নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) কৃষি বিভাগে নিয়ম বহির্ভূতভাবে মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী নিয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালুর অভিযোগ উঠেছে।

এ দুই শিক্ষার্থী হলেন মো. আমিনুল ইসলাম এবং জাহিদ হাসান। তারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটির শীর্ষ পদ প্রত্যাশী বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্য মতে, বিভিন্ন বিভাগের মাস্টার্স চালু এবং নিয়ম-নীতির বিষয়ে নোবিপ্রবিতে বোর্ড অফ এডভান্স স্টাডিজ (বোয়াস) নামের একটি বোর্ড রয়েছে। বোয়াসের সর্বশেষ ২১তম সভায় সর্বনিম্ন ১০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কোনো বিভাগ মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু করতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ১০ জনের কম সংখ্যক শিক্ষার্থী হলে কোনো বিভাগ মাস্টার্সের প্রোগ্রাম চালু করতে পারবে না।

আরো পড়ুন:

নোবিপ্রবিতে কোডিং পদ্ধতিতে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ

তুরস্কের ৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের সুযোগ পাচ্ছেন নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

গত বছর ডিসেম্বরে নোবিপ্রবি কৃষি বিভাগ মাস্টার্স প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। গত ১৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে পাঁচজন শিক্ষার্থীকে ভর্তিযোগ্য হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ভর্তির নির্দেশ প্রদান করে। পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে এ দুই ছাত্রদল নেতা নিজেদের ভর্তি নিশ্চিত করে।

এর মধ্যে, জেনেটিক অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং গ্রুপে ভর্তি হন মো.

আমিনুল ইসলাম এবং প্ল্যান্ট বায়োকেমিস্ট্রি গ্রুপে ভর্তি হন জাহিদ হাসান। বর্তমানে দুটি গ্রুপে মাত্র এই দুইজন শিক্ষার্থীকে নিয়েই কৃষি বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স চলমান রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী এবং রেজিস্ট্রার দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নোবিপ্রবিতে আসন্ন ছাত্রদলের কমিটিকে কেন্দ্র করেই নিয়ম না মেনেই রাজনৈতিকভাবে কৃষি বিভাগে মাস্টার্স চালু করা হয়েছে। 

শর্তের চেয়ে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে মাস্টার্স চালুর বিষয়ে কৃষি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গাজী মো. মহসিন বলেন, “শর্ত যাচাই-বাছাই করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ। আমাদের কাজ হচ্ছে ক্লাস, পরীক্ষা এবং গবেষণার কাজ করা। তবে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী হলেও পরবর্তী সেমিস্টারে অন্য গ্রুপ থেকে আরো শিক্ষার্থী এর সঙ্গে যুক্ত হবে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. তামজীদ হোসাইন চৌধুরী বলেন, “বর্তমান আইন অনুযায়ী যেকোনো বিভাগের মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি নিতে হলে সর্বনিম্ন ১০ জন হতে হবে। এর চেয়ে কম সংখ্যক নিয়ে মাস্টার্স চালু করতে আইনত বাধা আছে।”

এ বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইসমাইল বলেন, “আইন না মেনে চলার কোনো সুযোগ নেই৷ এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জন শ ক ষ র থ ন ব প রব ত ছ ত রদল

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন

যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।

যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে

২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।

শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’

গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
  • বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের মৃত্যু
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন