আর্থিকখাতের শৃংখলা ফেরাতে নতুন দুটি আইন হচ্ছে, সংশোধন হচ্ছে ছয় আই
Published: 16th, March 2025 GMT
আর্থিকখাতের শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে দুটি নতুন আইন প্রণয়নসহ ৬ আইন সংশোধন হচ্ছে। আইন দুটির একটি হচ্ছে ‘ব্যাংক রেগুলেশন অ্যাক্ট ২০২৫’ (বাস্তবায়নকাল: ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল) এবং অপরটি হচ্ছে ‘ডিসট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট’ (২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৬ সালের জুন সময় কালের জন্য)।
জানা গেছে, এই দুটি নতুন আইন তৈরির পাশাপাশি ৬টি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সব কটি আইনেরই খসড়া প্রণয়নের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে কোনো কোনোটির খসড়া চূড়ান্ত করে এর ওপর অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য খসড়া আইনটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সংস্কার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন আইন প্রণয়ন এবং পুরনো আইনগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই আইনগুলো তৈরি ও সংশোধনের কাজ শেষ হলে তা আর্থিকখাতের ভিত্তিকে মজবুত ও শৃংখলায় আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ‘ব্যাংক রেগুলেশন অ্যাক্ট ২০২৫’ এর চূড়ান্ত খসড়া ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে এবং খসড়ার ওপর অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য তা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যদিকে ‘ডিসট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট’ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে এবং খসড়ার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত পাওয়া গেছে। মতামতের ভিত্তিতে একটি সভা হয়েছে, আরেকটি সভা দ্রুতই করা হবে।
এছাড়া ৬টি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এগুলো হচ্ছে- ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন; বীমা আইন ২০১০। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ এবং বীমা কর্পোরেশন আইন ২০১৯ সংশোধন। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন ২০০৬ ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বিধিমালা ২০১০ সংশোধন; প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন ২০১০ যুগোপযোগীকরণ এবং গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন।
ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন (২০২৪ সালের ডিসেম্বর – ২০২৫ সালের এপ্রিল): ব্যাংক রেগুলেশন অ্যাক্ট এর কিছু কিছু ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইনটি অধিকতর যাচাইপূর্বক অধ্যাদেশ আকারে খসড়া প্রণয়ন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৫৮ থেকে ১০০ ধারা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন সংশোধন (অক্টোবর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫): আইনের খসড়াটি বিএসইসি পুনরায় পর্যালোচনা করার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠাবে বলে জানা গেছে।
বীমা আইন ২০১০, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ এবং বীমা কর্পোরেশন আইন ২০১৯ সংশোধন (ডিসেম্বর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫): এ দুটি আইন সংশোধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন ২০০৬ ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বিধিমালা ২০১০ সংশোধন (অক্টোবর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৬): সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর গত ডিসেম্বরে অংশীজনদের সঙ্গে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ আলোচনা শেষে তা বোর্ডসভায় উপস্থাপন কর হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন ২০১০ যুগোপযোগীকরণ (ডিসেম্বর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫): আইনটির খসড়া প্রণয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন (ডিসেম্বর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫): ইতোমধ্যে আইনটির সংশোধিত খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে ও অংশীজনদের নিয়ে গত ডিসেম্বরে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে আইন সংশোধন করে চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করা হচ্ছে।
এছাড়া রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন। রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের কর্মচারী (অনূর্ধ্ব ডিজিএম) নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন এবং রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন/সংস্কার (রূপালী-জনতা-বেসিক-রাকাব) এর কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন (অক্টোবর ২০২৪- মার্চ ২০২৫- জুন ২৫): গত বছর ৯ এপ্রিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির পর বিশ্বব্যাংক কর্তৃক গত বছর ১৬ এপ্রিল পুনরায় কতিপয় পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়। বর্তমানে বিশ্বব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-অর্থ বিভাগ-বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সম্মিলিত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের কর্মচারী (অনূর্ধ্ব ডিজিএম) নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন (অক্টোবর ২০২৪- সেপ্টেম্বর ২০২৫): অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাছ থেকে খসড়া পাওয়ার পর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে।
এছাড়াও রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন/সংস্কার (রূপালী-জনতা-বেসিক-রাকাব)- (ডিসেম্বর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫): ইতোমধ্যে রূপালী ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন করে গত ডিসেম্বরে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। জনতা-বেসিক-রাকাব এর সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
ঢাকা/হাসনাত/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গঠন ক ক ঠ ম অ শ জনদ র প রণয়ন ক র জন য র ওপর মত মত ন আইন অথর ট ক আইন র খসড়
এছাড়াও পড়ুন:
খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
দেশের ব্যাংক-আর্থিক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে চলতি বছরের মার্চ শেষে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। ৩ মাস আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।
রবিবার (১৫ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এ সময় বিতরণ করা ঋণের ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা বা ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০১ কোটি টাকা।
আরো পড়ুন:
ঈদের আমেজ ব্যাংক পাড়ায়, গ্রাহক কম
ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা চুরি: নিরাপত্তাপ্রহরীর দোষ স্বীকার
আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩০ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। তার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে খেলাপি ঋণ। ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।
তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপির প্রকৃত তখ্য বেরিয়ে আসে। সেই হিসেবে চলতি মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
চলতি মার্চ শেষে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপির পরিমাণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ ৬ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপির মধ্যে ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বা ৯০ দশমিক শূণ্য ৭ শতাংশই মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে, যা আদায় করার সম্ভবনা নেই।
এদিকে, মার্চ শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ১০ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপির মধ্যে ২ লাখ ২ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশই মন্দ ঋণ, যা আদায় করার সম্ভাবনা নেই। এ সময় বিদেশি ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ করা হযেছে ৬৭ হাজার কোটি টাকা, খেলাপির পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা।
এর আগে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের কাছে যতই নতুন তথ্য আসছে, ততই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। আমরা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পুনর্গঠন করতে চাই। যেসব ব্যাংক একীভূত করার দরকার সেগুলো একীভূত করব।”
আর রবিবার গভর্নর বলেছেন, “পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক শিগগিরই একীভূত করবে। তবে একীভূত করা ব্যাংকগুলোর কর্মীদের চাকরি ঠিক থাকবে।”
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে প্রভাবশালীরা নামে বেনামে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কম দেখানো হয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপির প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে এসেছে।
ঢাকা/এনএফ/মেহেদী