‘আন্তর্জাতিক’ স্টেডিয়ামে হয় না টুর্নামেন্ট, আওয়ামী লীগের আমলে দেওয়া জমি ফেরতের দাবি
Published: 16th, March 2025 GMT
এক দশকের বেশি আগে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরি করার কথা বলে ১ লাখ ১ টাকা প্রতীকী মূল্যে প্রায় ৫০ একর জমি বন্দোবস্ত নিয়েছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। নামমাত্র করা সেই ‘আন্তর্জাতিক’ স্টেডিয়াম এখন পরিত্যক্ত।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) দেওয়া নিজেদের এ জমি ফেরত চায় পর্যটন করপোরেশন। ফেরত না দিলে বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী ওই মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা চেয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাটি।
এক দশক পেরোলেও স্টেডিয়ামটিতে পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো করা হয়নি, আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচও হয় না। পাশে বিমানবন্দর থাকায় সেখানে ফ্লাড লাইটসহ বড় অবকাঠামো নির্মাণ করার সুযোগ নেই। ওই জমি দিনের পর দিন অব্যবহৃত পড়ে আছে। বিদেশি বিনিয়োগ এনে এটি কাজে লাগাতে চায় পর্যটন করপোরেশন।বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের লাবণী পয়েন্টে পর্যটন করপোরেশনের গলফ মাঠে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করেছিল বিসিবি। এটির নামকরণ করা হয় ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম’। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন।
পর্যটন করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি নামেই শুধু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। এক দশক পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো করা হয়নি। আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচ হয় না। পাশে বিমানবন্দর থাকায় স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইটসহ বড় অবকাঠামো নির্মাণ করার সুযোগ নেই। ওই জমি দিনের পর দিন অব্যবহৃত পড়ে আছে। বিদেশি বিনিয়োগ এনে এটিকে কাজে লাগাতে চান তাঁরা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন করে বিষয়টি সামনে এনে পর্যটন করপোরেশন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রবেশপথ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবক ঠ ম
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি জমিতে সস্তায় সচিবদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ তদন্তে কমিটি, কার্যক্রম স্থগিত
সরকারি জমিতে সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহসানুল হককে। অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব।
তদন্ত কমিটি গঠনসংক্রান্ত আদেশ আজ রোববার প্রকাশ করা হয়েছে। ১৪ জুন প্রথম আলোয় ‘সরকারি জমিতে সস্তায় ফ্ল্যাট নেন সচিবেরা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান উল্লিখিত ফ্ল্যাট প্রকল্পের নির্মাণ এবং হস্তান্তর কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য সেতু বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের জানিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন উপদেষ্টা। এ ছাড়া সচিবসহ কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে সেতু বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, সেতু বিভাগের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন ও তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশে কমিটির কার্যপরিধি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কী পদ্ধতিতে, কিসের ভিত্তিতে এবং কাদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করা হয়েছে, তা তদন্ত কমিটি নির্ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে কি না, তা নির্ধারণ এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে। এ ছাড়া যাঁদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কিংবা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো জমি বা ফ্ল্যাট পেয়েছেন কি না, তা–ও যাচাই করবে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করবে।
সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বে (পিপিপি) ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য আবাসন নির্মাণের জন্য কেনা ৪০ একর জমি থেকে ১ দশমিক ১৫ একর জমি নিয়ে ৪টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে আমলা ও কর্মচারীদের জন্য। এর মধ্যে তিনটি ভবন সচিব ও বড় আমলাদের জন্য। তাতে ১৬৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৪০টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ হয়ে গেছে। বাকিগুলো ভবিষ্যতে সচিব ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বরাদ্দের চিন্তা রয়েছে বলে সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। চারটির মধ্যে একটি ভবন রাখা হয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মচারীদের জন্য, যেখানে ফ্ল্যাট রয়েছে ১১২টি।
ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে উত্তরা মডেল টাউনে (তৃতীয় ধাপ), যা দিয়াবাড়ি এলাকা নামে পরিচিত। সেখানে বিভিন্ন সময় সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদে থাকা সচিবেরা ফ্ল্যাট নিয়েছেন। ফ্ল্যাট পেয়েছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের প্রভাবশালী আমলারা। ফ্ল্যাট পাওয়া সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার সংখ্যা ৩২। তাঁদের মধ্যে চারজন চাকরিতে রয়েছেন, দুজন অবসরের পর বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে (এডিবি) সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন, বাকিরা অবসরে গেছেন। সচিবদের বাইরে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিবসহ বিভিন্ন পদের কর্মকর্তারা পেয়েছেন ফ্ল্যাট।
সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ ঘনিষ্ঠরাও পেয়েছেন পানির দামের ফ্ল্যাট। যেসব কর্মকর্তা সচিব পদে থেকে এসব ফ্ল্যাট নিয়েছেন, তাঁদের অনেকের আবার রাজউকের প্লট রয়েছে। সরকারি পদে থেকে তাঁরা ঢাকায় জমি ও ফ্ল্যাট—দুটোই নিয়েছেন।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১০ সালে। এর আওতায় বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি।
আরও পড়ুনসরকারি জমিতে সস্তায় ফ্ল্যাট নিয়েছেন সচিবেরা, তালিকায় কারা রয়েছেন১৪ জুন ২০২৫