Prothomalo:
2025-07-12@02:42:03 GMT

মহান আল্লাহর হাসি

Published: 11th, July 2025 GMT

আল্লাহ তাআলা খুশি হন, হাসেন। অনেক হাদিসে এর উদ্ধৃতি রয়েছে। এই খুশি হওয়া ও হাসা আল্লাহর অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। যেমন তিনি তওবাকারীর প্রতি খুশি হন এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে গিয়ে নিহত ব্যক্তি ও হত্যাকারীর কর্মকাণ্ড দেখে হাসেন।

তবে আল্লাহ বান্দার মতো হাসেন, তা নয়; এমনটা কখনো বিশ্বাসও করা যাবে না। কারণ, তাঁর সঙ্গে কোনো ব্যক্তি, সৃষ্টি বা বস্তুর সাদৃশ্য হয় না। তাই তাঁর হাসি তাঁর শানে যেভাবে শোভনীয়, তিনি সেভাবেই হাসেন।

এ ব্যাপারে কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘কোনো কিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়।’ (সুরা শুআরা, আয়াত: ১১)

আল্লাহর হাসির উদ্দেশ্য হলো তাঁর সন্তুষ্টি। মর্ম হবে, ওই ব্যক্তির ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন, তার কল্যাণের ব্যবস্থা করবেন।মোল্লা আলি কারি (রহ.

), মিরকাতুল মাফাতিহ

মোল্লা আলি কারি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহর হাসির উদ্দেশ্য হলো তাঁর সন্তুষ্টি। তাই যেসব হাদিসে তাঁর হাসির কথা রয়েছে, সেসবের মর্ম হবে ওই ব্যক্তির ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন, তার কল্যাণের ব্যবস্থা করবেন।’ (মিরকাতুল মাফাতিহ: ৮/৩৫৫৯, ৯/৪০৩০)

আরও পড়ুনসাহাবির মেহমানদারিতে আল্লাহ্‌র হাসি০৬ জুন ২০২৪

আবু রাজিন (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর বান্দারা যখন (সামান্য বিপদে) হতাশ হয় এবং (বিপদ কেটে ওঠার জন্য) আল্লাহ ছাড়া অপরের নৈকট্য পেতে চায়, তখন আমাদের রব তার এ আচরণে হাসেন।

বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, ‘আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ কি হাসেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ আমি বললাম, ‘আমরা কখনো পুণ্যের কাজ ত্যাগ করব না, যাতে আমাদের প্রতিপালক হাসেন।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ২/২৫৮)

রাসুল (সা.) বলেন, তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ ভালোবাসেন। তাদের প্রতি (সন্তুষ্ট হয়ে) হাসেন এবং তাদের সুসংবাদ প্রদান করেন। প্রথম ব্যক্তি, যখন যুদ্ধের জন্য সেনাদল বের হয়, তখন সে তাদের সঙ্গে থেকে নিজের জান বাজি রেখে আল্লাহর পথে লড়াই করে। এরপর হয় সে নিহত হয় অথবা আল্লাহ তাকে বিজয় দান করেন এবং তাকে বাঁচিয়ে দেন। আল্লাহ তখন ফেরেশতাদের বলেন, ‘দেখো, আমার এই বান্দা কীভাবে নিজের জান বাজি রেখে আমার পথে ধৈর্যধারণ করেছে?’

দ্বিতীয় ব্যক্তি, যে তার ঘরে সুন্দরী স্ত্রী ও নরম তুলতুলে বিছানা ছেড়ে রাতে উঠে নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘সে নিজের মনোবাসনা দমন করে আমাকে স্মরণ করছে অথচ চাইলে সে শুয়ে থাকতে পারত।’

তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছে সে, যে সফরে থাকা অবস্থায় শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে—আরামে থাকুক অথবা কষ্টে, নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। অথচ তার সফরসঙ্গীরা রাতে জাগার পরও শুয়ে পড়েছে।

আল্লাহ তাআলা এই তিন ব্যক্তির প্রতিই সন্তুষ্ট হন এবং তাদের এসব আমল দেখে হাসেন। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ২/২৫৪)

সবার শেষে এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। সে হাঁটবে আবার উপুড় হয়ে পড়ে যাবে। জাহান্নামের আগুন তাকে ঝাপটা দেবে। অগ্নিসীমা অতিক্রম করার পর সে তার দিকে ফিরে দেখবে এবং বলবে, সে সত্তা কত মহিমাময়, যিনি আমাকে তোমার থেকে মুক্তি দিয়েছেন।আরও পড়ুননবীজি (সা.)-এর হাসি২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাসুল (সা.) বলেন, ‘সবার শেষে এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। সে হাঁটবে আবার উপুড় হয়ে পড়ে যাবে। জাহান্নামের আগুন তাকে ঝাপটা দেবে। অগ্নিসীমা অতিক্রম করার পর সে তার দিকে ফিরে দেখবে এবং বলবে, সে সত্তা কত মহিমাময়, যিনি আমাকে তোমার থেকে মুক্তি দিয়েছেন।

দীর্ঘ হাদিসে এই ব্যক্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাসুল (সা.) হাসলেন। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আপনি কেন হাসছেন?’ রাসুল (সা.) বললেন, এ কারণে যে লোকটি যখন এ কথা বলছিল—‘আপনি আমার সঙ্গে কৌতুক করছেন, আপনি তো সারা জাহানের প্রতিপালক?’ তার এ কথা শুনে আল্লাহ হেসেছেন বলে আমিও হাসলাম। (সহিহ মুসলিম: ১৮৭)

রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ এমন দুই ব্যক্তির জন্য হাসবেন, যাদের একজন অপরজনকে হত্যা করবে; অথচ তাদের উভয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, এটা কীভাবে সম্ভব?’ তিনি বললেন, তাদের একজন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হয়। আল্লাহ অপরজনের প্রতিও সদয় হবেন এবং তাকেও হিদায়াত দান করবেন। তারপর সেও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে এবং শহীদ হয়ে যাবে। (সহিহ বুখারি: ২,৮২৬; সহিহ মুসলিম: ৫,০০০)

আরও পড়ুনভালো প্রতিবেশী হওয়ার ১০ উপায়০৫ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত বলল ন করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

এই অপচয় রোধে প্রয়োজন টেকসই পদক্ষেপ

প্রতিবছরের মতো এবার যে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন ছিল না, এটা ভালো দৃষ্টান্ত। অতীতে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে আনুষ্ঠানিকতার নামে সরকারের মাহাত্ম্য প্রচার করা হতো। 

তবে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খুবই হতাশাজনক।  বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১০ জন পরীক্ষার্থী। পাস করেছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৫৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৪৬ জন। পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪; যা গতবার ছিল ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড যুক্ত করলে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ৬ লাখের বেশি।  

এই যে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলো, এর জন্য তাদের দায়ী করা যায় না। দায়ী হলেন শিক্ষার অভিভাবক বা রক্ষকেরা। বাংলাদেশে যখন যেই সরকার আসে, তাদের মতো করে একটি শিক্ষানীতি বা কমিশন করে। কিন্তু সেই শিক্ষানীতি বা কমিশন শিক্ষার মানোন্নয়নে আদৌ ভূমিকা রাখছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হয় না। 

এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কম হওয়ার জন্য শিক্ষার অভিভাবকেরা যেসব কারণ চিহ্নিত করেছেন, তাকে ‘ঐচ্ছিক’ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। মূল কারণ তাঁরা এড়িয়ে গেছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘আমাদের কোনো টার্গেট ছিল না যে পাসের হার এত করব, বাড়াব, নাকি কমাব। আমাদের মিশন ছিল পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা।’ 

সুন্দরভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষা বোর্ড তথা সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। এতে কৃতিত্ব নেওয়ার কিছু নেই। মূল কথা হলো নীতিনির্ধারকেরা শিক্ষার সমস্যাটি কীভাবে দেখেছেন এবং তার প্রতিকারে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন। করোনার কারণে দুই বছর ঠিকমতো বিদ্যালয়ে পাঠদান হয়নি, এটা সত্য; কিন্তু তার আগে কিংবা পরেও পাঠদান সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর মান যাচাই করার কথা থাকলেও সেটা হয় না। এ কারণেই এসএসসিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অকার্যকর হয়।

আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, শ্রেণিকক্ষের চেয়ে কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের বেশি উৎসাহিত করা হয়। আগে কোচিং সেন্টার ছিল শহরাঞ্চলে, এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রসারিত হয়েছে। কোচিং মানে শিক্ষা নয়, পরীক্ষায় কী প্রশ্ন আসবে, কী উত্তর  হবে; সেটা শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দেওয়া। বহু বছরের কু–অভ্যাসে আমরা শিক্ষাকে এই স্তরে নিয়ে এসেছি। 

প্রতিটি দেশের একটি শিক্ষা–দর্শন থাকে, যার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ ও ভবিষ্যতে তাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের শিক্ষার নীতিনির্ধারকেরা এর ওপর কখনো জোর দেননি।  অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অনেকের পড়াশোনা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে মেয়েশিক্ষার্থীদের। এটা কেবল পরিবার বা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি নয়, মানবসম্পদেরও অপচয়। 

শিক্ষা খাতের প্রতি পূর্বাপর সব সরকারই উদাসীনতা দেখিয়ে আসছে। এমনকি গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারও শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। শিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বস্তরে মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, সময়মতো পাঠ্যবইসহ শিক্ষার সব উপকরণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর মেধাবীরা তখনই এই পেশায় আসবেন, যখন সম্মানজনক বেতন–ভাতা পাবেন। 

এসএসসি পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়া ঠেকাতে সরকারকে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ঠকমতো পাঠদান ও মান যাচাই হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি জোরদার করার বিকল্প নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ