দেশের ‘নির্মল বায়ু’র শহরটির বাতাস আজ ঢাকার চেয়েও বেশি দূষিত
Published: 16th, March 2025 GMT
আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২৪টি শহরের মধ্যে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ১২তম। আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আইকিউএয়ারে ঢাকার বায়ুমান ১৩৪। এ মানকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর গণ্য করা হয়। আজ ঢাকার চেয়েও বেশি দূষণ রাজশাহী ও রংপুরে।
বায়ুদূষণের এ চিত্র তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে।
২০১৬ সালে রাজশাহীর নাম উঠে আসে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। সে বছর ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের যে কয়টি শহর মানবদেহের জন্য বাতাসে ভেসে থাকা ক্ষতিকর বস্তুকণা কমিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে রাজশাহী ছিল প্রথম। ২০১৪ থেকে ২০১৬-এর মধ্যে রাজশাহীতে এ ধরনের বস্তুকণার পরিমাণ ৬৭ শতাংশের বেশি কমেছিল। বিশ্বে এমন সফল নগরীর মধ্যে দ্বিতীয় ছিল ইরানের শহর আহভাজ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উপাত্ত তুলে ধরে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইটভাটার ওপর কড়াকড়ি, ব্যাপক সবুজায়ন, ব্যাটারিচালিত যানের প্রসার—এসবই নগরীর বায়ু নির্মল হওয়ার কারণ।
কিন্তু রাজশাহীর সেই সুদিন আর নেই। এখন শুকনা মৌসুমে প্রায় প্রতিদিনই বায়ুর মান খারাপ থাকে। আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রাজশাহীর বায়ুর মান ১৬২। আট বিভাগীয় শহরের মধ্যে আজ রাজশাহীর বায়ুর মান সবচেয়ে বেশি খারাপ। রাজশাহীর পরেই আছে রংপুর, বায়ুর মান ১৫৭। দুই শহরের বায়ুই আজ অস্বাস্থ্যকর।
এরই মধ্যে ১১ মার্চ আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৪’ তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণে ২০২৪ সালে দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর নগর হিসেবে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ দূষিত নগর ছিল ঢাকা। ২০২৩ সালে বায়ুদূষণে বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল। নগর হিসেবে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। গত বছর বায়ুদূষণে শীর্ষ দেশ ছিল আফ্রিকার চাদ। আর নগর হিসেবে শীর্ষে ছিল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি।
সার্বিকভাবে বায়ুদূষণে আগের বছরের তুলনায় গত বছর বাংলাদেশের অবস্থানের সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। তবে এ পরিবর্তনকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন না পরিবেশবাদী ও গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, দূষণ আরও বিস্তৃত হচ্ছে, এবারের প্রতিবেদন সেই বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে। কারণ, আগে দেখা গেছে, রাজধানীর তুলনায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সার্বিক গড় বায়ুমান কিছুটা ভালো থাকত। কিন্তু এবারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ও দেশের সবচেয়ে দূষিত নগরী ঢাকার বায়ুর মান প্রায় একই। উভয়ের মান ৭৮।
গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এক দিনও নির্মল বায়ু পাননি রাজধানীবাসী। চলতি মাসেরও একই হাল।
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে আছে কলকারখানা ও যানবাহনের দূষিত ধোঁয়া, ইটভাটা ও বর্জ্য পোড়ানো। দূষণ রোধে হাঁকডাক ও নানা ধরনের প্রকল্পও কম হয়নি সরকারি স্তরে, কিন্তু দূষণ কমছে না।
দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। আবার গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতেও দূষণের মান ছিল ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।