দুপুর ১২টায় সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে নামা। গতকাল ভিআইপি গেট দিয়ে বের হওয়ার পর দেখলেন লোকে লোকারণ্য। সিলেটে ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজা চৌধুরীর ভক্তরা ফুল, ব্যানার, ঢাকঢোল নিয়ে হাজির। অনেকের হাতে আঁকা হামজার ছবি-পোস্টার। শত শত ক্যামেরা, মোবাইল ফোন আর মানুষের ভিড় সামলে কয়েক মিনিট কিছু কথা বলার পর হামজা ওঠে পড়েন হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাটের বাড়িতে যাওয়ার ছাদখোলা গাড়িতে। পথে পথে সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভেসে যাওয়া হামজা বিকেলে পৌঁছেন নিজের গ্রামের বাড়িতে। সেখানে সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাঁকে। সন্ধ্যার পর নিজ বাড়িতে বসে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়া হামজার মধ্যে ছিল না ভ্রমণ ক্লান্তির কোনো ছাপ।
হাজার হাজার জনতার ভালোবাসায় সিক্ত শেফিল্ড ইউনাইটেডের এ ডিফেন্ডার কখনও সিলেটি ভাষায় আবার কখনও বা ইংরেজিতে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তাঁকে যেভাবে বরণ করা হয়েছে, তাতে জনপ্রিয়তায় অনেকেই হামজাকে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজার কাছে সাকিবের সঙ্গে তুলনায় আপত্তি, ‘না, এটা ঠিক না। সাকিব আল হাসান মেগাস্টার। বিশ্বমানের ক্রিকেটার অনেক বছর ধরে। তাঁর সঙ্গে তুলনায় আমি সাপোর্ট করি না।’
ইংল্যান্ডে ফুটবলের জগতে বড় হলেও বাংলাদেশে যে ক্রিকেট জনপ্রিয়, তা ভালো করেই জানা হামজার। একসময় নাকি ক্রিকেটও খেলেছিলেন তিনি। তবে এখন হামজাকে প্রস্তুত হতে হচ্ছে ২৫ মার্চ এশিয়ান কাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য। আজ সারাদিন নিজের গ্রামে থাকার পর সন্ধ্যার ফ্লাইটে ঢাকায় জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর। এই দেখাটা জামাল ভূঁইয়া-তপু বর্মণদের সঙ্গে তাঁর প্রথম। তাই বেশ রোমাঞ্চিত হামজা, ‘হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেছি। গত কয়েক দিন কোচের (হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আর জামাল ভূঁইয়ার সঙ্গে আমার একটু একটু কথা হয়েছে। কালকে (মঙ্গলবার) সবার সঙ্গে দেখা করব। খুব ভালো লাগছে।’
এর পর হামজার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ কম্বিনেশনে মানিয়ে নেওয়া। বাংলাদেশের হয়ে আট নম্বর জার্সি গায়ে দেবেন তিনি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজার কাছে এটা কোনো ব্যাপারই না, ‘আশা করি, মাঠে কম্বিনেশন ভালো হবে। কোচের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। খেলোয়াড়রা সবাই ট্রেনিং করেছে। ভালো অবস্থানে আছে।’
বাংলাদেশের হয়ে হামজা চৌধুরী খেলবেন বলে ভারত অবসর ভেঙে ফিরিয়ে এনেছে সুনীল ছেত্রিকে। শিলংয়ে অনুষ্ঠেয় এই ম্যাচে হামজা বনাম ছেত্রির লড়াই হবে বলে ধারণা সবার। কিন্তু প্রতিপক্ষের কে ফিরল, তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না শেফিল্ড ইউনাইটেডের এ ডিফেন্ডার, ‘আমি তাঁর (ছেত্রি) খেলা দেখিনি। আমি শুনেছি, তিনি ভালো ফুটবলার। তবে আমরা ভারত নিয়ে ভাবছি না। তাদের কে ফিরলেন, তা নিয়ে ভাবছি না। আমরা আমাদের নিয়েই মনোযোগ। আর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে কোনো চাপ অনুভব করছি না। ইনশাআল্লাহ ভারতের বিপক্ষে আমি গোল করতে চাই। অবশ্যই আমরা ভারতের বিপক্ষে জিতব।’
ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে খেলেছিলেন সাত ম্যাচ। ২০১৯ সালের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলের সেই স্বাদ আর পাননি। বাংলাদেশি হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছেন হামজা। নিজের এই ফেরায় যেমন উচ্ছ্বসিত, তেমনি বাড়ির সামনে এত জনস্রোত দেখে খুশি তিনি, ‘আমি ভাবতে পারিনি, এত লোক এখানে আসবে।’
তাঁর সতীর্থ সিলেটের ছেলে সাদ এবং তাজউদ্দিনের সঙ্গে সিলেটি ভাষায় কথা বলতে উন্মুখ হয়ে থাকা হামজা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতও বলতে পারেন, ‘আমি অনেক দিন বাংলা গান শুনিনি। আমি শুধু বলতে পারি আমার সোনার বাংলা.
১১ বছর পর নিজের গ্রামে এসেছেন। গত বছর প্রয়াত হওয়া নিজের প্রিয় দাদুকে খুব মিস করছেন হামজা। নিজে যেমন বাংলাদেশি হয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায়, তেমনি করে সন্তানদেরও ভবিষ্যতে লাল-সবুজের জার্সিতে দেখতে চান হামজা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ক ব আল হ স ন ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত
বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ।
সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।
আরো পড়ুন:
একা বাস করতে পারে যে পাখি
কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?
সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।
তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না।
এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস।
তিনি জানেন, প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে। বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।
সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন।
একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।
সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।
চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।
গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা/লিপি