চট্টগ্রামে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত ১৩, দু’জন আশঙ্কাজনক
Published: 19th, March 2025 GMT
চট্টগ্রামের রাউজানে ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে পাঁচটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় উপজেলার নোয়াজিষপুরের ইউসুফ খাঁর দিঘি এবং বিকেল ৪টায় একই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মদন চৌধুরীবাড়ি জামে মসজিদ মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে বিএনপির চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী গুলিবিদ্ধ যুবদল কর্মী মো.
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, নোয়াজিষপুর মদন চৌধুরী জামে মসজিদ মাঠে গোলাম আকবর খন্দকারের আনুসারী নোয়াজিষপুর ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও অংগসংগঠনে যৌথ ব্যবস্থাপনায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন চলছিল। এতে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা ২০-২৫টি মোটরসাইকেল যোগে এসে হামলা চালায়। এতে ইফতার মাহফিল পণ্ড হয়ে যায়। এই সময় মো. কাইয়ুম নামের এক যুবদল নেতা গুলিবিদ্ধ হয়। পাশাপাশি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হুমায়ুন (২৮), যুবদলের সদস্য মো. রিফাত (২৭), যুবদলের সদস্য সচিব মো. সোহেল, বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফোরকান সিকদার (৪৪), বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকে আহত হন।
পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গিয়াস উদ্দিন কাদেরের অনুসারীরা চিকদাইর ইউনিয়নের ইফতার মাহফিল থেকে ফেরার পথে ইউসুফ খাঁর দিঘিতে গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীরা পথ আটকে গুলিবর্ষণ ও কিরিচ দিয়ে হামলা চালায়। অনেকে মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। এ সময় পাঁচটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে যুবদল নেতা মোরশেদ, মো. সেকান্দর, মো. বাদশা ও মো. ফোরকান আহত হন।
গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী নোয়াজিষপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফোরকান সিকদার বলেন, আমরা আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। সন্ধ্যায় তাদের ওপর কারা হামলা করেছে তা জানি না।
গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী উত্তর জেলা যুবদল নেতা সেলিম উদ্দিন বলেন, ইফতার মাহফিল থেকে ফেরার পথে গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীরা আমাদের মোটরসাইকেল বহরে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
রাউজান থানা পুলিশের উপপরিদর্শক নাছির উদ্দীন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সংঘর্ষের ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ ব এনপ র র অন স র র য বদল ন ত ব এনপ র স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
পদ স্থগিত নেতার পক্ষে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিবৃতি, দ্রুত মুক্তি দাবি
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদাপাথর লুটের মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে উপজেলা বিএনপি। গতকাল সোমবার উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। কেন্দ্র থেকে পদ স্থগিত হওয়া একজন নেতার পক্ষে এমন বিবৃতি দেওয়ায় দলের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
গত শনিবার রাতে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯)। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। গত ১১ আগস্ট কেন্দ্রীয় বিএনপি চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ দলীয় নীতি ও আদর্শবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করে।
গতকাল উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নান ও সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সাহাব উদ্দিন বিগত স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রসৈনিক ও মিথ্যা মামলায় নির্যাতিত নেতা। তাঁকে সাদাপাথর লুটের মামলায় মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানোয় উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করা হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আকবরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সাহাব উদ্দিনের চাচাতো ভাই। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠে আছি। আমরা তাঁকে ভালোভাবে চিনি। তিনি কোনো লুটপাটে ছিলেন না। বরং লুটপাটের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে আমরা মিছিল, মানববন্ধন করেছি। এ তথ্য আমরা মৌখিকভাবে জেলা বিএনপিকেও জানিয়েছি।’
উপজেলা বিএনপির বিবৃতিতে সাহাব উদ্দিনের বিষয়ে ‘মিথ্যা অভিযোগে সদ্য পদ স্থগিত হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে জেলা বিএনপির অবস্থান ও কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। এমন অবস্থায় উপজেলা বিএনপি কীভাবে ওই নেতার পক্ষে বিবৃতি দেয়, সেটা অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। ব্যক্তির অপকর্মের দায় কেন সংগঠন নেবে? বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।
সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় ১৫০ একর জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। গত ১৭ মার্চ প্রথম আলোয় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ১৮ মার্চ সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭০ একর জমি উদ্ধার করে এবং ১০০টি পাথর ভাঙার যন্ত্র উচ্ছেদের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি টিনশেড ঘর উচ্ছেদ করা হয়।
এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সরকারি জমি দখলের ঘটনায় ১৯ মার্চ সাহাব উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা বিএনপি। পাশাপাশি অভিযোগ তদন্তে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
গত ১০ এপ্রিল ভোলাগঞ্জে পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে সাহাব উদ্দিন ও তাঁর স্বজনেরা জমি দখল ও লুটপাটে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা সভাপতির নেতৃত্বে এমন অপরাধ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।
সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে ‘সাদাপাথর লুটপাটে অভিযুক্ত অন্যতম মূলহোতা’ হিসেবে উল্লেখ করে। সাদাপাথর লুটের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত ১৫ আগস্ট খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা এক হাজার থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়।