Prothomalo:
2025-06-15@21:19:51 GMT

রক্তক্ষয়ী বদর যুদ্ধের কারণ

Published: 18th, March 2025 GMT

প্রায় এক বছর হয়ে গেছে রাসুল মুহাম্মদ (সা.) তার সকল সাহাবিকে নিয়ে মক্কা থেকে মদিনায় চলে এসেছেন। মদিনায় এসে তিনি একটি স্থিতিশীল সমাজ গড়ে তুলতে চান। কিন্তু সহ্য হচ্ছিল না মক্কার কুরাইশদের। যেকোনো মূল্যে এই সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ এবং ধর্মের ভিত ভেঙে ফেলতে তারা বদ্ধপরিকর। বিশ্বাসগত বিরুদ্ধাচরণ তো ছিলই, নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে দামেস্ক অভিমুখী তাদের বাণিজ্যিক মহাসড়ক নিয়ে। তাই দেরি না করে কুরাইশরা মক্কা থেকে সিরিয়া সীমান্ত পর্যন্ত বাণিজ্যপথের পার্শ্ববর্তী অনেক গোত্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন করতে শুরু করে, যাতে তারা রাসুল (সা.

) এবং মদিনার প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করতে না পারে।

 কিন্তু কুরাইশরা বুঝতে পেরেছিল, এভাবে কেবল প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ডের দ্বারা তারা তাদের বাণিজ্যপথ নিরাপদ রাখতে পারবে না। মদিনার সব শাখা গোত্র যদি এক জোট হয়ে আক্রমণে বেরোয়, তাহলে সহজেই যেকোনো বাণিজ্য কাফেলা তছনছ করে ফেলতে পারবে। তাই সব দিক বিবেচনা করে কুরাইশরা সিদ্ধান্ত নিল, যেকোনোভাবে নতুন উত্থিত মদিনার শক্তিকে গোড়া থেকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলতে হবে। গোপনে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে লাগল তারা।

আরও পড়ুনঅলৌকিক তিন ঘটনা০২ মার্চ ২০২৫

ওদিকে রাসুল (সা.)ও জানেন, মদিনা মুসলিমদের শেষ আশ্রয়স্থল। কোনোভাবে যদি এ আশ্রয় তাঁদের হাতছাড়া হয়ে যায়, তাহলে বেদুইনদের মতো যাযাবর জীবন বেছে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। ইসলামের আলো অনেকটা নিষ্প্রভ হয়ে পড়বে মরুর ঝঞ্ঝা বাতাসে। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আবারও বাধাগ্রস্ত হবে। অবিশ্বাস আর জাহেলিয়াত গ্রাস করে নেবে ইসলামের দীপ্য আলোকশিখা।

সুতরাং সব দিক বিবেচনা করে প্রতিরোধ চিন্তা বাদ দিয়ে তিনি শক্তি প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলায় আক্রমণ করতে উদ্যত হলেন। সাহাবিদের ছোট ছোট দল প্রেরণ করে কুরাইশী বাণিজ্য কাফেলায় আক্রমণের নির্দেশ দিলেন।

কুরাইশদের আয়ের অন্যতম উৎস দামেস্ক ও জেরুজালেমের বিশ্ববাজারের সঙ্গে নানা প্রকার পণ্যের ব্যবসা। তাদের এই দুই শহরে যাওয়ার প্রধান পথ ছিল বদরের পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রাচীন পথগুলো। এ পথ গুলোই শত শত বছর ধরে মক্কা ও হেজাজের সঙ্গে বিশ্ববাজারের প্রধান ব্যবসায়িক পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পথগুলো সহজ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সহজ।

আরও পড়ুন১৭ রমজান ছিল বদর যুদ্ধ ২৮ মার্চ ২০২৪

রাসুল (সা.) কুরাইশদের এ দুর্বলতা ভালোভাবেই জানতেন। আমদানি নির্ভর মক্কার কুরাইশদের অর্থনীতিকে দুর্বল করতে পারলে তাদের আত্মগৌরব তলানিতে এসে ঠেকবে। আয়ের প্রধান উৎস বন্ধ হয়ে গেলে একসময় তারা রাসুলের(সা.) সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হবে। ফলে নবীজি (সা.) মদিনা ছাড়িয়ে আরবের প্রতিটি প্রান্তে ইসলামের দাওয়াতকে বিস্তৃত করতে পারবেন। সুতরাং, অনেক কিছুই নির্ভর করছে কুরাইশদের বাণিজ্যপথগুলো অধিকারের ওপর। অবস্থানগত দিক দিয়েও তিনি সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। আরবের এমন এক স্থানে মদিনার অবস্থান, মক্কা থেকে উত্তরে সিরিয়ায় যেতে হলে মদিনাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। নবীজি (সা.) সেই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছেন।

মক্কার কুরাইশরা নিজেদের বাণিজ্যপথ নিরুপদ্রব রাখতে মক্কা থেকে সিরিয়া সীমান্ত পর্যন্ত সব আরবীয় গোত্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতামূলক চুক্তি সম্পন্ন করে নিয়েছিল। এবার রাসুল(সা.)ও সে পন্থা অনুসরণ করলেন। যেহেতু এর আগে আশপাশের অঞ্চলে কয়েকটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে ইসলামি সেনাদলের প্রাথমিক পরিচয়পর্ব সম্পন্ন হয়েছে, এবার সেটা জানান দেওয়ার পালা। আরবের সব গোত্র ইতিমধ্যে জেনে গেছে, মুহাম্মদ (সা.) বংশ-গোত্রনির্বিশেষে নতুন এক সেনাদলের অধিপতি হয়েছেন। তাঁর বাহিনীতে রয়েছে আউস-খাজরাজের ঐতিহ্যবাহী যোদ্ধারা, আছে হামজার মতো সিংহ হৃদয়, উমরের মতো সাহসী আর আলি এবং সাদের মতো একদল তরুণ যুবা, যারা যেকোনো সময় বদলে দিতে পারে পুরোনো আরবের ভূরাজনৈতিক মানচিত্র।

আরও পড়ুনবদর যুদ্ধের ইতিহাস: বদর যুদ্ধক্ষেত্রে একটি দিন০৯ এপ্রিল ২০২৩

এবার কুরাইশ এবং সব গোত্রীয় জনপদকে জানাতে হবে—এরা আর সেই নির্যাতিত মুসলিম নেই। চাবুকের আঘাতে যারা কখনো প্রত্যুত্তর করত না, আজ তাদের তরবারি স্ফুলিঙ্গের মতো কথা বলতে শুরু করেছে। মরুভূমির তপ্ত পাথরে শুইয়ে যাদের রক্ত-ঘামে রঞ্জিত হতো সোনালি বালি, আজ সেই সোনালি মরু তাদের পদভারে কম্পমান।

হিজরতের পর এক বছর পার হয়ে গেল। বেশ একটা সংক্ষুব্ধ সময় যাচ্ছিল তখন। প্রতি মাসে মদিনা থেকে সেনাদল বের হচ্ছিল আক্রমণের উদ্দেশ্যে। তাদের আক্রমণে তটস্থ ও অস্থির হয়ে উঠছিল মক্কার কুরাইশরা। মক্কা ও মদিনা—উভয় জনপদই ভেতরে-ভেতরে ফুঁসছিল একে অপরকে পরাভূত করার জন্য। তাদের ফুঁসে ওঠা অগ্নি লাভার দরুন আশপাশের গোত্রগুলো শঙ্কিত হয়ে প্রহর গুনছিল যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠার।

আরও পড়ুনযে জুব্বা পরে তিনি বদর যুদ্ধে অংশ নেন সেটি দিয়েই তাঁকে দাফন করা হয়০৬ মার্চ ২০২৪

রাসুলের (সা.) শক্তি প্রদর্শনের আরেকটি কারণও ছিল। তিনি মক্কার কাফেলাগুলোতে আক্রমণ করে তাদের উসকে দিচ্ছিলেন যুদ্ধের জন্য। কেননা, গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ দিয়ে তিনি বুঝতে পারছিলেন, কুরাইশরা মোটেও বসে নেই। মুসলিমদের মদিনা থেকে উৎখাত করতে খুব শিগগির তারা বড় ধরনের আক্রমণ শানাবে। কিন্তু রাসুল (সা.) চাচ্ছিলেন, কুরাইশদের সঙ্গে সম্ভাব্য লড়াইটা যেন মদিনা ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে না হয়ে দূরবর্তী কোথাও সংঘটিত হয়। মদিনায় আক্রমণ হলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে—এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ কারণে তিনি মদিনা থেকে দূরবর্তী স্থানে কুরাইশদের আক্রমণ করে সম্ভাব্য যুদ্ধের গতিপথ ঠিক করছিলেন। একই সঙ্গে সেনাদল পাঠিয়ে বাণিজ্য কাফেলার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত তথ্যও সংগ্রহ করছিলেন।

মক্কা থেকে যেসব সাহাবি নিঃস্ব অবস্থায় মদিনায় চলে এসেছিলেন, তাঁদের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি মক্কাতেই রয়ে গিয়েছিল। কুরাইশরা তাদের কোনো সম্পদ নিয়ে আসতে দেয়নি। দেশান্তরী এসব সাহাবির সব সম্পদ মক্কার কুরাইশ নেতারা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে ভোগ করছিল। এ কারণে বাণিজ্য কাফেলায় আক্রমণ করে সে ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল তাঁদের সামনে।

 সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর : আলেম ও লেখক

আরও পড়ুনদুই কিশোরের বীরত্বে মারা গেল আবু জাহেল১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বদর য দ ধ ক র ইশর মদ ন র স ন দল মদ ন য় অবস থ আরব র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইরানের রাজধানী তেহরানে এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থিত সামরিক স্থাপনাগুলোতে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ ‍জুন) বিকেলে চালানো এ হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার ডেপুটি হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন।

রবিবার রাতে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ও সংবাদ সংস্থাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

ইরানে আবারো হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরো জানিয়েছে, তেহরানে ইসরায়েলের নতুন হামলায় আইআরজিসির তৃতীয় ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোহসেন বাঘেরিও নিহত হয়েছেন।

এর আগে, শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলের প্রথম হামলায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসির কমান্ডার হোসেইন সালামিসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং অন্তত ছয় জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল ইরান। 

রবিবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার ইরানজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৯০০ জন। হতাহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ জন নারী এবং বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ