আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাত পৌনে ২টার দিকে ঢাবিতে এবং রাত আড়াইটার দিকে রাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ হয়। 

আন্তর্বর্তী সরকারের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার অবস্থান ব্যক্ত করার পর এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাবি ও রাবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ হয়। এই কর্মসূচিতে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে দেখা যায়।  

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তাদের সঙ্গে বৈঠকে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন তিনি।

অবশ্য প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যারা হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত, দেশের আদালতে তাদের বিচার করা হবে।”

‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করো, করতে হবে’ 
ঢাবির হল পাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ভিসি চত্বর থেকে রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘ধরি ধরি ধরি না, ধরলে কিন্তু ছাড়ি না’, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করো, করতে হবে’, সারা বাংলায় খবর দে, আওয়ামী লীগের কবর দে’, ‘আওয়ামী লীগের চামড়া, তুলে নেব আমরা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাইয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের যারা গণহত্যার করেছিল এবং মদদ দিয়েছিল, সেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য কোনো পদক্ষেপ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিতে দেখিনি। এটা লজ্জাজনক।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো ভাবনা নেই বলে প্রধান উপদেষ্টার করা মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে ঢাবি শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, “যে বাংলায় আবু সাঈদ প্রাণ দিয়েছেন, ওয়াসিম প্রাণ দিয়েছেন, সে বাঙলায় আওয়ামী লীগ থাকতে পারবে না। আন্দোলনে ২ হাজারের অধিক প্রাণ দিয়েছেন, হাজার হাজার আহতের অনেকে এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন।”

“তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যদি এই সরকার বলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারবে না, এর চেয়ে বড় লজ্জা হতে পারে না। যে বাংলায় আওয়ামী লীগ গণহত্যা করেছে, সেখানে তারা থাকতে পারবে না। আমরা তা মেনে নেব না,” বলেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে জুবায়ের বলেন, “শহীদের রক্তের সঙ্গে কোনো চক্রান্ত মেনে নেওয়া হবে না। অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে গণহত্যার দায়ে নিষিদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করে জনমত নিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন।”

ঢাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, “এখন ক্ষমতা লোভী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা আওয়ামী লীগকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণ দিয়ে দিয়েছে।”

“এ দেশে আওয়ামী লীগ থাকবে না-হলে ছাত্রসমাজ থাকবে। শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত এ দেশে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে,” বলেন তিনি।

মোসাদ্দেক আলী বলেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার সিদ্ধান্তকে আমরা ধিক্কার জানাই। আপনারা শহীদদের এবং আহত ভাইদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা যদি তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আমাদের বলিষ্ঠ অবস্থান থাকবে।”

সমাবেশ থেকে শুক্রবার বেলা ৩টায় ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন বিক্ষোভকারীরা।

‘বিচার বিচার বিচার চাই, আওয়ামী লীগের বিচার চাই’
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাবি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে বিক্ষোভ দেখান। 

তারা ‘শেইম শেইম, ক্যান্টনমেন্ট’, ‘বিচার নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, আওয়ামী লীগের বিচার চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে, করতে হবে’, স্লোগান দেন।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাবি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি। অথচ ফ্যাসিস্টদের ফেরানোর ষড়যন্ত্র চলছে। ছাত্র-জনতার শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলবে। যারা এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে, তাদেরও পরিণতি ফ্যাসিস্টদের মতো করা হবে।

বিক্ষোভে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা বলেন, “গণভবন যেভাবে দখল হয়েছিল, ঠিক সেভাবে ক্যান্টনমেন্টও দখল করা হবে। আওয়ামী লীগের মতো খুনি ফ্যাসিস্ট বাহিনীগুলোর উদ্দেশে বলছি, আপনারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবেন না।”

রাবির জোহা চত্বরে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষার্থীরা। 

“ঠিক যেভাবে হাসিনাকে সরান হয়েছিল, বাংলার জনগণও আপনাদের সরিয়ে দিতে এক মুহূর্তও ভাববে না,’ বলে ফাহিম রেজা। 

সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, “৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগের কবর রচিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ যদি ফিরে আসে, তাহলে তা আমাদের জীবন ও মৃত্যুর বিনিময়ে হবে।”

তিনি বলেন, “কোনোভাবেই ক্যান্টনমেন্ট থেকে বাংলাদেশ পরিচালিত হতে পারে না। যদি ক্যান্টনমেন্ট থেকে বাংলাদেশ পরিচালনার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়, তাহলে গণভবনের মতো ক্যান্টনমেন্টও দখল করতে বাধ্য হব।”

ঢাকা/সৌরভ/ফাহিম/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক য ন টনম ন ট ন ষ দ ধ কর র ন ষ দ ধ করত সরক র র গণহত য আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহরুখ খান: গণহত্যার সময় বিলিয়নিয়ার হওয়ার অর্থ কী
  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী