সুস্থ দাঁত, সুস্থ মন—বিশ্ব ওরাল হেলথ ডের এবারের প্রতিপাদ্য। মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় আত্মবিশ্বাসী হতে হবে, তবেই সার্বিকভাবে সুস্থ থাকবে দেহ ও মন। ধরুন, মুখে দাঁত নেই, ভেঙে গেছে বা পড়ে গেছে বা আঁকাবাঁকা, উঁচু, ভাঙা দাঁত, দাঁতে ব্যথা বা শিরশির করে কিংবা রং বিবর্ণ, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে বা মাড়ি ফুলে আছে, মুখে দুর্গন্ধ, কিছু খেলেই দাঁতের ফাঁকে ঢুকে ব্যথা হয়, জ্বালাপোড়া করে—এমন সব ক্ষেত্রে দৈনন্দিন জীবন যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে।

গবেষণা বলছে, মুখের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে শুধু মুখের অভ্যন্তরে রোগ বা জটিলতা হয় এমন নয়, এ সংক্রমণ রক্তে মিশে শরীরের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে; এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যও হুমকিতে ফেলে।

অন্যদিকে মুখের সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ দাঁত আপনার ইতিবাচকতা, মানসিক ও শারীরিক বিকাশ, আত্মসম্মান, বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, জীবনযাত্রার মান, কাজে মনোযোগ, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার শক্তি, কাজে আগ্রহ, উদারতা, স্মরণশক্তি, প্রফুল্লতা, সজীবতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে পারে।

মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার কিছু টিপস

নিয়মিত মুখ পরিষ্কারে কোনো অবহেলা নয়। খুব সহজ, দিনে মাত্র দুবার—সকাল ও রাতে খাওয়ার পর দুই মিনিট করে নরম টুথব্রাশ ও ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত এবং জিহ্বা পরিষ্কার করা উচিত। এরপরও প্রায় ২৫ শতাংশ স্থান, মানে দুই দাঁতের মধ্যবর্তী স্থানে সাধারণ টুথব্রাশ পৌঁছায় না বলে ইন্টার ডেন্টাল ব্রাশ বা ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে।

দাঁত ব্রাশের অভ্যাস এখন গ্রামপর্যায়ে পৌঁছে গেলেও এখনো অনেকে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করেন না। ইন্টারনেটের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে অথবা ডেন্টিস্টদের কাছ থেকে ব্রাশের নিয়ম জেনে নেওয়া জরুরি। না হলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।

যাঁদের দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মুখের অতিরিক্ত শুষ্কতা, কিডনির রোগ, ক্যানসার, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শে মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।

মিষ্টি বা চিনির তৈরি খাবার খাওয়া নিয়ন্ত্রণে এনে স্বাস্থ্যবান্ধব খাবার, যেমন মৌসুমি শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, ডিম, ছোট মাছ, টক দইসহ পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।

মুখের মধ্যে বেশির ভাগ রোগে শুরুতে তেমন উপসর্গ প্রকাশ হয় না। সে কারণে যদি বছরে একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যায়, তবে যেকোনো রোগ শুরুতেই শনাক্ত হয় আর এর চিকিৎসাও সহজ ও ব্যয় আয়ত্তে থাকে।

চিকিৎসক নির্বাচনেও সচেতনতা জরুরি। কারণ, আমাদের দেশে অনুমোদিত ডেন্টাল চিকিৎসকের পাশাপাশি অগণিত ভুয়া চিকিৎসক রয়েছেন।

ডা.

মো. আসাফুজ্জোহা রাজ, মহাসচিব, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ডেন্টাল সায়েন্স (বিএফডিএস)

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ