রাঙামাটি শহরের বনরূপা বাজারে সমতাঘাট এলাকায় বুধবার হাটের দিন সকালে একজন বিক্রেতার চারপাশে বেশ ভিড়। ভিড় সরিয়ে কাছে যেতেই দেখা গেল, থুরঙে (বাঁশের ঝুড়ি) করে বিক্রি করছেন আমের মুকুলের মতো হলদে-সবুজ একধরনের সবজি। মুহূর্তেই স্পষ্ট হলো ভিড়ের কারণ। এ যে ‘অগোয্যা’ বা ‘আগাজা গুলো’। চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে এ নামে পরিচিত সবজিটি অতি আদরণীয়। কেবল চাকমা নয়, সব পাহাড়ি সম্প্রদায়ের প্রিয় সবজি এটি। ৬০০ টাকা কেজি দাম হাঁকছিলেন বিক্রেতা। কিন্তু দামের পরোয়া কে করে, মুহূর্তেই শেষ সব সবজি।

‘আগোয্যা’ বা ‘আগাজা’ আসলে বিরল বন চালতার ফুল। এই ফুল পাহাড়িরা রান্না করে খায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এর স্বাদ অমৃতের মতো। সচরাচর বাজারে পাওয়া যায় না বলে দাম যতই হোক, আনার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায়।

পরিবেশবিদ ও লেখক মৃত্যুঞ্জয় রায়ের একটি লেখা থেকে জানা গেছে, ইংরেজিতে গাছটির নাম ‘ডগ টিক’ বা ‘নেপালি এলিফ্যান্ট আপেল’। অহমিয়া ভাষায় ‘অকশি’। ঢাকা-ময়মনসিংহ অঞ্চলে এর নাম ‘আকুশি’, ‘আকশি’, ‘কারকোটা’, ‘আজুগি’, ‘আজুলি’ ইত্যাদি; চট্টগ্রামে ‘হারগজা’ বা ‘আরগেজা’; সিলেটে ‘একুশ’। ক্ষুদ্র জনজাতির ভাষায়ও এ গাছের বিচিত্র নাম আছে। ত্রিপুরারা একে বলে ‘মানদুই বাঠায়’ ও মারমারা ‘জাংব্রেসি’। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের কাছে বন চালতা এক মহামূল্যবান ভেষজ বৃক্ষ।

বন চালতা আসলে চালতারই সহোদর। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম dillenia pentagyna। পরিবার ডিলেনিয়েসি। বন চালতা মাঝারি আকারের বৃক্ষ হলেও মাঝেমধ্যে বেশ বড় গাছও চোখে পড়ে। পাতা লম্বাটে ডিম্বাকার, কিনারা খাঁজকাটা, পাতার গোড়ার দিকটা সামান্য সরু।

বন চালতাগাছ পাহাড়ের বিভিন্ন বনে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। মার্চ মাসের শুরুতেই বাজারে এর ফুল আসতে শুরু করে। পাহাড়িরা বিভিন্ন বন ও জঙ্গল থেকে ফুল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। ফুল ছাড়া এর ফলও খাওয়া হয় একইভাবে। ফুল ও ফল চিংড়ি ও মাছ দিয়ে রান্না করা হয়। এ ছাড়া অনেকে ভর্তা করেও খান। পাতাবিহীন অবস্থায় বসন্ত ও গ্রীষ্মে ছোট ছোট অসংখ্য ফুল আসে। এরপর ফল হয়। সেই থোকায় থোকায় ফুল ও ফল পেড়ে আনা হয় বিক্রির জন্য। ফুলে হালকা সুগন্ধও আছে।

বনরূপা বাজারে বন চালতা নিয়ে এসেছিলেন পারু তঞ্চঙ্গ্যা নামের এক সবজি বিক্রেতা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এ বছরের জন্য প্রথম “আগাজা গুলো” বিক্রি করছি। এই সবজিটি পাহাড়ি সম্প্রদায়ের কাছে খুবই প্রিয়। দাম যতই হোক, দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়।’

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের চেলাছড়া গ্রামে একটি বন চালতাগাছ আছে। গাছটি অনন্ত চাকমা নামের এক ব্যক্তির। তিনি বলেন, ‘আমি একটি গাছ সংরক্ষণ করে রেখেছি। এ বছর ফল ধরা শুরু করেছে। এখনো বিক্রি শুরু করিনি। গত বছর এই গাছ থেকে ২৬ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছি। এ বছর এর চেয়ে বেশি টাকার ফল বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’

রাঙামাটির কবি ও লেখক সুগত চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগাজা গুলো খুবই সুস্বাদু একটি সবজি। প্রতিবছর এ সময়ে আগ্রহে থাকি, বাজারে কবে পাওয়া যাবে। পাহাড়িরা শত বছর ধরে সবজি হিসেবে খেয়ে আসছে। একসময় পার্বত্য চট্টগ্রামে নিবিড় বন ছিল। এখন বন নেই। তাই এই গাছও সব জায়গায় হয় না।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইরানের রাজধানী তেহরানে এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থিত সামরিক স্থাপনাগুলোতে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ ‍জুন) বিকেলে চালানো এ হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার ডেপুটি হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন।

রবিবার রাতে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ও সংবাদ সংস্থাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

ইরানে আবারো হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরো জানিয়েছে, তেহরানে ইসরায়েলের নতুন হামলায় আইআরজিসির তৃতীয় ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোহসেন বাঘেরিও নিহত হয়েছেন।

এর আগে, শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলের প্রথম হামলায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসির কমান্ডার হোসেইন সালামিসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং অন্তত ছয় জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল ইরান। 

রবিবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার ইরানজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৯০০ জন। হতাহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ জন নারী এবং বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ