জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে পাঁচ শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। একই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাবেক তিন শিক্ষার্থীর সনদ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

সোমবার দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ৩০৪ ধারার (মৃত্যু ঘটানোর অভিপ্রায় নিয়ে করেনি) মামলা ৩০২ ধারায় (ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড) রূপান্তরিত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে সিন্ডিকেট সভায়। 

সভায় উপস্থিত সিন্ডিকেট সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘শামীম মোল্লার ঘটনায় যাদের শাস্তি প্রদান করা হয়েছিল তাদের মধ্যে যারা বর্তমান শিক্ষার্থী রয়েছেন, তাদের ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। জড়িতদের যাদের ছাত্রত্ব আগেই শেষ হয়েছিল, তাদের একাডেমিক সনদ ছয় মাসের জন্য স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তগুলো অভিযুক্তদের যে দিন থেকে সাময়িক বহিষ্কার (১৯ সেপ্টেম্বর) করা হয়েছিল, সেদিন থেকে গণনা করা হবে।’ সে হিসেবে ১৯ মার্চ তথা আগামীকাল বুধবার অভিযুক্তদের বহিষ্কারাদেশ ও সনদের স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হবে৷

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোল্লাকে একদল শিক্ষার্থী পিটুনি দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে আশুলিয়া থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। হস্তান্তরের প্রায় দুই ঘণ্টা পর শামীম মোল্লা মৃত্যুবরণ করেন বলে জানা যায়।

ওই দিন রাতেই বামপন্থী ও কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি করে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আটজন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার এবং মামলা দায়ের করে প্রশাসন। ঘটনা খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের পর গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে অভিযুক্তদের মধ্যে বর্তমান শিক্ষার্থীদের ছয় মাসের বহিষ্কার এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের ছয় মাসের জন্য একাডেমিক সনদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন এক সিন্ডিকেট সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শামীম মোল্লাকে শিক্ষার্থীদের দলবদ্ধ পিটুনির পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় শামীম মোল্লা হেঁটে হেঁটে গাড়িতে ওঠে। এর প্রায় দুই ঘণ্টা পর শামীম মোল্লার মৃত্যুর খবর জানাজানি হয়। ওই সময়টাতে পুলিশ হেফাজতে ছিল শামীম মোল্লা।’

যাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল

শামীম মোল্লার হত্যাকাণ্ডের দিন, তথা ১৮ সেপ্টেম্বর রাতেই আটজনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদলের নেতা মোহাম্মদ রাজন মিয়া ও রাজু আহমেদ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সোহাগ মিয়া। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা হামিদুল্লাহ সালমান, বায়োটেকনোলজি ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আহসান লাবিব, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুজ্জামান আতিক, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো.

মাহমুদুল হাসান রায়হান এবং ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া।

আরও পড়ুনজাহাঙ্গীরনগরে শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, একজনকে আটক২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প ট ম বর হয় ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই ডকুমেন্টরিতে ‘ফুটেজ’ না থাকায় জাবি ছাত্রদল নেতার হট্টগোল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য ২৪’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রচারিত ডকুমেন্টরিতে ফুটেজ না থাকায় এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে হট্টগোল করা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের (২০০৯-১০ সেশন) সাবেক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হলের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে এ হট্টগোল করেন তিনি।

আরো পড়ুন:

জুলাই শহীদ পরিবারদের সংবর্ধনা দিল জাবি

জুলাই শহীদদের স্মরণে জাবি ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ

এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে ওই ছাত্রদল নেতা উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে থাকেন, “এই‌ ডকুমেন্টরিতে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। ডকুমেন্টরিতে ছাত্রদলের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে। আমরাও আন্দোলন মাঠে ছিলাম, জেল-জুলুম, মামলা আমরাও খেয়েছি।”

এ সময় তার সঙ্গে শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক রোমান রাশিদুল ও হাসান শাহরিয়ার রমিমকেও হট্টগোল করতে দেখা যায়।

অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের জন্য তাদের দুইদিন সময় দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে একটি মাত্র ক্যামেরা দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট ও‌ সময় না পাওয়ায় তাদের পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্টরি নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

তবে এ ঘটনার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের এক প্রভাবশালী শিক্ষকের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।

তারা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের পূর্বে তারা জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ছবি ও ভিডিও ফুটেজ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব পাবলিক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের পাঠানো ও সাংবাদিকদের থেকে সংগৃহীত ছবি ও ফুটেজ দিয়ে ডকুমেন্টরি নির্মাণ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি দাবি করেছেন তার ছবি বা ফুটেজ দেয়া হয়নি, তার ছবি বা ফুটেজ তাদের কাছে কেউ দেয়নি। এজন্য তারা ডকুমেন্টরিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি?

এ নিয়ে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আজ যে একটা বিশেষ পরিস্থিতি দেখেছি, এটাও জাহাঙ্গীরনগরের বৈশিষ্ট্য, এটাও ২৪ এর অর্জন। খারাপভাবে দেখার প্রয়োজন নেই। প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে ভুল থাকতে পারে, এখানে শিক্ষার বিষয় রয়েছে। ঠিক একইসঙ্গে প্রতিবাদের যে ভাষা, সেখানেও শিক্ষিত হবার প্রয়োজন রয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সমালোচনা ও কুৎসার পার্থক্য শিখবে। একইসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসা ও পূজার পার্থক্য শিখবে ও বুঝবে।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’
  • জুলাই ডকুমেন্টরিতে ‘ফুটেজ’ না থাকায় জাবি ছাত্রদল নেতার হট্টগোল
  • রংপুরে হামলার ঘটনায় পাঁচজন গ্রেপ্তার: পুলিশ
  • রংপুরে হিন্দুপাড়ায় হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল