রাপা প্লাজা ছাড়তে নোটিশ: ঈদের আগে শঙ্কায় জয়িতার উদ্যোক্তারা
Published: 20th, March 2025 GMT
সরকারি ব্র্যান্ড ‘জয়িতা’র নারী উদ্যোক্তাদের রাজধানীর রাপা প্লাজার ফ্লোর ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে ১৪ বছরের পুরোনো এই ব্র্যান্ডের উদ্যোক্তা ও কর্মীদের মধ্যে। তাঁরা কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। জয়িতার নতুন ভবনে সরাসরি ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে ওই বিপণিবিতানের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় অবস্থিত জয়িতার বিপণনকেন্দ্র ও ফুডকোর্ট ২৪ মার্চের মধ্যে খালি করে দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, জয়িতার নতুন ভবনে স্টল বরাদ্দ নিয়ে উদ্যোক্তাদের ব্যবসা করার সুযোগ থাকছে না। সেখানে জয়িতার পুরোনো উদ্যোক্তাদের আবেদন করে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে পণ্য বিক্রির সুযোগ নিতে হবে।
নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ২০১১ সালের নভেম্বরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় জয়িতার যাত্রা শুরু হয়। এর ফাউন্ডেশন হয় ২০১৬ সালে। ফাউন্ডেশন দেশজুড়ে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া, উদ্যোক্তাদের মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি, পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রিতে সহায়তা করে।
জয়িতা ফাউন্ডেশনের অধীন ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে ১২ তলা ‘জয়িতা টাওয়ার’ নির্মাণ করা হয়েছে। ১৫৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জয়িতা টাওয়ার প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত। ধীরগতিতে নির্মাণকাজ শেষে ভবনের উদ্বোধন হয় ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর।
গত বছরের ডিসেম্বরে ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাপা প্লাজার ওই দুই তলার ভাড়া বজায় থাকবে। ১ এপ্রিল থেকে সেখানে ফাউন্ডেশনের কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হবে না। তলা দুটি রাপা প্লাজা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর আগে ২৪ মার্চের মধ্যে ফ্লোর দুটি খালি করে দিতে উদ্যোক্তাদের প্রথমে গত ১ জানুয়ারি ও পরে ১৬ জানুয়ারি চিঠি দেওয়া হয়।
রাপা প্লাজার জয়িতা উদ্যোক্তাদের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য, রাপা প্লাজায় জয়িতা উদ্যোক্তারা একচেটিয়া ব্যবসা করেছেন। নতুনদেরও এখন সুযোগ দেওয়া উচিত। জয়িতা নিয়ে সরকার বছরের পর বছর গচ্চা দিচ্ছে। এখনো ভাড়া বাবদ ৩৯ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিউরের (এসওপি) মাধ্যমে যাচাই–বাছাইয়ের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের পণ্য নেওয়া হবে। এখানে শুধু সমিতি নয়, এককভাবেও উদ্যোক্তারা পণ্য দিতে পারবেন।এ ঘটনায় জয়িতার উদ্যোক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ভবনটি নির্মাণের আগে তাঁদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেখানে তাঁদের স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু ২০২৪ সালের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় তাঁদের জানানো হয়, নতুন ভবনে তাঁরা সরাসরি ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না, শুধু উৎপাদক হিসেবে পণ্য সরবরাহ করতে পারবেন। সেই পণ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (আড়াই-তিন মাস) বিক্রি না হলে তাঁদের ফেরত দেওয়া হবে।
রাপা প্লাজায় জয়িতার ৯৪টি স্টলের প্রতিটির জন্য উদ্যোক্তারা মাসে ৫ হাজার টাকা করে ভাড়া দেন। এককভাবে সেখানে কোনো উদ্যোক্তা নয়, সমিতির অধীন স্টল বরাদ্দ নিতে হয়েছে নারীদের।
‘হুট করে দুজনই বেকার হয়ে যাচ্ছি’গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) জয়িতা বিপণনকেন্দ্র ও ফুডকোর্টে গেলে উদ্যোক্তা ও কর্মীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মীম আক্তার নামের এক নারী বিক্রয়কর্মী ১৮ দিনের সন্তান কোলে করে এসেছিলেন। তিনি জানান, চার বছর ধরে তিনি খরা মহিলা সংস্থার বিক্রয়কর্মী ও স্বামী শাকিল হোসেন সাত বছর ধরে ফুডকোর্টের ক্যাশ কাউন্টারে কর্মরত আছেন। দুই বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়।
রাজধানীর রাপা প্লাজায় জয়িতা বিপণনকেন্দ্রের ভেতরের দৃশ্য.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিগ-বির মাধ্যমে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশ
এক দশক আগে বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশের জন্য বিগ-বি নামে পরিচিত বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট গ্রহণ করেছিল জাপান। বঙ্গোপসাগরীয় শিল্প প্রবৃদ্ধির ওই উদ্যোগে রয়েছে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ প্রকল্প আর আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার বিকাশ। মে মাসের শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরে বিগ–বির মাধ্যমে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তাঁর জাপান সফরের আগে টোকিওতে ১৫ মে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টিতে প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জাপানের আলোচনায় কোন কোন বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার থাকবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
১৫ মে টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে জসীম উদ্দিন বাংলাদেশের এবং জাপানের জ্যেষ্ঠ উপমন্ত্রী আকাহোরি তাকেশি তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে কোন কোন বিষয়গুলো ১৫ মের আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পাবে, তা নিয়ে মতামত নেওয়া হয়। পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফরসহ সচিব পর্যায়ের সফর নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিগ–বিতে সহযোগিতা জোরদারের পাশাপাশি ব্যবসা, বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ খাতভিত্তিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফর নিয়ে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, টোকিওতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি দুই ভাগে বিভক্ত থাকবে। প্রথম ভাগে থাকবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়। আর দ্বিতীয় ভাগে থাকবে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি।
আঞ্চলিক বিষয়াদিতে জাপানের বিগ–বি নিয়ে আলোচনা হবে। এ সময় ঢাকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের বাস্তবতা তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে এ প্রকল্প সামনে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও বলা হবে। পরে ভারত যদি এর সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, তবে তার ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হবে।
বিগ–বির সঙ্গে ২০২৩ সালে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করে জাপান। কিন্তু ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে চরম টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক। এমন এক প্রেক্ষাপটে বিগ–বিকে বিশেষ করে সংযুক্তিকে বাংলাদেশের পরিমণ্ডলে নেওয়ার পরিকল্পনায় আপাতত একটা ধাক্কা এসেছে। এ নিয়ে জাপান নানাভাবে নিজেদের অস্বস্তির বিষয়টি বাংলাদেশকে জানিয়েছে। বিগ–বি জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অগ্রাধিকার প্রস্তাব হওয়ায় এটিতে বিশেষ গুরুত্ব আছে টোকিওর। তাই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আগ্রহী জাপান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং প্রধান উপদেষ্টার টোকিও সফরে জাপান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিবিড় করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কাছ থেকে সমরাস্ত্র বিক্রির ওপর কয়েক বছর ধরে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে জাপান।
বাংলাদেশকে ২০২৩ সালে জাপানের সরকারি নিরাপত্তা সহায়তায় (ওএসএ) যুক্ত করা হয়েছে। মূলত জাপান নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে এই কাঠামো তৈরি করেছে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করার এবং ওই দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা দিয়ে থাকে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান একটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ঋণের পরিবর্তে অনুদান দিয়ে থাকে।