মো. নুর আলম চৌধুরীর কাছ থেকে এখন সময় পাওয়া খুব কঠিন। ৭৬ বছর বয়সে দাঁড়িয়েও তাঁকে সামলাতে হয় অনেক কিছু। গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর নীলক্ষেতের ২ নম্বর গলিতে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক অপেক্ষার পর তিনি এলেন। কথা বলতে অনাগ্রহী। বললেন, ‘আমি বয়স্ক মানুষ, রোজার সময় কষ্ট হয় বেশি কথা বলতে। অন্যদিন আসবেন?’

তবে অন্যদিন যেতে হয়নি। প্রবীণ মানুষটির কাছে পুরোনো বই, ঢাকা শহরের দাঙ্গা, ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের মতো প্রসঙ্গগুলো তুললে নিজেই শুরু করলেন কথার পিঠে কথা। গত শতকের পঞ্চাশের দশকের শেষে সন্দ্বীপে নদীভাঙনে সব হারানো নুর আলমের জীবনের গল্প শুনলে আশ্চর্যই হতে হয়। হয়তো একেই বলে ‘শূন্য থেকে পূর্ণ হওয়া’।

মো.

নুর আলম মাত্র ১২ বছর বয়সে ঢাকা শহরে এসে টিকে থাকতে রিকশা চালিয়েছেন। কখনো রাজমিস্ত্রির জোগালি হয়ে আধুলি পেয়েছেন পারিশ্রমিক হিসেবে। নীলক্ষেতের ফুটপাতে হকারি করে বিক্রি করেছেন মানুষের বাড়ি থেকে আনা পুরোনো বইপত্র, ম্যাগাজিনও। এখন শতাধিক কর্মচারীর বেতন দেন তিনি।

জীবনের বাঁকে বাঁকে পোড় খেয়ে অভিজ্ঞতা কুড়ানো নুর আলম আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের গত ৫০ বছরের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী আমাকে একনামে চেনেন। বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস করে দেখবেন। আমার দোকানের বই তাঁদের ভরসা।’

সেই ঢাকার কথা আপনাদের প্রজন্ম বুঝতেই পারবে না। এই নীলক্ষেতে ছিল কয়েক ঘর বস্তি। তালগাছটা নাই, একটা বটগাছও ছিল। এখন দোকানে ঢাকা পড়ে গেছে বড় মাঠ। বিশ্বাস হয় এই নীলক্ষেতে ফাঁকা মাঠ ছিল, রেললাইন ছিল?মো. নুর আলম চৌধুরী, নীলক্ষেতের ফ্রেন্ডস বুক কর্নারের স্বত্বাধিকারী

কথা সত্যি। নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানের ২ নম্বর গলির মুখে দাঁড়িয়ে থাকা বুড়ো তেঁতুলগাছটাও হয়তো নুর আলমের কথার সাক্ষী। এখানকার ফ্রেন্ডস বুক কর্নারের বয়স এখন ৫৮ বছর। বইয়ের দোকানটি শুরু করার আগে তিনি ঢাকা নিউমার্কেটের ২ নম্বর গেটের বিপরীতে ফুটপাতে বসে পুরোনো ম্যাগাজিন বিক্রি করতেন। এরপর বেঁচে থাকার তাগিদে করেছেন আরও বহু কাজ। তবে বই বিক্রির পেশাই তাঁকে বেশি টেনেছে।

‘তখন এমন পাঠক ছিল, যারা সত্যিকারের বইয়ের সমঝদার। ১৯৬৪ সালের দাঙ্গা, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ—এসব ঘটনায় অনেকের স্থানান্তর হয়েছে। ঘরবাড়ি বদলালেই বইপত্রে নাড়াচাড়া পড়ে। সেখান থেকে পুরোনো বই আমাদের কাছে কেজি হিসেবে বিক্রি করতেন ভাঙারিওয়ালারা। তাঁদের কাছ থেকে ইংরেজি ম্যাগাজিন কিনে বিক্রি করতাম। নীলক্ষেতে তখন বেশি হলে সাত থেকে আটজন বই বিক্রেতা ছিলেন,’ বলেন নুর আলম।

নীলক্ষেতে ১৯৬৬ সালে নুর আলমের পুরোনো বইয়ের দোকান। ছবিটি উইকলি ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র আলম বইয় র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি

‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে ‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।

এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’

‎বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন

‎জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।

‎তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।

‎কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।

‎পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”

‎গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”

‎অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, ‎যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”

ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ