যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা একটি তেলবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম উপকূলে অবস্থান করছে। জাহাজটি ভাঙার জন্য চট্টগ্রাম শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে আনার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে জাহাজটি ইয়ার্ডে আনার জন্য অনাপত্তিপত্র পেতে শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

পূর্ব আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র কমোরোসের পতাকাবাহী ওই জাহাজের নাম ‘ইতাগুয়া’। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) দেওয়া জাহাজটির শনাক্তকারী নম্বর ৯১০২২৭৭। জাহাজটি ইতিমধ্যে সমুদ্রে চলাচলের ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ ধরনের জাহাজ সাধারণত জাহাজ ভাঙা মালিকেরা কিনে থাকেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের জ্বালানি তেল পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে জাহাজটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

সমুদ্রে চলাচলকারী সব জাহাজের ভৌগোলিক অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে ভেসেল ফাইন্ডার নামের একটি ওয়েবসাইট। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল সাতটা পর্যন্ত জাহাজটির অবস্থান চট্টগ্রাম উপকূলে দেখা যাচ্ছিল।

জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়া শাখার যুগ্ম সচিব সুলতানা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, ইতাগুয়া নামের জাহাজটি চট্টগ্রামের একটি শিপইয়ার্ডে আনতে অনাপত্তিপত্রের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় এখনো অনাপত্তিপত্র দেয়নি বলেন জানান তিনি।

ইরানের জ্বালানি তেল পরিবহনে যুক্ত ট্যাংকারগুলো চলাচল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ‘ইউনাইটেড এগেইনস্ট নিউক্লিয়ার ইরান’। তাদের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ৩ লাখ টন তেল পরিবহনে সক্ষম ইতাগুয়া ১৯৯৭ সালে জাপানে নির্মাণ করা হয়। মূলত নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা জ্বালানি তেল পরিবহন করতে ইরান যে ‘শ্যাডো ফ্লিট’ (ছায়া জাহাজবহর) ব্যবহার করে, তার একটি হচ্ছে এই জাহাজ।

ইউনাইটেড এগেইনস্ট ইরানের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট ৮৪ লাখ ৮৬ হাজার ২০৭ লাখ ব্যারেল তেল পরিবহন করেছে জাহাজটি। ইরানের ন্যাশনাল ইরানিয়ান ট্যাংকার কোম্পানির অধীনে জাহাজটি তেল পরিবহন করত। প্রতিষ্ঠানটিও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে।

সমুদ্রপথে মালামাল পরিবহন সংক্রান্ত খবরাখবর দেওয়া নিউজপোর্টাল ট্রেড উইন্ডের তথ্যমতে, বাংলাদেশে স্ক্র্যাপ জাহাজের প্রতি টনের দাম ৫৫০ মার্কিন ডলার থেকে কমে ৫০০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রথম আলোর হাতে আসা ইতাগুয়া বিক্রির চুক্তি অনুযায়ী, মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা এই জাহাজ প্রতি টন ৪৩৫ ডলারে বিক্রির সমঝোতা হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি হলো ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য সীমিত করা এবং বিভিন্ন বাণিজ্যের ওপর শর্তারোপ করা। ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কে গেলে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে হুমকির বিষয়ও আছে।

খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, এ মুহূর্তে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উচিত অনাপত্তিপত্র স্থগিত করে বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা। কারণ, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেখান থেকে কী সিদ্ধান্ত আসছে, তার ওপর ভিত্তি করে এগোনো ভালো হবে।

জাহাজভাঙা শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশ্বিক জোট ‘এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম’–এর তথ্যমতে, একটি জাহাজের কার্যকাল যখন শেষ হয়, তখন জাহাজটি নানা ধরনের ক্ষতিকর বর্জ্যে পূর্ণ থাকে। এ ধরনের জাহাজ ভাঙতে হলে বিশেষায়িত দক্ষতা ও ইয়ার্ডের প্রয়োজন হয়, যা বাংলাদেশের নেই।

এ প্রসঙ্গে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এসব জাহাজের সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রসহ পরিবেশদূষণে ভূমিকা আছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, জাহাজগুলো বর্জ্যমুক্ত হয়ে আসছে কি না, সেটাও শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিশ্চিত করা জরুরি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ল পর বহন অন য য় জ হ জট

এছাড়াও পড়ুন:

আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।

আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।

ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ