‘ওদের তো আগে আবেদন করতে হবে।’ – পাকিস্তান সুপার লিগে বাংলাদেশি তিন ক্রিকেটারের খেলা নিয়ে বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে প্রশ্ন করা হলে এভাবেই উত্তর দিয়েছিলেন তিনি।

আগামী ১১ এপ্রিল শুরু হবে পিএসএলের দশম আসর। এই টুর্নামেন্টে পেশাওয়ার জালমিতে সুযোগ পেয়েছেন নাহিদ রানা। প্লেয়ার্স ড্রাফটে গোল্ড বিভাগ থেকে নিজেদের প্রথম ডাকেই তাকে দলে নেয় জালমি। নাহিদ ছাড়াও পিএসএলে দল পেয়েছেন লিটন কুমার দাস (করাচি কিংস) ও রিশাদ হোসেন (লাহোর কালান্দার্স)। তারা খেলার সুযোগ পাবেন কিনা সেটা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। বিসিবি এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় তাদের অনাপত্তিপত্র দেবে কিনা।

এদিকে, বিসিবির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নাহিদ রানা অনাপত্তিপত্র চেয়ে আবেদন করেছেন শনিবার। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে খেলা এই পেসার নিজ দলে অধিনায়ক হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে। তার সঙ্গে আলাপ করেই বিসিবির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনাপত্তিপত্র চেয়েছেন নাহিদ। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ থেকে এ খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আরো পড়ুন:

মঞ্চে উঠে আপ্লুত হামজা শুধু বললেন ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’

সর্বোচ্চ ১০ লাখ বেতন তাসকিনের, ১০ হাজার বেড়ে শান্তর ৮ লাখ 

তাদের অংশগ্রহণ নিয়ে বড় বাঁধা আন্তর্জাতিক সিরিজ। দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে আগামী ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশে আসবে জিম্বাবুয়ে। সিলেটে ২০ ও চট্টগ্রামে ২৮ তারিখ শুরু হবে দুই টেস্ট। ওই সিরিজের দলে থাকলে পিএসএলের শুরু থেকে খেলার সুযোগ পাবেন না নাহিদ।

পাকিস্তান সুপার লিগসহ দেশের বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বেশি খেলা উচিত মনে করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, “(নাহিদ রানার) এই ধরনের (পিএসএল) টুর্নামেন্ট খেলা উচিত। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট অবশ্যই খেলা উচিত। তবে এটা নির্ভর করবে ক্রিকেট বোর্ড, কোচ, অধিনায়ক- সবকিছুর ওপরে।”

“আমার মনে হয়, বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো যদি আমাদের ক্রিকেটাররা খেলা শুরু করে, তাহলে অভিজ্ঞতা তৈরি হবে এবং দায়িত্বটা নেওয়া শিখবে। বাইরের ক্রিকেটারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম ভাগাভাগি করা, সব মিলিয়ে ভালো একটা অভিজ্ঞতা হবে। আশা করব, এই ধরনের টুর্নামেন্টে আমাদের ক্রিকেটাররা সামনের দিকে খেলার সুযোগ পাবে’’ – যোগ করেন তিনি।

ঢাকা/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প এসএল

এছাড়াও পড়ুন:

লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়

“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।” 

এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক। 

উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”

তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।

আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।” 

চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।” 

চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”

মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ