ওভাল অফিসের চেহারা পাল্টে দিচ্ছেন ট্রাম্প
Published: 16th, March 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ফেডারেল সরকারকে নাটকীয়ভাবে পুনর্গঠনের জন্য কাজ করছেন, তখন তিনি প্রেসিডেন্টের আরেকটি ঐতিহাসিক দিক: ওভাল অফিসের চেহারা বদলে দিচ্ছেন।
হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার প্রায় আট সপ্তাহ পর, ট্রাম্প তার অফিসের দেয়ালে ঝুলন্ত ছবির সংখ্যা তিনগুণ বাড়িয়েছেন। দেয়ালে তাক, পতাকা, মূর্তি ও অলঙ্কার দিয়ে সাজিয়েছেন। কয়েক দশক ধরে তিনি যে স্টাইলটি মেনে চলেছেন তার সাথে সঙ্গতি রেখে, সর্বত্র সোনার দেখা মেলে: ম্যান্টলে নতুন সোনার সিঁদুরের মূর্তি এবং ফায়ারপ্লেসের ওপর পদক, পাশের টেবিলে সোনার ঈগল, দরজায় সোনালী রোকোকো আয়না এবং দরজার উপরের পেডিমেন্টে অবস্থিত, মার-এ-লাগো থেকে আনা ছোট সোনার মূর্তি। এমনকি হলের নীচে টেলিভিশনের রিমোট কন্ট্রোলটিও সোনালী রঙে মোড়ানো।
তার পরিকল্পনার সাথে পরিচিত দুজন ব্যক্তির মতে, ওভাল অফিসে একটি ঝাড়বাতি ঝুলানোর ধারণাটিও ট্রাম্প তার মাথায় রেখেছিলেন, যদিও এখন তা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে।
এসব কিছুর ফলে হোয়াইট হাউস ক্রমশ ট্রাম্পের দক্ষিণ ফ্লোরিডার বাড়ির মতো হয়ে উঠছে। ট্রাম্পের রোজ গার্ডেনকে ঘাসের উপর পাকা করে প্যাটিও-স্টাইলের বসার জায়গায় রূপান্তরিত করার পরিকল্পনার কাজ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে, ঠিক যেমন মার-এ-লাগোতে তিনি করেছেন। প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের কিউরেটরদের সাথে রোজ গার্ডেনের পরিকল্পনাগুলি ব্যক্তিগতভাবে পর্যালোচনা করেছেন।
সফররত প্রতিনিধিদলের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প দক্ষিণ পোর্টিকো ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় সফররত রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে ফার্স্ট লেডি এলেন উইলসনের ডিজাইন করা বহিরঙ্গন স্থানের জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
দক্ষিণ লনে প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের আয়োজনের জন্য একটি নতুন বলরুম তৈরি করতে যাচ্ছেন, যা মার-এ-লাগোর আদলে তৈরি করা হয়েছিল। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি একাধিক ব্লুপ্রিন্ট পর্যালোচনা করেছেন, দর্শনার্থীদের সেগুলো দেখিয়েছেন এবং নকশাগুলোতে পরিবর্তন করেছেন।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই বলেছেন যে তিনি নিজেই এই নির্মাণের খরচ বহন করবেন - এমনকি ওবামা প্রশাসনের সময়ও তিনি এটি নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন - কিন্তু ঐতিহাসিক ভিত্তিতে প্রকল্পটি এগিয়ে যাবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্পের ভাষ্য, “এটা সুন্দর হবে।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস
বাবা সন্তানের ওপর ছায়ার মতো স্নেহময় এক উপস্থিতি। নিঃশর্ত ভরসার প্রতীক। সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রয়োজনে নিজের বর্তমান, এমনকি নিজের স্বপ্নও নীরবে উৎসর্গ করে দিতে পারেন যিনি– আজ তাদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর দিন। বাবা দিবস উপলক্ষে সমতা’র বিশেষ আয়োজন। গ্রন্থনা শাহেরীন আরাফাত
আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা বৃহত্তর বরিশালে। এখন সেই জায়গাটা পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি পৌরসভার সমুদয়কাঠি গ্রাম। তখনকার সামাজিক পরিসরে আমাদের পরিবারের অবস্থা সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু ভালো ছিল। আমার বাবা বিজয় কুমার আইচ তখন পিরোজপুরে কাজ করতেন। তাঁর রেশনের দোকান ছিল। প্রতি শনিবার বাড়ি আসতেন। আমরা বাবার আশায় বসে থাকতাম। এটি ছিল আমাদের জন্য একরকম আশীর্বাদের মতো।
বাবার একটি ব্যবসাও ছিল। এ থেকে মূলত আমাদের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের চেয়ে সম্ভবত বাবার জ্ঞান বা বোধ উন্নততর ছিল। তাঁর ব্যক্তিত্বের জন্য দশ গ্রামের লোকজন তাঁকে মানত। গ্রামে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকত। বাবার সঙ্গে কথা না বলে কেউ থানা-পুলিশ করতে যেত না। বাবা সবাইকে খুব বুঝিয়ে বলত– মামলা করলে কে জিতবে, কে হারবে– এটি অনেক পরের কথা। মামলা নিয়ে বরিশাল-পিরোজপুরে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে দুই পক্ষই নিঃস্ব হয়ে পড়বে। তারচেয়ে বরং তোমরা নিজেরা মিটমাট করে ফেল।
গ্রামের পণ্ডিতরা তখন তালপাতায় অ-আ-ক-খ শেখাতেন হাত ধরে ধরে। আমার সেটি একদম পছন্দ হতো না। বাবা কী করলেন, তিনি একটা স্লেট ও পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে শুরু করলেন। অ-আ-ক-খ দিয়ে যত ছবি আঁকা হয়, তা শেখাতেন। এর মধ্যে আমার যে ছবিটা পছন্দ হতো, সেটি আমি মনের মধ্যে গেঁথে নিতাম। যার ফলে বাবার মাধ্যমে অত্যন্ত আনন্দদায়ক এক শিক্ষা পেয়েছি আমি।
আমার বাবারা ছিলেন ৪ ভাই। এর মধ্যে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দু’জন পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। আমার বাবা ও এক কাকা বাড়ি ছেড়ে যাননি। আমরা ছিলাম ৬ ভাই ৩ বোন। কাকাতো ভাই ৪ জন, বোন একজন। মোট ১৪ ভাইবোন। কাকা কম বয়সেই গত হন। বিলাসী জীবন আমাদের ছিল না। তবে গ্রামের মানুষের কাছে আমরা ছিলাম বড়লোক। পরিবারে অনেক সদস্য থাকলেও খাবারের অভাব হতো না কখনোই। এমনকি দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থায়ও খাবারের কষ্ট করতে হয়নি। আমাদের একটা গুদামঘর ছিল। সেখানে বাবা পাশের বন্দর কাউখালী থেকে সারা বছরের চাল, ডাল, পাউডার দুধ, চিনি, লবণ, গুড় এনে ড্রামে ভরে রাখতেন। বাইরে যত সংকটই থাকুক না কেন, বছরজুড়ে খাবারের অভাব হতো না। সমস্যা হতো ঝড়ের সময়। উপকূলীয় অঞ্চলে এমন ঝড় মাঝে মাঝেই আসত। কখনও ঘরের চাল উড়ে গেলে আমরা সমস্যায় পড়ে যেতাম।
অন্যদের সামনে বাবা নিজের অবস্থানের জন্যই বেশি হাসি-তামাশা করতেন না। যখন আমাদের সঙ্গে থাকতেন, তখন তিনি একজন সাধারণ মানুষের মতো হাসি-খুশি থাকতেন। তখনকার বাবাদের আমরা মারধর করতে দেখেছি, এমনকি খড়ম দিয়ে পেটাতে দেখেছি। বাবা আমার গালে জীবনেও একটা চড় মারেনি। কোনো ভাইবোনকেও মারধর করতে দেখিনি। তখন হয়তো আরও এমন বাবা ছিলেন। তবে গ্রামে আমি এমন বাবা আর দেখিনি। সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরলেও তিনি কখনও জিজ্ঞেস করতেন না, কেন দেরি করে ঘরে ফিরেছি।