কুঁড়ি এসেছে চা বাগানে পাতা সংগ্রহ শুরু
Published: 20th, March 2025 GMT
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ৫টি চা বাগানসহ দেশের ১৬৮টি বাগানে চলতি মার্চ মাস থেকে স্বল্প পরিসরে নতুন চা পাতা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। চলতি অর্থবছরে দেশে ১০ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকৃতি সদয় হলে চা বাগানে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন বাগান-সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, গত বছর চায়ের নিলাম বাজারে ভালো দাম না পাওয়া ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন না হওয়ায় অধিকাংশ বাগান মালিক লোকসানের মুখে পড়েন। এ কারণে অনেক চা বাগান বন্ধ হবার পথে। কোনো কোনো চা বাগানে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-মজুরি। এ নিয়ে বাগান-সংশ্লিষ্টরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বাগান কর্মকর্তাদের ভাষ্য, চায়ের নিলামে ভালো দাম ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন না হলে চাশিল্প টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
মার্চের শুরুতে কিছু বৃষ্টি হওয়াতে ছাঁটাই করা চা গাছে নতুন কুঁড়ি আসতে শুরু করেছে জানিয়ে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানের শ্রমিক নেতা স্বরজিত পাশি জানান, ফাল্গুন মাসে হালকা বৃষ্টি হওয়ায় ছাঁটাই করা চা গাছে কুঁড়ি এসেছে। চা বাগান এখন সবুজ থেকে সবুজে ভরে যাবে। চা বাগান সবুজ দেখলে বাগানের শ্রমিকদের মন আনন্দে নেচে ওঠে। কারণ বাগান বেশি সবুজ পাতা এলে শ্রমিকরা বেশি চা পাতা সংগ্রহ করতে পারেন। পাতা বেশি সংগ্রহ হলে মালিক ও শ্রমিকরা বেশি লাভবান হতে পারেন। বাগানের শ্রমিকরা তাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বনপূজা করে চা পাতা তোলা শুরু করেছে।
চা বাগান-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চায়ের জন্য বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির পাশাপাশি প্রকৃতির ওপরও নির্ভর করতে হয়। চায়ের জন্য মূলত প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টিপাত ও সূর্যের আলো। বর্ষায় অতি বৃষ্টিপাত চায়ের জন্য ক্ষতিকর। আবার প্রচণ্ড তাপদাহও ক্ষতিকর। যে কারণে এর জন্য কিছুটা প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতেই হয়। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই তারা নতুন কুঁড়ি পেয়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে দেখা যায়, দলবেঁধে নারী শ্রমিকরা এখন প্রতিদিন চা পাতা সংগ্রহ করছেন। নতুন মৌসুমে বাগান থেকে চা পাতা তোলার আগে বাগান কর্তৃপক্ষ ও পঞ্চায়েত নেতাদের উপস্থিতিতে শ্রমিকরা পূজা-অর্চনা, গীতাপাঠ, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা করেন। এরপর নাচে-গানে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, দেশের ১৬৮টি চা বাগানে ২০২৪ সালে উৎপাদন হয়েছিল ৯৩ মিলিয়ন কেজি চা; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ কম ছিল। চলতি অর্থবছর ১০৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নোয়াপাড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সোহাগ মাহমুদ বলেন, ভালো দর না পেলে বর্তমানে চা বাগান টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ সব কিছুর দাম বেড়েছে কিন্তু সে হারে চায়ের দাম বাড়ছে না। এ কারণে অনেক চা বাগান এখন রুগণ্ বাগান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। টাকার অভাবে সকল ব্যয়ভার বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যাংকে দেনার পরিমাণ বেড়ে গেছে। ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নতুন বছর মালিকদের জন্য কঠিন অবস্থা যাবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) পরিচালক মো.
এনটিসির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) কাজী এমদাদুল হক বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে আমরা বাগানে নতুন চা পাতা তোলা শুরু করেছি। গত বছর সুখবর ছিল না, নানা সংকটের মধ্যে কেটেছে। এ বছর নতুনভাবে ব্যাংক থেকে টাকা না পাওয়া গেলে আরও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যেতে পারে। তাই এসব পরিস্থিতি মাথায় রেখে শ্রমিকদের নিয়ে আমরা নতুন বছরে চা পাতা তোলা শুরু করেছি। চায়ের ভালো দর পেলে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।