ইবাদতের বসন্তকাল রমজান। রমজান মাসে মুমিন অধিক পরিমাণে ইবাদত করতে সচষ্টে হয়। জিকির বা আল্লাহর স্মরণ ও দোয়া ইবাদতের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। অতএব আমার ইবাদত করো এবং আমার স্মরণার্থে নামাজ কায়েম করো।’ (সুরা তাহা, আয়াত : ১৪)
সুতরাং রমজান মাসের প্রতিটি ইবাদত যেন আল্লাহর স্মরণশূন্য না হয়। ইবাদতে আল্লাহর স্মরণ থাকার উদ্দেশ্য হলো ইবাদত কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া। তাতে পার্থিব কোনো মোহ ও উদ্দেশ্য না থাকা। কোনো ইবাদত যখন আল্লাহর স্মরণ, ভালোবাসা ও সন্তুষ্টির জন্য হয়, তখন সে ইবাদতকে বলা হয় ইখলাস বা নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত। বান্দার কাছে মহান আল্লাহর চাওয়া হলো তার নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং নামাজ কায়েম করতে ও জাকাত দিতে, এটাই সঠিক দ্বিন।’ (সুরা বাইয়িনাহ, আয়াত : ৫)
ইবাদতে আল্লাহর স্মরণ ও নিষ্ঠা আকস্মিকভাবে বান্দার ভেতর জন্ম নেয় না, বরং দীর্ঘ সাধনা ও চষ্টোর পরই কেবল তা তৈরি হয়। আর এ জন্যই পবিত্র কোরআনে বারবার জিকিরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা সকাল-বিকাল নিয়মতান্ত্রিকভাবে জিকিরের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘হে মুমিন! তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪১-৪২)
আরো পড়ুন:
রমজান মাসে মুমিনের ব্যবসা-বাণিজ্য
রমজানে মুমিন নারীর করণীয়
অন্য আয়াতে আল্লাহ যেসব বান্দার প্রশংসা করেছেন যারা সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে ও বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এটা নিরর্থক সৃষ্টি করোনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদের অগ্নিশাসিত থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১)
বান্দার জন্য জিকিরের সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো আল্লাহর স্মরণ লাভ করা। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, অকৃতজ্ঞ হইও না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫২)
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.
আল্লাহর জিকিরের আরেকটি পুরস্কার হলো ইহসান লাভ হওয়া। ইহসান হলো আধ্যাত্মিকতার সর্বোচ্চ স্তর। মহানবী (সা.) ইহসান সম্পর্কে বলেন, ‘তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাঁকে (আল্লাহকে) দেখছ, আর যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও তবে (স্মরণ রাখবে) তিনি তোমাকে দেখছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০)
রমজান মাসে জিকিরের মতো দোয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। কোরআনের একাধিক আয়াতে দোয়ার প্রতি বান্দাদের উৎসাহিত করে হয়েছে। ‘তোমাদের প্রভু বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ৬০)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার ওপর ঈমান আনুক। যাতে তারা ঠিক পথে চলতে পারে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৬)
রমজান মাসে দোয়া কবুলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সময় সাহরির সময়। এ সময় আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশষ্টি থাকতে আমাদের প্রতিপালক পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার কাছে চাইবে আমি তাকে দান করব, কে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৪৫)
রমজান মাসে মুমিন সকল মাসনুন দোয়াগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পাঠ করবে। বিশেষত ইফতার ও সাহরির সময় যে দোয়াগুলো পাঠ করার কথা এসেছে। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) ইফতারের সময় দোয়া করতেন, আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু, অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্যই রোজা রেখেছিলাম এবং আপনার রিজিক দ্বারাই ইফতার করলাম।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৩৫৮)
হাদিসে এসেছে, রমজান মাস আগমন করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে এই দোয়া করতে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! এই মাসে আমাকে (গুনাহ থেকে) রক্ষা করেন, আমাকে রমজানের জন্য নিরাপদ করুন (অর্থাৎ ইবাদতের তাওফিক দিন), এই মাসে করা ইবাদতগুলো কবুল করে নিন।’ (তাবারানি, হাদিস : ৯১২)
আয়েশা (রা.) মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি কদরের রাত পাই তাহলে কি দোয়া করব? তখন তিনি তাঁকে এই দোয়া শিখিয়ে দেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউয়ুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি’। অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৭৭১২)
যারা মাহে রমজানেও আল্লাহর জিকির ও দোয়া থেকে বিমুখ তারা মৃত ব্যক্তির মতো। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যারা আল্লাহর জিকির করে এবং যারা আল্লাহর জিকির করে না তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪০৭)
পবিত্র কোরআনে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্যই তার জীবন যাপন হবে সংকুচিত। আর তাকে কিয়ামতের দিন উঠাব অন্ধ করে।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ১২৪)
আল্লাহ সবাইকে দোয়া ও জিকিরের সঙ্গে রমজান অতিবাহিত করার তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা
শাহেদ//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন রমজ ন ম স র স মরণ বল ছ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।