আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা রমজান মাসে ব্যবসার জন্য মুখিয়ে থাকেন। বিশেষত পোশাক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবসা করেন যারা। তাদের লক্ষ্য থাকে বিগত ১১ মাসে তারা যে পরিমাণ ব্যবসা করেছেন, রমজান মাসে তার চেয়ে বেশি ব্যবসা করবেন। বাস্তবে তারা তা করেনও বটে। এ জন্য পবিত্র রমজান মাসের দিন-রাতের পুরোটা তারা ব্যবসার পেছনে ব্যয় করেন। নামাজের সময় কখন আসে, কখন যায় সে খেয়ালটুকুও অনেক ব্যবসায়ীর থাকে না। অনেকে ফরজ রোজা পর্যন্ত রাখেন না কাজের চাপের অজুহাতে; তিলাওয়াতসহ অন্যান্য নফল ইবাদত তো দূরের কথা। 

বিপরীতে আল্লাহর প্রিয় বান্দারাও রমজান মাসকে ব্যবসার মাস বলেন। তবে তাদের ব্যবসাটা মহান আল্লাহর সঙ্গে। কেননা আল্লাহ এই মাসে তাঁর রহমত, নাজাত ও মাগফিরাতকে সহজলভ্য করেছেন। তিনি এই মাসে আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করেছেন। সহজ সহজ আমলের বিনিময়ে জান্নাত প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.

) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আগমন করে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৯৯)

পবিত্র কোরআনেও মুমিনের এই পরকালীন ব্যবসার ধারণা পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দেব যা তোমাদের রক্ষা করবে মর্মন্তুদ শাস্তি থেকে। তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলে বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রম করবে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে!’ (সুরা সাফফাত, আয়াত : ১০-১১)

আরো পড়ুন:

রমজানে মুমিন নারীর করণীয় 

দশ শ্রেণীর রোজাদার ও তাদের বিধান

কোরআন গবেষক আলেমরা বলেন, সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার অর্থ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের সর্বস্ব নিবেদন করা। আয়াতে বর্ণিত সম্পদ দ্বারা ফরজ ও নফল সব দান উদ্দেশ্য। ফলে তার ভেতর জাকাত, সদকাতুল ফিতর ও অর্থদান সব কিছু অন্তর্ভুক্ত হবে। আর জীবন দ্বারা আল্লাহর আনুগত্যের জন্য সব ধরনের শ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করা উদ্দেশ্য। ফলে তার ভেতর নামাজ, রোজা, হজ্জ, আল্লাহর পথে সংগ্রামসহ সব কিছু অন্তর্ভুক্ত হবে।

যে ব্যক্তি পরকালীন ব্যবসা বাণিজ্যে নিজের জীবন ও সম্পদ বিনিয়োগ করবে তার জন্য মহান আল্লাহ পুরস্কারও ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহাসাফল্য। আর তিনি দান করবেন তোমাদের কাঙ্ক্ষিত আরো একটি অনুগ্রহ। আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়। মুমিনদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত : ১২-১৩)

প্রশ্ন হলো, তাহলে মুসলমান রমজান মাসে ব্যবসা বাণিজ্য করবে না? উত্তর হলো, হ্যাঁ, তারা ব্যবসা অবশ্যই করবে, তবে পরকালকে পুরোপুরি পেছনে ফেলে নয়, বরং স্বাভাবিক ইবাদত-বন্দেগির সঙ্গে যতটা সম্ভব ততটাই করবে। সে পার্থিব ব্যবসার সঙ্গে পরকালীন ব্যবসাকেও গুরুত্ব দেবে। ঠিক যেমনটি পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেসব ব্যক্তি যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ, নামাজ আদায় ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩৭)

যারা পার্থিব ও পরকালীন উভয় ব্যবসার ভেতর ভারসাম্য রক্ষা করবে এবং পরকালকে প্রাধান্য দেবে পরের আয়াতে আল্লাহ তাদের জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করেছেন। তা হলো  জীবন-জীবিকায় সীমাহীন প্রবৃদ্ধি ও প্রাচুর্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘যাতে তারা যে কাজ করে তজ্জন্য আল্লাহ তাদেরকে উত্তম পুরস্কার দেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদের প্রাপ্যের অধিক দেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩৮)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, নামাজ আদায় করে, আমি তাদের যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করে এমন ব্যবসার যার ক্ষয় নেই। এজন্য যে, আল্লাহ তাদের কাজের পূর্ণ প্রতিফল দেবেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরো বেশি দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ২৯-৩০)

একজন ব্যবসায়ী তার নিয়ত, নীতি ও আদর্শের মাধ্যমে তার ব্যবসাকে ইবাদতে পরিণত করতে পারেন। কেননা আল্লাহ তাআলা নিয়তের ওপর নির্ভর করে বান্দার আমলের প্রতিদান নির্ধারণ করেন। কেউ যদি মানুষের সেবা করার উদ্দেশ্যে ব্যবসা করে, তবে আল্লাহ তাঁকে সেবা করার প্রতিদান দেবেন। বিপরীতে কেউ যদি মানুষ ঠকিয়ে অর্থ উপার্জনের নিয়ত করে তবে আল্লাহ তাঁকে মানুষ ঠকানোর শাস্তিই দেবেন। এজন্য মহানবী (সা.) সৎ ব্যবসায়ীর পুরস্কার ঘোষণা করেছেন, ‘সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সত্যবাদী ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস ১২০৯)

সৎ ব্যবসায়ীর একটি বৈশিষ্ট্য হলো যারা ক্রেতার প্রতি কল্যাণকামী হয়। সে ক্রেতার সঙ্গে দামে ও আচরণে কোমল আচরণ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ সে ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ করুন যে বেচাকেনা ও পাওনা ফেরত চাওয়ার সময় নম্রতা অবলম্বন করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৭৬)

বিপরীতে যারা অবৈধভাবে মুনাফা অর্জনের চিন্তা করে আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্ত করেন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের খাদ্যদ্রব্য মজুদ করে আল্লাহ তাকে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত করবেন অথবা দেউলিয়া বানাবেন।’ (আল মুন্তাখাব, হাদিস : ১৭)। তিনি আরো বলেছেন, ‘পাপিষ্ঠ  ছাড়া কেউ মজুদদার হতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম : ১২২৮)

সঙ্গে সঙ্গে মহানবী (সা.) ব্যবসায়িক ভুল-ত্রুটি থেকে আত্মরক্ষার উপায়ও বলেছেন। তা হলো দান-সদকা করা। তিনি বলেন, ‘ব্যাবসায়িক লেনদেনের সময় শয়তান ও গুনাহ এসে উপস্থিত হয়। অতএব তোমরা ব্যবসায়ের সঙ্গে দান-খয়রাতও যুক্ত কোরো। কেননা দান প্রতিপালকের রাগ প্রশমিত করে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১২০৮)

আল্লাহ সবাইকে রমজানের সময়গুলো যথাযথভাবে কাজে লাগানোর তাওফিক দিন। আমিন। 

লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা
 

শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন আল ল হ ত দ র ব যবস য় র রমজ ন ম স র ব যবস ব যবস র ন ব যবস পরক ল ন কর ছ ন বল ছ ন র জন য ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম

উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।

এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে  ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ