উত্তরা ব্যাংক ১৪৫ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ দেবে
Published: 20th, March 2025 GMT
দেশের বেসরকারি খাতের উত্তরা ব্যাংকের মুনাফা এক বছরের ব্যবধানে ১৫৭ কোটি টাকা বা ৫০ শতাংশ বেড়েছে। মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দেড় দশকের মধ্যে শেয়ারধারীদের জন্য সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ব্যাংকটি।
গত বছরের জন্য নগদ ও বোনাস মিলিয়ে ব্যাংকটি ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। গত মঙ্গলবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পর এ লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে গত বছরের লভ্যাংশ ও আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য শেয়ারধারীদের জানিয়েছে ব্যাংকটি। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, গত বছরের জন্য তারা শেয়ারধারীদের সাড়ে ১৭ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ১৭ শতাংশ বোনাস মিলিয়ে মোট ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে। এর আগে সর্বশেষ ২০০৯ সালে ব্যাংকটি শেয়ারধারীদের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। গত বছরের জন্য ব্যাংকটি যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তাতে প্রতি ১০০ শেয়ারের বিপরীতে একজন শেয়ারধারী পাবেন নগদ ১৭৫ টাকা এবং বোনাস হিসেবে সাড়ে ১৭টি শেয়ার।
উত্তরা ব্যাংক জানিয়েছে, গত বছর শেষে তাদের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ৭৯ পয়সায়। ব্যাংকটি গত বছর সব ধরনের খরচ বাদ দেওয়ার পর যে মুনাফা করেছে, সেটিকে ব্যাংকটির মোট শেয়ার সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে এই ইপিএসের হিসাব করা হয়। ইপিএসের এই হিসাব অনুযায়ী, গত বছর শেষে ব্যাংকটির মোট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৭৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৩১৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির মুনাফা ১৫৭ কোটি টাকা বা প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
ব্যাংকটি গত বছরের জন্য যে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার জন্য নগদ লভ্যাংশ বাবদ ব্যাংকটি বিতরণ করবে ১৪৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের মুনাফার প্রায় ৩১ শতাংশ। ২০২৩ সালেও ব্যাংকটি নগদ লভ্যাংশ বাবদ ১৪৫ কোটি টাকা বিতরণ করেছিল, যা ছিল ওই বছরের মোট মুনাফার প্রায় ৪৬ শতাংশ।
এদিকে দেড় দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ লভ্যাংশের ঘোষণায় গতকাল বুধবার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দামও বেড়েছে। ঢাকার বাজারে এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪০ পয়সা বা দেড় শতাংশের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৫ টাকায়। ভালো লভ্যাংশের ঘোষণায় গতকাল ব্যাংকটির শেয়ারের দামের প্রতিও ছিল বিনিয়োগকারীদের বাড়তি আগ্রহ। এ কারণে দিন শেষে ঢাকার বাজারে লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে ছিল। এদিন ঢাকার বাজারে ব্যাংকটির প্রায় ১৩ কোটি টাকার সমমূল্যের শেয়ারের হাতবদল হয়েছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জন্য ব্যাংকটি যে নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করবে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাবেন ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ১৪৫ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৫৩ কোটি টাকা, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৪৭ কোটি টাকা, ব্যাংকের উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা পাবেন ৪৪ কোটি টাকা এবং এই শেয়ারের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন প্রায় ৬০ কোটি টাকা।
উত্তরা ব্যাংক ১৯৮৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এটির মোট শেয়ারসংখ্যা ৮২ কোটি ৫৭ লাখ ৬০ হাজার ৭৪২টি। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ৮২৬ কোটি টাকা। এটি শেয়ারবাজারে ভালো মানের কোম্পানি হিসেবে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১৪৫ ক ট
এছাড়াও পড়ুন:
একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।
চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।
শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো পড়ুন:
বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।
শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’
শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’
চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’
ঢাকা/রাজীব