Prothomalo:
2025-11-03@00:52:09 GMT

একজন বিবাগি

Published: 11th, July 2025 GMT

জীবনে লক্ষ কোটি বন্ধু থাকলে সমস্যা। কোনো বন্ধুই ঠিক সময়ে কোনো কাজে লাগে না। যেমন আমার বন্ধু নুরুল কবির রন্টু। ছোটবেলার বন্ধু। ঢাবিতে চান্স পেল সায়েন্সে, কার্জন হলে। আর আমি এলাম কলাভবনে। যে আমলের কথা বলছি, তখনো মানুষ ল্যান্ডফোনেই আলাপ-সালাপ করত। রং নাম্বার টেলিফোনে প্রেম-ট্রেমও হতো। আমার বন্ধু রন্টুর সঙ্গেও এক মেয়ের ল্যান্ডফোনে কথা হতে লাগল। কথা বলতে বলতে তারা যখন বেশ ঘনিষ্ঠ হলো, তখন দেখা করার পরিকল্পনা হলো। মেয়ে কলা অনুষদের, ছেলে কার্জন হলের। রন্টু আমার কাছে এসেছে। কলাভবনের চারতলায় সেই মেয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা।

সে দারুণ উত্তেজিত। মেয়ের নাম অনন্যা। কণ্ঠস্বর নাকি গায়িকা সুমনা হকের মতো। মেয়ে দেখতে কেমন হবে, তা নিয়ে রন্টু দারুণ চিন্তিত। তার মন বলছে মেয়ে দেখতে ভালো হবে না। কুৎসিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সুন্দর হলে সে এই মেয়েকে বিয়ে করে ফেলবে। কোনো সমস্যা নেই। সামান্য একটু সুন্দর হলেই হবে। 

আমিও খুব চিন্তিত মুখে ওর সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছি। রন্টুর কাছে শুনলাম মেয়ে নাকি আজ শাড়ি পরে আসবে। নীল শাড়ি। তা দেখেই রন্টু ওকে চিনে নেবে।

কাজেই আমি আর রন্টু দুজনেই নীল শাড়ি পরা এক মেয়ের খোঁজে দাঁড়িয়ে রইলাম। তখন তো কারও কাছেই মুঠোফোন নেই। মেয়েটা কোথায় আছে, আদৌ এসেছে কি না, বোঝার কোনো উপায় নেই। ঠিক বারোটা পঞ্চাশে ক্লাস শেষের পরেই রন্টুর সঙ্গে চারতলায় দেখা হওয়ার কথা। 

ক্লাস শেষ হয়েছে, ভাঙা ক্লাসের ছেলেমেয়েরা গল্প করতে করতে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। এরা অন্য ডিপার্টমেন্টের বলে কাউকেই চিনি না। অন্য ডিপার্টমেন্টের ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে আমার অস্বস্তিও হচ্ছিল। কিন্তু দাঁড়িয়ে রইলাম।

অবশেষে মেয়েটা এল। নীল শাড়ি পরে। দূর থেকে হাত নেড়ে আমাকে ডাকল। সম্ভবত আমাকেই রন্টু ভেবেছে। আমি রন্টুকে ঠেলে দিলাম। রন্টু আমার দিকে তাকাল। ওর চোখে–মুখে আতঙ্কের ছাপ। ও যা আশঙ্কা করেছিল, তা মেলেনি। মেয়ে সুন্দরী। যাকে বলে অপরূপা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ফোনে দিনরাত কথা বললেও সামনাসামনি হতে ওর দারুণ অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু আমি কী করতে পারি? এসব ক্ষেত্রে আমি আরও নাদান। 

কাজেই রন্টুকে অনন্যার দিকে পাঠিয়ে দিয়ে দ্রুত নিচতলায় চলে এলাম। ওখানে দুলাল বলে একটা ছেলে চায়ের ফ্লাস্ক নিয়ে ঘোরাঘুরি করে। আমাকে দেখে দৌড়ে এল। কিছু না বলতেই কাচের গ্লাসে চা ঢেলে দিল।

‘এই যে।’ রিনরিনে কণ্ঠ শুনে পেছনে তাকালাম। 

একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চেনা মেয়েরাই সচরাচর আমার সঙ্গে কথা বলে না। এড়িয়ে চলে। এড়িয়ে চলার কারণ অনুমান করতে পারি। এখানে বলার প্রয়োজন বোধ করছি না। এই অচেনা মেয়ের কী এমন প্রয়োজন আমার কাছে কে জানে। 

‘আপনার নাম কি রাসেল?’

‘আমার নাম রাসেল না। ডাসেল। “ড” দিয়ে।’

‘অদ্ভুত নাম।’

‘হুম।’

‘আমার নাম অনন্যা। ডাকনাম অনু।’

‘আমি সেই ডাসেলই।’

নামটা শুনে ঠিকমতো তাকালাম। মেয়েটার কণ্ঠস্বর সুমনা হকের মতো কি না জানি না। কিন্তু বেশ মিষ্টি। 

মেয়ে দেখতে কেমন? আপনারা নিশ্চয়ই এই প্রশ্নের উত্তর চাচ্ছেন? 

মেয়ে দেখতে বেশ। বেশ মানে বেশ ভালো। লম্বা চুল। বড় বড় চোখ। হাসলে গালে টোল পড়ে। প্রীতি জিনতা ধরনের টোল। 

তবে সে নীল শাড়ি পরে আসেনি। এসেছে সালোয়ার-কামিজ পরে। এত দিন পর সেই সালোয়ার-কামিজের রং আর মনে নেই। 

‘আপনার বন্ধু তো বেশ খুশি মনে হচ্ছে?’ অনন্যা বলল। 

‘চা খাবেন? এই দুলাল চা দে। লেবু বেশি দিয়ে তিতা করবি না।’ দুলাল হাসিমুখে চা দিল। লেবুর এক টুকরা ভাসিয়ে দিল চায়ে। তবে বেশ সাবধানে। অন্য সময় হলে কচলে দিত। খুব বাজে লাগে দেখতে। চায়ের কাপ হাতে অনন্যা দাঁড়িয়ে রইল।

‘আমি আর মিনিট দশেক দেখব,’ চায়ে চুমুক দিতে দিতে অনন্যা বলল। 

‘কী দেখবেন?’

‘আপনার বন্ধু ধরতে পারে কি না।’

‘কী ধরতে পারে কি না?’

‘যে মেয়ের সঙ্গে কথা বলছে, ও অনন্যা না।’

‘ও আসলে কে?’

‘আমার ক্লাসমেট, বন্ধু। নাসরিন।’

‘আচ্ছা। কিন্তু আমার বন্ধু তো এটা ধরতে পারবে না।’

‘পারবে না কেন?’

‘ও বারবার ভাববে কণ্ঠস্বর মেলে না কেন? কথাবার্তার ধরনে মেলে না কেন? কিন্তু নাসরিনকে ওর এক দেখাতেই পছন্দ হয়ে গেছে। কাজেই ও বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেবে না। অন্তত আজকে তো নয়ই।’

‘আজকে নয় কেন?’

‘আজকে ওর মাথা আউলা হয়ে আছে।’

‘তাহলে আমার কী করা উচিত?’

বলে রাখা ভালো, এর আগে আমি বায়ান্নবার প্রেমে পড়েছি। তিপ্পান্নবার পড়লে কি খুব অসুবিধা হবে? যাহা বায়ান্ন, তাহাই তো তিপ্পান্ন? তাই না?

‘আপনার কিছু করা উচিত না। ওরা একটু গল্পসল্প করুক। আমরাও কোথাও ঘুরে আসি।’

‘ঘুরে আসব?’

‘বেশি দূরে যাব না। লালবাগের কেল্লায় যাওয়া যায় কিংবা আহসান মঞ্জিলে?’

‘এগুলো তো অনেক দূরে। আমি এত দূরে যাব না। বড়জোর কার্জন হলে যেতে পারি।’

কলাভবনের ছেলেরা কার্জন হলে যায় না। আমি সম্ভবত একবার গিয়েছিলাম। ভর্তি হওয়ার পরপর। 

‘শুকনা মরিচের ভর্তা পছন্দ করেন? খেয়েছেন কখনো?’

জিজ্ঞেস করলাম। 

‘না, কেমন খেতে?’

‘চলুন।’

অচেনা একটা মেয়েকে হুট করে একই রিকশায় বসতে বলা যায় না। কাজেই আমি আর অনু হাঁটতে থাকলাম। (বাই দ্য ওয়ে, মনে মনে ওকে এর মধ্যেই অনু বলে ডাকতে শুরু করেছি।)  হাঁটতে হাঁটতে টিএসসি চত্বর পার হয়ে পরমাণু শক্তি কমিশনের ক্যানটিনের দিকে এগিয়ে গেলাম। এখানকার মুরগির মাংস আর শুকনা মরিচের ভর্তা দুর্দান্ত। কাঁচা পেঁয়াজ, শর্ষের তেল আর শুকনা মরিচ। নতুন কারও সঙ্গে দেখা হলেই আমি এখানে এনে খাওয়াই। দামও কম।

সেই একসঙ্গে প্রথমবার খাওয়ার পর থেকে সপ্তাহে দুদিন আমরা এখানে দুপুরে খাওয়াদাওয়া করতাম। শুরুর দিকে বিল আমি দিলেও পরের দিকে বিলগুলো অনুই দিত। 

আস্তে আস্তে আমি আর অনু পরস্পরকে জানলাম। আমি জানলাম অনু খুব ভালো মেয়ে। পড়াশোনায় ভালো। অনার্সে ওর খুব ভালো রেজাল্ট। বিদেশে পড়তে যাওয়ার খুব ইচ্ছা। ওর বাবা অনুমতি দিলেই হবে। 

অনু জানল, আমি পড়াশোনায় ভালো না। জীবনে কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। নেশা করি যখন-তখন। চাকরিবাকরি করার কোনো আগ্রহ বা ইচ্ছা নেই। এসব জেনেও কেন জানি ও আমার সঙ্গে লেগে রইল। দিনের পর দিন। বছরের পর বছর।  

দেখতে দেখতে দুই হাজার এক, দুই, তিন এবং চার সাল পার হয়ে গেল। পড়াশোনা শেষ হলো। শুরু হলো ঘ্যানঘ্যানানি। সেই আদি-অকৃত্রিম বাঙালি পরিবারের বেকার ছেলের প্রথাগত সমস্যা। প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, অথচ প্রেমিক চাকরিটা জোগাড় করতে পারছে না। প্রাণান্তকর চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না। অথচ একটা চাকরি হলেই হয়ে যায়।

আমাদের ক্ষেত্রে অনুর ঘ্যানঘ্যানানি সত্ত্বেও আমি চেষ্টাটাই করলাম না। আমার কেন জানি মনে হয়েছিল, আমাকে নিয়ে মহাকালের বড় কোনো পরিকল্পনা আছে। বিয়ে থা করে বসলে সেই পরিকল্পনা সব ধ্বংস হয়ে যাবে। কাজেই একসময় ক্লান্ত, শ্রান্ত হয়ে রণে ভঙ্গ দিল অনু। বলা যায় আমিই দিতে বাধ্য করলাম। 

অনু চলে গেল। অনেক দূরে। 

তারপর দেখতে দেখতে দুই হাজার বাইশ, তেইশ, চব্বিশ সালও পার হয়ে গেল। 

আমি পড়াশোনা শেষ করে চাকরিবাকরি করিনি। ব্যবসা-বাণিজ্যও করিনি। আমি কিছুই করিনি। দেশের এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াই। মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় না মাঝেমধ্যে। পুরোনো বন্ধুরা তাড়িয়ে দেয়। কোনো কিছুতেই গুরুত্ব না দেওয়ার যে বাতিক, তা এখনো আমাকে ছেড়ে যায়নি। কাজেই পৃথিবীর কোনো কিছু আমাকেও গুরুত্ব দেয়নি।

দেখতে দেখতে দুই হাজার পঁচিশ চলে এল। 

সন্ধ্যার অন্ধকারে কলাভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কেউ একজন পেছন থেকে রিনরিনে কণ্ঠে বলল, ‘এই যে.

..’

আমি তাকালাম। দেখলাম কেউ নেই। 

‘এই যে...’

আবার তাকালাম। এবার ডান দিকে। এখানে এক পাশে বেশ কিছু গাছের আড়াল আছে। মনে হলো সেই আড়ালে কেউ লুকিয়ে আছে। বারবার উঁকি দিচ্ছে। দ্রুত গেলাম সেদিকে। কিন্তু কেউ নেই। 

আমার কোনো মুঠোফোন নেই। কারও কোনো নম্বর আমার কাছে নেই। শুধু অনুর নম্বরটা আমার মুখস্থ। গ্রামীণফোনের একটা নম্বর। জিরো ওয়ান সেভেন ওয়ান ওয়ান জিরো, সিক্স ওয়ান জিরো... 

এক তরুণ খুব ঢিলেঢালা ভঙ্গিতে হাঁটছে পাশ দিয়ে। ওকে থামালাম। বললাম অনুর নম্বরটা। এই নম্বরে যেন একটা কল করে। ছেলেটা বলল, এই নম্বর এখন আর চালু নেই। এগুলো অনেক পুরোনো নম্বর। আরও প্রায় ২৫ বছর আগের। তখন ৯ ডিজিটের নম্বর হতো। এখন হয় না। 

অনুর কোনো ঠিকানা আমার কাছে নেই। মিরপুরে যেখানে ওরা থাকত, সেটা ছিল ভাড়া বাসা। সেই বাসার নিচে অনেক কাল দাঁড়িয়ে থেকেছি। অনুকে দেখার আশায় নয়। এমনিই। কোনো কাজ নেই বলে। সেই বাসায় ওরা অনেক কাল ধরেই থাকে না। অনু সম্ভবত আমেরিকা বা কানাডায় চলে গেছে। কিংবা অস্ট্রেলিয়ায়। কিংবা আফ্রিকায় কিংবা মঙ্গল গ্রহে...হু নোজ...

পৃথিবীটা এত বড় যে চাইলেই আমি হুট করে ওসব দেশে যেতে পারি না। আমার তো পাসপোর্টই নেই। 

আমি লেখক নই, কবি নই, চিত্রকর নই, গায়ক নই, কিছুই নই। অথচ কী অদ্ভুতভাবেই না জীবন কাটিয়ে দিলাম। 

সমস্যা হচ্ছে জীবনটা এতই ছোট যে মাত্র কুড়ি বছরেই সব ফুরিয়ে যায়। এখন আমার ৪৫ বছর বয়স। পৃথিবীর সবকিছু থেকে গত কুড়ি বছর বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে, এই কুড়ি বছরেই আমি প্রাগৈতিহাসিক এক প্রাণী হয়ে গেছি। অচল এক প্রাণী।

কলাভবন থেকে বেরিয়ে ফুলার রোড ধরে হাঁটছি। এই পথ আমার খুব প্রিয়। একটা সিগারেট ধরাতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু পকেটে পয়সা নেই। 

‘এই তুই ডাসেল না?’

দেখলাম বড়সড় কালো একটা গাড়ি থেমেছে রাস্তার পাশে। দরজা খুলে স্বাস্থ্যবান, ফরসা যে লোকটা বের হয়েছে, চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু চিনতে পারছি না। 

‘হু।’

‘আমি রন্টু। তোর বন্ধু রন্টু।’

বলে লোকটা আমাকে জড়িয়ে ধরল। বুঝতে পারছি ও কাঁদছে। কান্নার কী হলো, সেটাই বুঝলাম না। তবে রন্টুকে চিনতে পেরেছি এখন। স্বাস্থ্যটা ভালো হয়েছে। বেশি ভালো হয়েছে আরকি। গায়ের রংটাও খুলে গেছে। 

‘চল আমার সঙ্গে।’

‘কই যাব?’

‘বাসায় যাবি। আর কোথায়?’

‘তুই কি নাসরিনকে বিয়ে করছিলি?’

‘হ, দোস্ত।’

নাসরিনের সঙ্গে ওর প্রেমটা হওয়ার কথা নয়। একজনের প্রক্সি দিতে গিয়ে প্রেম হয়ে যাওয়াটা অনিয়মিত ঘটনা নয়। মাঝেমধ্যেই ঘটে। তবে নাসরিন ওকে বেশ ভুগিয়েছে, এটা আমি নিশ্চিত।

গাড়িতে উঠলাম ওর জোরাজুরিতে। গাড়ির ভেতরটা শীতল। কালো কাচের কারণে বাইরের আলো ভেতরে ঢোকে না। একটা মুঠোফোন বের করে বেশ ব্যস্ত ভঙ্গিতে কথা বলছে রন্টু। আমি গাড়িতে বাজতে থাকা ‘গাম কা খাজানা তেরা ভি হ্যায়...’ শুনতে শুনতে মাথা দোলাচ্ছি। 

‘নে কথা বল।’

রন্টুর মুঠোফোনটা বেশ বড়। উজ্জ্বল ঝকঝকে একটা মুখ স্ক্রিনে ভাসছে। 

আমি মুখটা চিনি। অনুর মুখ। ফরসা, ধবধবে দেখাচ্ছে। মাথার চুল আর গালের টোলটাও আছে। 

‘বাসায় আসবা কখন?’

‘যদি না আসি।’

‘ডাসেল, মেজাজ খুব খারাপ কিন্তু। তাড়াতাড়ি আসো। বাসায় আসার সময় সিদ্দিকের দোকানে গিয়ে কল দিবা। কিছু জিনিস আনা লাগবে।’

‘কী জিনিস?’

‘সয়াবিন তেল শেষ। সঙ্গে আরও অনেক কিছু। ঠিক আছে?’

‘ওকে।’

‘তোমার মেয়ের জন্য আইসক্রিম আনা লাগবে। বেইলি রোডে একটা মুভিনপিক আছে। ওটা অবশ্য তার পছন্দ না। কিন্তু নিয়া আসবা।’

‘ওকে।’

‘তোমার জন্য শুকনা ঝাল ভর্তা করছি। সঙ্গে ডিমভর্তা। আজকে শুধু ভর্তাভাত।’

‘ওকে।’

‘রন্টুকে বলো তোমাকে বেইলি রোডে নামায়া দিতে।’

‘ওকে।’

ফোন রেখে দিল রন্টু। হাসল আমার দিকে তাকিয়ে। ‘ইচ্ছা কইরা মুঠোফোন ফালায়া আসিস। প্রতি মাসে তোর এই ঝামেলা করাই লাগে। তাই না?’

‘দোস্ত, আমি তো সংসার করতে চাই নাই।’

‘সংসার কেউই করতে চায় না। কিন্তু সবাই করে।’

‘এবার আমাকে নামায়ে দে।’ গাড়িতে ‘গম কা খাজানা’ শেষ হতে হতেই বেইলি রোডে চলে এলাম। এখন বাসায় যাওয়ার পালা। 

যাওয়ার আগে বলে যাচ্ছি, এই গল্পের মাঝখানে অনুর চলে যাওয়া, চাকরি-বেকারত্ব, আরও যা যা লিখেছি, সবই বানানো। 

আমি আর অনু, দুজনেই পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে ঢুকে পড়ি। তারপর বিয়ে করি। দুই মেয়ে নিয়ে আমাদের সংসার। সব ভালো চলছে। মাঝেমধ্যে মাথা আউলাঝাউলা হয়ে যায়। তখন উল্টাপাল্টা ভাবি, মুঠোফোন রেখে সব ছেড়ে পালিয়ে যাই। তবে বেশিক্ষণ পালিয়ে থাকতে পারি না। অনু বন্ধুবান্ধব কাউকে না কাউকে দিয়ে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। এবার যেমন রন্টুকে কাজে লাগাল। প্রথমে যে লিখেছিলাম, ঠিক সময়ে বন্ধু কাজে লাগে না। কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়।

মাঝখানে হাবিজাবি লিখে আপনাদের ধোঁকা দেওয়ার একটা চেষ্টা করেছি। চেষ্টা সফল হয়েছে সম্ভবত।

যাই, মেয়েটা আইসক্রিম খাবে বলে বসে আছে নিশ্চয়ই। শুভ রাত্রি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ক ছ রন ট র র বন ধ রন ট ক ই রন ট হওয় র অনন য সমস য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।

খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।

আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।

কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।

আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।

আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির