আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা রমজান মাসে ব্যবসার জন্য মুখিয়ে থাকেন। বিশেষত পোশাক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবসা করেন যারা। তাদের লক্ষ্য থাকে বিগত ১১ মাসে তারা যে পরিমাণ ব্যবসা করেছেন, রমজান মাসে তার চেয়ে বেশি ব্যবসা করবেন। বাস্তবে তারা তা করেনও বটে। এ জন্য পবিত্র রমজান মাসের দিন-রাতের পুরোটা তারা ব্যবসার পেছনে ব্যয় করেন। নামাজের সময় কখন আসে, কখন যায় সে খেয়ালটুকুও অনেক ব্যবসায়ীর থাকে না। অনেকে ফরজ রোজা পর্যন্ত রাখেন না কাজের চাপের অজুহাতে; তিলাওয়াতসহ অন্যান্য নফল ইবাদত তো দূরের কথা।
বিপরীতে আল্লাহর প্রিয় বান্দারাও রমজান মাসকে ব্যবসার মাস বলেন। তবে তাদের ব্যবসাটা মহান আল্লাহর সঙ্গে। কেননা আল্লাহ এই মাসে তাঁর রহমত, নাজাত ও মাগফিরাতকে সহজলভ্য করেছেন। তিনি এই মাসে আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করেছেন। সহজ সহজ আমলের বিনিময়ে জান্নাত প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.
পবিত্র কোরআনেও মুমিনের এই পরকালীন ব্যবসার ধারণা পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দেব যা তোমাদের রক্ষা করবে মর্মন্তুদ শাস্তি থেকে। তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলে বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রম করবে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে!’ (সুরা সাফফাত, আয়াত : ১০-১১)
আরো পড়ুন:
রমজানে মুমিন নারীর করণীয়
দশ শ্রেণীর রোজাদার ও তাদের বিধান
কোরআন গবেষক আলেমরা বলেন, সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার অর্থ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের সর্বস্ব নিবেদন করা। আয়াতে বর্ণিত সম্পদ দ্বারা ফরজ ও নফল সব দান উদ্দেশ্য। ফলে তার ভেতর জাকাত, সদকাতুল ফিতর ও অর্থদান সব কিছু অন্তর্ভুক্ত হবে। আর জীবন দ্বারা আল্লাহর আনুগত্যের জন্য সব ধরনের শ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করা উদ্দেশ্য। ফলে তার ভেতর নামাজ, রোজা, হজ্জ, আল্লাহর পথে সংগ্রামসহ সব কিছু অন্তর্ভুক্ত হবে।
যে ব্যক্তি পরকালীন ব্যবসা বাণিজ্যে নিজের জীবন ও সম্পদ বিনিয়োগ করবে তার জন্য মহান আল্লাহ পুরস্কারও ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহাসাফল্য। আর তিনি দান করবেন তোমাদের কাঙ্ক্ষিত আরো একটি অনুগ্রহ। আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়। মুমিনদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত : ১২-১৩)
প্রশ্ন হলো, তাহলে মুসলমান রমজান মাসে ব্যবসা বাণিজ্য করবে না? উত্তর হলো, হ্যাঁ, তারা ব্যবসা অবশ্যই করবে, তবে পরকালকে পুরোপুরি পেছনে ফেলে নয়, বরং স্বাভাবিক ইবাদত-বন্দেগির সঙ্গে যতটা সম্ভব ততটাই করবে। সে পার্থিব ব্যবসার সঙ্গে পরকালীন ব্যবসাকেও গুরুত্ব দেবে। ঠিক যেমনটি পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেসব ব্যক্তি যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ, নামাজ আদায় ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩৭)
যারা পার্থিব ও পরকালীন উভয় ব্যবসার ভেতর ভারসাম্য রক্ষা করবে এবং পরকালকে প্রাধান্য দেবে পরের আয়াতে আল্লাহ তাদের জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করেছেন। তা হলো জীবন-জীবিকায় সীমাহীন প্রবৃদ্ধি ও প্রাচুর্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘যাতে তারা যে কাজ করে তজ্জন্য আল্লাহ তাদেরকে উত্তম পুরস্কার দেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদের প্রাপ্যের অধিক দেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩৮)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, নামাজ আদায় করে, আমি তাদের যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করে এমন ব্যবসার যার ক্ষয় নেই। এজন্য যে, আল্লাহ তাদের কাজের পূর্ণ প্রতিফল দেবেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরো বেশি দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ২৯-৩০)
একজন ব্যবসায়ী তার নিয়ত, নীতি ও আদর্শের মাধ্যমে তার ব্যবসাকে ইবাদতে পরিণত করতে পারেন। কেননা আল্লাহ তাআলা নিয়তের ওপর নির্ভর করে বান্দার আমলের প্রতিদান নির্ধারণ করেন। কেউ যদি মানুষের সেবা করার উদ্দেশ্যে ব্যবসা করে, তবে আল্লাহ তাঁকে সেবা করার প্রতিদান দেবেন। বিপরীতে কেউ যদি মানুষ ঠকিয়ে অর্থ উপার্জনের নিয়ত করে তবে আল্লাহ তাঁকে মানুষ ঠকানোর শাস্তিই দেবেন। এজন্য মহানবী (সা.) সৎ ব্যবসায়ীর পুরস্কার ঘোষণা করেছেন, ‘সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সত্যবাদী ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস ১২০৯)
সৎ ব্যবসায়ীর একটি বৈশিষ্ট্য হলো যারা ক্রেতার প্রতি কল্যাণকামী হয়। সে ক্রেতার সঙ্গে দামে ও আচরণে কোমল আচরণ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ সে ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ করুন যে বেচাকেনা ও পাওনা ফেরত চাওয়ার সময় নম্রতা অবলম্বন করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৭৬)
বিপরীতে যারা অবৈধভাবে মুনাফা অর্জনের চিন্তা করে আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্ত করেন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের খাদ্যদ্রব্য মজুদ করে আল্লাহ তাকে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত করবেন অথবা দেউলিয়া বানাবেন।’ (আল মুন্তাখাব, হাদিস : ১৭)। তিনি আরো বলেছেন, ‘পাপিষ্ঠ ছাড়া কেউ মজুদদার হতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম : ১২২৮)
সঙ্গে সঙ্গে মহানবী (সা.) ব্যবসায়িক ভুল-ত্রুটি থেকে আত্মরক্ষার উপায়ও বলেছেন। তা হলো দান-সদকা করা। তিনি বলেন, ‘ব্যাবসায়িক লেনদেনের সময় শয়তান ও গুনাহ এসে উপস্থিত হয়। অতএব তোমরা ব্যবসায়ের সঙ্গে দান-খয়রাতও যুক্ত কোরো। কেননা দান প্রতিপালকের রাগ প্রশমিত করে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১২০৮)
আল্লাহ সবাইকে রমজানের সময়গুলো যথাযথভাবে কাজে লাগানোর তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা
শাহেদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন আল ল হ ত দ র ব যবস য় র রমজ ন ম স র ব যবস ব যবস র ন ব যবস পরক ল ন কর ছ ন বল ছ ন র জন য ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প
ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিকোলাস মাদুরোর দিন ফুরিয়ে এসেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। খবর বিবিসির।
ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করতে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিটসকে বলেন, “আমার সন্দেহ রয়েছে। আমার মনে হয় না। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করছে।”
আরো পড়ুন:
ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩
নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের
ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌযানগুলোতে মার্কিন হামলা অব্যাহত থাকার মধ্যে ট্রাম্পের এই মন্তব্য এলো। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য এই হামলা প্রয়োজনীয়।
ট্রাম্প এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান মাদক বন্ধ করার লক্ষ্যে নয়, বরং ট্রাম্প বিরোধী মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি ‘অনেক কিছু’ সম্পর্কে।
বিবিসির মার্কিন নিউজ পার্টনার সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ক্যারিবীয় ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন হামলায় কমপক্ষে ৬৪ জন নিহত হয়েছে।
সম্প্রতি ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “মার্কিন হামলায় আপনি যেসব নৌযানে বিস্ফোরণ হতে দেখেন, তার প্রতিটিতে অন্তত ২৫ হাজার মাদকদ্রব্য ধ্বংস হয়। এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে মাদক সরবরাহের জন্য দায়ী।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থলপথে ভেনেজুয়েলায় হামলার পরিকল্পনা করছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প তা উড়িয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, “আমি এটা বলতে চাই না যে আমি এটা করব...আমি ভেনেজুয়েলার সাথে কী করব, আমি তা করব কিনা, তা আমি বলব না।”
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করার অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোর অভিযোগ, নৌযানগুলোতে হামলা চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায় ‘আধিপত্য বিস্তার’ করার চেষ্টা করছে।
ট্রাম্প জানান, তার সরকার ‘সারা বিশ্ব থেকে’ সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে ‘আসতে’ দেবে না।
তিনি বলেন, “তারা কঙ্গো থেকে আসে, তারা সারা বিশ্ব থেকে আসে, তারা আসছে, কেবল দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নয়। তবে বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা- খারাপ। তাদের গ্যাং আছে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্ট করে ভেনেজুয়েলার ‘ট্রেন দে আরাগুয়ার’ নাম উল্লেখ করেন। তিনি এটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ গ্যাং’ হিসেবে অভিহিত করেন।
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর থেকে, ট্রাম্প প্রশাসন মেক্সিকো এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি মাদক পাচারকারী সংগঠন ও অপরাধী গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলার ট্রেন দে আরাগুয়া এবং কার্টেল অব দ্য সানস, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মাদুরো ও তার ঘনিষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা পরিচালনা করে। তবে কারাকাস সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ঢাকা/ফিরোজ