ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বাগবাড়ি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে, এ ঘটনায় এখনো কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

সোমবার সন্ধ্যার পর ইফতারের পরপরই এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের মতে, এ সংঘর্ষের পেছনে পূর্বের বিরোধ ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ভূমিকা রেখেছে।

জানা যায়, সালথার সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক নেতা আছাদ মাতুববরের সমর্থক আফতাব মৃধা এবং ফরিদপুর পৌর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর মোল্লার সমর্থক তুরাপ মাতুবরের মধ্যে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় সালথা বাজারে এক দেনা-পাওনা সংক্রান্ত বিরোধ থেকে। ইফতারের আগে ওলামা লীগ নেতা হারুন মাতুব্বর ও বিএনপি সমর্থক আফতাব মৃধার মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। হারুন মাতুব্বর, যিনি বর্তমানে জামায়াতের সমর্থক হিসেবে পরিচিত, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আফতাব মৃধাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক চলাকালে হারুন মাতুব্বর আফতাব মৃধাকে থাপ্পড় মারেন। পরে স্থানীয়রা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন।

ইফতারের পর আফতাব মৃধা বিএনপি সমর্থক মিজানের দোকানের সামনে গেলে সেখানে তুরাপ মাতুবর উপস্থিত ছিলেন। তিনি দোকানের সবাইকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন এবং হুমকি দেন যে, না গেলে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করাবেন। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হারুন মাতুব্বর ঢাল-কাতরা নিয়ে আফতাব মৃধাকে ধাওয়া করেন। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হলে উভয়পক্ষ একে অপরের ওপর হামলা চালায়। এ সময় জাহাঙ্গীর মোল্লার কয়েকজন সমর্থকের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জামায়াত নেতা জাহাঙ্গীর মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের পক্ষের কিছু লোককে আছাদ মাতুববরের দলীয় সভায় ডাকা হয়েছিল, কিন্তু তারা সেখানে যায়নি। সেই ক্ষোভ থেকেই তার সমর্থকরা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে এবং ১০টি বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে।

অন্যদিকে, বিএনপি নেতা আছাদ মাতুববর বলেন, আসলে জাহাঙ্গীর মোল্লা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। আমি সংঘর্ষের পক্ষে নই। ঘটনার সময় আমি ছাত্রদলের ইফতার মাহফিলে ছিলাম। খবর পেয়ে পুলিশকে জানাই।

সালথা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.

আতাউর রহমান বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকা শান্ত রয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ হ র ন ম ত ব বর আফত ব ম ধ স ঘর ষ র ইফত র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা

কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।

আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।

তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।

বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।

ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’

বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’

সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’

জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’

আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা