মাহে রমজান উপলক্ষে দু¯’ ও অসহায় মানুষদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। রোববার (১৬ মার্চ) বিকালে ফতুল্লা থানাধীন শিবুমার্কেট পূর্ব লামাপাড়া এলাকায় এ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ঢাকা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মোল্লা ও প্রধান বক্তা হিসেবে বিশিষ্ট সমাজ সেবক অ্যাডভোকেট সুশান্ত চক্রবর্তী উপ¯ি’ত ছিলেন।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের কাজ হলো যারা অসহায়, নির্যাতিত, নিপীড়িত, যারা আইনের সেবা পা”েছন না। তাদেরকে আইনগত সহযোগীতা প্রধান এবং সর্বপরি আপনাদের পাশে থাকাই আমাদের কাজ।

তিনি বলেন, পৃথিবীতে যত ধর্ম আছে সকল ধর্মেই আছে মানুষের কল্যানে কাজ করা। এ রকম কোন ধর্ম আছে যে, ‘মানুষের কল্যানে কাজ করবে না’ বলে। না, নেই। সকল ধর্মেই আছে মানুষের কল্যানে কাজ করা, মানুষের সেবা করা। এটাই সবচেয়ে বড় ধর্ম। আমরা যারা মানবাধিকার কমিশনে আছি আমাদের কাজই হলো আপনাদের কল্যানে কাজ করা, আপনাদের সেবা করা।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, আমরা বাংলাদেশী নাগরিক। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী অন্ন, বস্ত্র, বাস¯’ান, শিক্ষা, চিকিৎসা এই যে অধিকারগুলো এগুলো রাস্ট্রেরই নির্বাহ করার কথা ছিলো। কিš‘ আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের রাস্ট্রীয় অব¯’ানটা সেই পর্যায়ে আসেনি। আমার একটা অসহায় মা ঘরে বসে একবস্তা চাল, ডাল, চিনি, লবন পাবেন সেই নিশ্চয়তা রাস্ট্র এখনও করতে পারেনি। কারণ, দেশ স্বাধীনের পর থেকে একের পর এক শাসন ব্যব¯’া নিয়ে এবং বিভিন্ন কারণে বন্যা খরা এবং কিছুটা দুর্নীতির কারনেও আমাদের অর্থনৈতিক অব¯’াটা আমরা সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি নি। আমরা আশা রাখবো, আগামীতে একটি সুষ্ঠু-অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে সেই সরকার যেন আপামর গরিব জনগণের দিকে এবং খেটে খাওয়া মানুষের দিকে যেন নজর রাখে, সেই আশাবাদ আমরা ব্যক্ত করতেই পারি। কেননা, এই আশাটা এই দাবিটা আমাদের সংবিধান স্বীকৃত।

বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট সমাজ সেবক শ্রী ঋষিকেশ মন্ডল মিঠু বলেন, আমি রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের জড়িত। আসলে মানুষের সেবা করলে মনে অনেক বেশি আনন্দ লাগে। যখন দেখি আমার সামান্য একটা উপহার পেয়ে ওই অসহায় মানুষগুলো মুখে হাসি ফোটে উঠেছে, তখন কি যে ভালো লাগে তা ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারবো না। আমি মনে করি, সমাজের পিছিয়ে পড়া কিংবা অসহায় মানুষদের পাশে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানো উচিৎ। যে যার পেশা থেকে মানব সেবা চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। তাহলেই দেশটা আরও সুন্দর হয়ে উঠবে। ঈদ-উৎসবে সকলের মুখে হাসি থাকবে, হাসি-খুশিতে ভরে যাবে দেশ। এভাবে একটি সুখী রাস্ট্রতে আমরা পরিনত হতে পারবো।

এ ছাড়া সঞ্চালক নয়ন সাহা বলেন, আজ আমরা যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছি। আসলে এটা কোন ত্রাণ বা সহযোগীতা নয়। এটা আমাদের উপহার। আসলে মানুষের নৈতিক দায়িত্ব হলো মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সেই জায়গাটি থেকেই মূলত আমাদের এ আয়োজন। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন আগামীতে যেন আরও বড় পরিসরে আপনাদের মাঝে এ খাদ্য সামগ্রী করতে পারি।

বক্তব্য শেষে প্রায় দেড় শতাধীক দু¯’ ও অসহায় মানুষদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেয়া হয়। এসব খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ছিলো চাউল, ডাল, আটা, তেল, লবন ইত্যাদি।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক মো: সেলিম প্রধানের সভাপতিত্বে এবং মো: সজিব ও মানিক দাসের সার্বিক তত্বাবধায়নে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপ¯ি’ত ছিলেন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ঢাকা উত্তরের নির্বাহী সভাপতি মির্জা শাহাদাত হোসেন, বিশিষ্ট সমাজ সেবক অ্যাডভোকেট রনজিত চন্দ্র দে, গোকুল রায় দুরন্ত, মো: জাহাঙ্গীর ও মুন্সীগঞ্জ জেলা মানবাধিকার কমিশনের সাধারণ সম্পাদক মো: নাসির উদ্দিন প্রমূখ।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ইফত র অসহ য় ম ন র কল য ন আপন দ র ক জ কর আম দ র ব তরণ

এছাড়াও পড়ুন:

নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

নিয়োগপত্র নেই। এ কারণে চাকরির নিশ্চয়তাও নেই। দেওয়া হয় না পরিচয়পত্র। নেই কর্ম ঘণ্টার হিসাব। তবে রয়েছে মজুরিবৈষম্য ও জীবনের ঝুঁকি। এ চিত্র খুলনার বরফকলে কর্মরত বরফ শ্রমিকদের।

অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত বরফকলের শ্রমিকেরা জানেন না মে দিবসের অর্থ। তারা শুধু এটুকু জানেন, কাজ থাকলে মজুরি পাবেন, অন্যথায় জুটবে না কিছু। খুলনার নতুন বাজার, রূপসা, শিপইয়ার্ড ও নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বরফ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে ঝুঁকি ও বৈষম্যের এই চিত্র।

সরেজমিনে জানা গেছে, লবণ পানি এবং অ্যামোনিয়া গ্যাসের সংমিশ্রণে বরফের প্রতিটি ক্যান তৈরি হয়। এ কাজে প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যুসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এছাড়াও অধিকাংশ সময় হাত-পা ভিজে ঠান্ডা থাকায় ক্ষত থেকে ইনফেকশন হয়। এর বাইরে বুকে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ভোগেন এখানকার শ্রমিকেরা। পাতলা বরফে অনেক সময় হাত-পা কেটে যায়। কিন্তু মালিক বা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জন্য কোন ধরনের অ্যাপ্রোন বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করেন না। তবে দুর্ঘটনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

আরো পড়ুন:

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মহান মে দিবস: শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় সংস্কারে জোর সরকারের

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর নতুন বাজার, নিউমার্কেট, শিপইয়ার্ড, রায়েরমহল এবং রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসা এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি বরফকল রয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাজার ও পূর্ব রূপসায় সর্বাধিক বরফকল রয়েছে। এসব কলে গড়ে দশ জন হিসেবে দেড় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন।

রূপসার নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত ‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করেন মোহাম্মদ রাসেল হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি হলেও পরিবার নিয়ে রূপসার জাবুসা এলাকায় বসবাস করেন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই বরফকলে কাজ করছেন তিনি। রাসেল জানান, তাদের মাসিক বেতন নেই। নেই নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র। মূলত উৎপাদনের উপর প্রতি পিস বরফের ক্যান অনুযায়ী ১২ টাকা হারে মজুরি পান। নামমাত্র এ মজুরিতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে সংসার ঠিকমতো চলে না।

‘‘তিন বছর আগে নির্ধারণ করা মজুরি এখনো চলছে। লোকসানের অজুহাতে মালিকপক্ষ মজুরি বাড়াতে চান না। তাদের মতো শ্রমিকদের কোন বেতন-বোনাস নেই। নো ওয়ার্ক, নো পে অর্থাৎ কাজ থাকলে মজুরি আছে কাজ না থাকলে নেই। মালিকদের এ সিদ্ধান্ত না মানলে চাকরিও থাকে না।’’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন রাসেল হোসেন।

একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মোঃ জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘গড়ে প্রতিমাসে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা মজুরি পাই। কিন্তু মাসিক খাবার খরচ প্রায় ৩ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া বাবদ ৩ হাজার টাকা চলে যায়।’’

তবে জাকির হোসেন ব্যাচেলর হওয়ায় কারখানার মধ্যেই থাকেন। বিয়ের পর এ কাজ করার ইচ্ছা নেই বলে জানান তিনি।

বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১-এ অপারেটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন মোঃ সেলিম শেখ। তার জন্ম নড়াইলের লক্ষ্মীপাশা হলেও কর্মসংস্থানের কারণে রুপসার বাগমারা গ্রামে বসবাস করছেন। তিনি জানান, বর্তমান বয়স ৮৪। ২০ বছর বয়স থেকেই বরফ কারখানার সঙ্গে জড়িত। প্রথমে হেলপার হিসেবে ২৫০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে অপারেটর হিসেবে মাসিক ১৫ হাজার টাকা পান। প্রতিদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে কাজ শুরু করতে হয়। তবে সবসময় উৎপাদন না থাকলেও ২৪ ঘণ্টা কারখানায় থাকতে হয়। ছুটি পান না।

‘অ্যামোনিয়া গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। তবে তিনি কখনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হননি বলে জানান তিনি।

‘মায়ের দোয়া আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজে’র শ্রমিক জাকারিয়া হাওলাদার বলেন, ‘‘চার বছর বরফকলে কাজ করছি। চাকরির ভবিষ্যৎ নেই। শ্রম দিতে পারলে মজুরি হয়, না হলে হয় না। নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দেন না মালিকপক্ষ। বেতন বাড়ানোর কথা বললে তারা আমলে নেন না।’’

একই এলাকার ‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করছেন মোঃ মুন্না গাজী ও মোঃ হাসান শেখ। তারা নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তারা দুজনেই মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন পান। এর বাইরে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই।

‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’র ম্যানেজার আশিকুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সুরক্ষায় উদাসীন। এখানে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার মাঝেমধ্যেই লিক হয়। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিষ্ঠানটিতে ৫৩২টি আইস উৎপাদনের ক্যানের প্লান্ট রয়েছে। তবে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ ক্যান বরফ উৎপাদন হয়। ছয়জন শ্রমিক কাজ করে বলে জানান তিনি।

‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ- ২'র ম্যানেজার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘বরফের মূল ক্রেতা চিংড়ি ও সাদা মাছের ব্যবসায়ীরা। এর বাইরে গ্রীষ্ম মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ ও দোকানে শরবত বিক্রেতারাও কারখানা থেকে বরফ কিনে নেন। গ্রীষ্ম মৌসুমের ৬ মাস চাহিদা থাকে এবং কিছুটা লাভের মুখ দেখা যায়। তবে শীত মৌসুমের ছয় মাস বরফের চাহিদা কম থাকে। তখন কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ও মজুরি দিয়ে লোকসান গুণতে হয়।’’

জামাল উদ্দিন স্বীকার করেন কারখানায় নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলেও তা এড়াতে কোন সরঞ্জাম নেই। তবে অপারেটরদের অ্যামোনিয়া গ্যাসের ঝুঁকি প্রতিরোধে মাক্স সরবরাহ করা হয়।

‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১'র মালিকপক্ষের প্রতিনিধি রিয়াদ-উল-জান্নাত সৈকত বলেন, ‘‘ব্যবসা খুব ভালো যাচ্ছে না। কখনো লাভ, কখনো লোকসান এভাবেই চলছে। গত বছর কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৯ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’’

তবে লাভ হলে শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিষয়ে শ্রমিকদের সংগঠন রূপসা বেড়িবাঁধ হ্যান্ডলিং শ্রমজীবী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রিপন শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি বরফকলের ৪০ জন শ্রমিক তাদের ইউনিয়নের সদস্য। বিগত দেড় বছর আগে মজুরির সমস্যা নিয়ে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে দুই একজন শ্রমিক অভিযোগ করলে ইউনিয়নের মাধ্যমে সেটির সমাধান করে দেন তারা। কিন্তু বর্তমানে অভিযোগ নিয়ে কেউ আসে না।’’

বরফকলের শ্রমিকদের নিয়ে তারা মে দিবসের কর্মসূচি পালন করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ