কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় অসহায় ও দরিদ্রদের জন্য চাল বিতরণ কর্মসূচির তালিকা নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়ভিটা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল, বড়ভিটা গ্রামের হাফিজুর রহমান, মুসা মিয়া, শাহারুল, মোকছেদুল হক ও চন্দ্রখানা গ্রামের বাবু মিয়া, আবদুল জলিল ও জিয়াউর রহমান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দরিদ্রদের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণের লক্ষ্যে উপকারভোগীদের তালিকার কাজ শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ। গতকাল দুপুরে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজির হোসেনের অনুসারী ও বড়ভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাদল সরদারের নেতৃত্ব কয়েক নেতা-কর্মী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যদের কাছে গিয়ে উপকারভোগীদের নামের তালিকা দেখতে চান। সেই সঙ্গে নিজেদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের জন্য মোট এক হাজারটি স্লিপ চান। এ সময় তালিকা ও স্লিপ না পেয়ে ইউপি সচিব ও সদ্যদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দেন তাঁরা।

ইউনিয়ন পরিষদটির সচিব বাবুল হোসেন বলেন, ‘গতকাল দুপুরের পর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাদল সরদার ১৫-২০ জন লোক নিয়ে এসে আমাকে অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। আমি বেরিয়ে এলে তাঁরা কক্ষে ও ইউনিয়ন পরিষদের গেটে তালা লাগিয়ে দেন। পরে আমি ইউএনওকে বিষয়টি জানিয়ে বাসায় চলে এসেছি।’

এ ঘটনায় উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। অনেকেই বিষয়টির নিন্দা ও সমালোচনা করেছেন। পরে বিষয়টির মীমাংসা করতে গতকাল সন্ধ্যায় বড়ভিটা বাজারে যান নজির হোসেনের ছেলে আরিফুল ইসলাম। সেখানে প্রতিপক্ষ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নানের সমর্থকদের সঙ্গে আরিফুল ও তাঁর সমর্থকদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের ঘটনাটি নিয়ে কথা-কাটাকাটি ও সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত আটজন আহত হন।

নজির হোসেন বলেন, ‘বাদল সরদার স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মীকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চাল বিতরণের তালিকা দাবি করেন। তালিকা না পেয়ে ইউপি সদস্য ও সচিবকে সেখান থেকে বের করে দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবদুল মান্নানের লোকজন আমার ছেলে ও সমর্থকদের ওপর হামলা চালান। আমার পাঁচজন সমর্থক আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।’

উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান হামলার ঘটনাটিকে দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, ‘দরিদ্রদের জন্য বিতরণ কর্মসূচির চালের তালিকাকে কেন্দ্র করে দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। যার যার স্বার্থ ছিল, তারাই আক্রমণের সঙ্গে জড়িয়েছে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এখন উপজেলা কমিটি নেই। তাই আমি রাতেই জেলার নেতাদের বিষয়টি জানিয়েছি।’

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ জানান, এ বিষয়ে কোনো পক্ষই অভিযোগ দেয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমর থকদ র ব এনপ র স চ ল ব তরণ র জন য উপজ ল আবদ ল গতক ল ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাতে ‘টর্চলাইট জ্বালিয়ে’ দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ইউএনও-ওসিসহ আহত ৩০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পূর্ববিরোধের জের ধরে দুটি গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ইউএনও, ওসিসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার সদর ইউনিয়নের চানমনিপাড়া ও মোঘলটুলা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। এ সময় বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশাররফ হোসাইন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হাসান আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে মুঠোফোনের চার্জার কেনাবেচা নিয়ে চানমনিপাড়া ও মোঘলটুলা গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল। গতকাল সন্ধ্যায় চানমনিপাড়া গ্রামের প্রয়াত হেলাল মিয়ার স্ত্রী হালিমা বেগম (৪২) ও তাঁর ছেলে সাইফুল ইসলাম (২০) গ্রামের অদূরে একটি চালকলে চাল ভাঙাতে যান। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মোঘলটুলা গ্রামের তৌহিদ মিয়া (২০) হালিমা বেগমকে কটূক্তি করেন। এর প্রতিবাদ করেন তাঁর ছেলে সাইফুল ইসলাম। এ নিয়ে সাইফুল ও তৌহিদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

এর জের ধরে গতকাল রাত আটটার দিকে উভয় পক্ষের লোকজন দা, বল্লম, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে দুই গ্রামের মাঝখানের সড়কে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় অন্ধকারে অনেকের হাতে ছিল টর্চলাইট।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ইউএনও মোশাররফ হোসাইন, ওসি রফিকুল হাসানসহ পুলিশের একটি দল। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইউএনও এবং রাত ১০টার দিকে ওসি ইটের আঘাতে আহত হন। ইউএনও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি ডান হাঁটুর নিচে আঘাত পেয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন ওসি রফিকুল হাসান। তাঁর ডান চোখের ওপরে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) তপন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, সরাইল থানার ওসি রফিকুল হাসান ঘটনাস্থলে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।

ইউএনও মোশাররফ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সরাইলে সংঘর্ষে একজন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনা আমি মেনে নিতে পারিনি। সংঘর্ষের ঘটনা শুনে না গিয়ে পারলাম না। কথায় কথায় সংঘর্ষের সংস্কৃতি থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ