন্ত ও গ্রীষ্মে ছোট ছোট অসংখ্য ফুল আসে। এরপর ফল হয়। সেই থোকায় থোকায় ফুল ও ফল পেড়ে আনা হয় বিক্রির জন্য। ফুলে হালকা সুগন্ধও আছে।
বনরূপা বাজারে বন চালতা নিয়ে এসেছিলেন পারু তঞ্চঙ্গ্যা নামের এক সবজি বিক্রেতা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এ বছরের জন্য প্রথম “আগাজা গুলো” বিক্রি করছি। এই সবজিটি পাহাড়ি সম্প্রদায়ের কাছে খুবই প্রিয়। দাম যতই হোক, দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়।’
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের চেলাছড়া গ্রামে একটি বন চালতাগাছ আছে। গাছটি অনন্ত চাকমা নামের এক ব্যক্তির। তিনি বলেন, ‘আমি একটি গাছ সংরক্ষণ করে রেখেছি। এ বছর ফল ধরা শুরু করেছে। এখনো বিক্রি শুরু করিনি। গত বছর এই গাছ থেকে ২৬ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছি। এ বছর এর চেয়ে বেশি টাকার ফল বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’
রাঙামাটির কবি ও লেখক সুগত চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগাজা গুলো খুবই সুস্বাদু একটি সবজি। প্রতিবছর এ সময়ে আগ্রহে থাকি, বাজারে কবে পাওয়া যাবে। পাহাড়িরা শত বছর ধরে সবজি হিসেবে খেয়ে আসছে। একসময় পার্বত্য চট্টগ্রামে নিবিড় বন ছিল। এখন বন নেই। তাই এই গাছও সব জায়গায় হয় না।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস
আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে টাইব্রেকারে কিংসের জয়ের নায়ক ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়
সমকাল: দু’দিনের ফাইনালের অভিজ্ঞতাটা কেমন হলো?
শ্রাবণ: (হাসি) না, এটা খুব কঠিন ছিল। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি এক দিন ফাইনাল খেলব, জিতব এবং উদযাপন করব। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে খেলা অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। বাকি ১৫ মিনিট আরেক দিন। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। একই চাপ দু’বার নিতে হলো।
সমকাল: এই মাঠের সমস্যার কারণেই কি এমনটা হয়েছে?
শ্রাবণ: অবশ্যই। এত বড় একটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা যে মাঠে, সেখানে ফ্লাডলাইট নেই। যদি ফ্লাডলাইটের সুবিধা থাকত, ওই দিনই খেলাটা শেষ করা যেত। আমার মনে হয়, দেশের ফুটবলের কিছু পরিবর্তন করা উচিত। বিশেষ করে আমরা যখন জাতীয় দলের হয়ে বিদেশে খেলতে যাই, তখন দেখি অন্যান্য দেশের মাঠ খুব গতিশীল। আমাদের দেশের মাঠগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের না। প্রায় সময়ই সমস্যা হয়। আমরা স্লো মাঠে খেলি। বিদেশে গতিশীল মাঠে খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের লিগটা যদি আন্তর্জাতিক মানের মাঠে হতো।
সমকাল: পেনাল্টি শুটআউটের সময় কী পরিকল্পনা ছিল আপনার?
শ্রাবণ: আমি আগেও বলেছি যে অনুশীলনের সময় আগের ম্যাচের টাইব্রেকার নিয়ে কাজ করেছি। কে কোন দিকে মারে, সেগুলো ট্রেনিংয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কোচ। কোচের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি এবং সফল হয়েছি।
সমকাল: এমেকার শট ঠেকানোর পর মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছেন। এটি কি আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল?
শ্রাবণ: না, সেভ দেওয়ার পর মাথায় এলো। তাই এমি মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছি। বলতে পারেন, এটি কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তৎক্ষণাৎ মাথায় এলো।
সমকাল: জাতীয় দল আর ক্লাব– দুটোর অভিজ্ঞতা যদি একটু বলতেন।
শ্রাবণ: ক্লাব আর জাতীয় দল– দুটো ভিন্ন বিষয়। ক্লাব হচ্ছে শুধু একটা ক্লাবকে প্রতিনিধিত্ব করা। আর জাতীয় দল তো পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। যারা ক্লাবে ভালো পারফরম্যান্স করে, তাদেরই জাতীয় দলে ডাকে। আর জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা একজন প্লেয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন।
সমকাল: আপনি একটি সেভ করেছেন। কিন্তু আবাহনীর মিতুল মারমা পারেননি। জাতীয় দলে বেস্ট ইলেভেনে থাকতে পারবেন?
শ্রাবণ: না না, ব্যাপারটা এমন না। ও (মিতুল) সেভ করতে পারেনি আর আমি পারছি– এটি কিন্তু বড় বিষয় না। ও কিন্তু সেমিফাইনালে সেভ করে দলকে ফাইনালে এনেছে। বরং অনুশীলনে কোচ যাঁকে ভালো মনে করেন, তাঁকেই শুরুর একাদশে রাখেন।
সমকাল: একজন গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
শ্রাবণ: আমি চাই দেশসেরা গোলরক্ষক হতে। আমার স্বপ্ন আছে, বিদেশে লিগে খেলব।