পাহাড়ে উজাড় হচ্ছে বন, বিপাকে বননির্ভর মানুষেরা
Published: 21st, March 2025 GMT
ধনঞ্জয় ত্রিপুরা (৬৫) আশ্বাস পেয়েছিলেন, তাঁর নামে জমি দেওয়া হবে। সেই জমিতে বসতবাড়ির পাশাপাশি থাকবে রাবারবাগান। সেই বাগান হয়েছিলও। সে প্রায় ৪৫ বছর আগের কথা। তাঁর মতো আরও অনেক পাহাড়ি জুমনির্ভর (পাহাড়ের বিশেষ ধরনের চাষাবাদ) মানুষকে এসব প্রতিশ্রুতি দিয়েই আনা হয়েছিল এই গাছবান গ্রামে। গ্রামটির অবস্থান খাগড়াছড়ি শহর থেকে ছয় কিলোমিটার উত্তরে। এ গ্রামে ত্রিপুরা ও চাকমা মিলিয়ে শতাধিক পরিবারের বসবাস।
গত শতকের আশির দশকে ধনঞ্জয়দের মতো পাহাড়ি ও বননির্ভর মানুষদের ‘পুনর্বাসন’ করা হয় ‘উচ্চভূমি বন্দোবস্তকরণ’ নামের একটি প্রকল্পের অধীন। মূল উদ্দেশ্য ছিল, রাবার চাষের মাধ্যমে এসব মানুষের আয় বাড়ানো। এ রাবারের চাষ হয়েছিল বিস্তীর্ণ প্রাকৃতিক বন উজাড় করে। প্রায় পাঁচ দশক পর প্রাকৃতিক বন এখন নাই হয়ে গেছে। রাবারগাছ নেই বললেই চলে। এ প্রকল্পে পাহাড়ের ৩৯টি গ্রামে ২ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। এসব জমিতে কাগজে–কলমে বন্দোবস্ত দেওয়ার কথা থাকলেও তা আর মেলেনি পাহাড়ি মানুষের ভাগ্যে।
প্রকল্পের প্রধান অর্থদাতা ছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এটি বাস্তবায়ন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৬ সালে, সামরিক সরকারের আমলে। পাহাড় তখন অশান্ত। স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলন করছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র শাখা শান্তি বাহিনী।
প্রকল্পটি ছিল ৫২ কোটি টাকার। এর ৯৩ শতাংশ অর্থ ছিল এডিবির ঋণ, বাকিটা বাংলাদেশ সরকারের। পাহাড় তখন নানা প্রকল্পের ‘পরীক্ষার’ স্থান। পরীক্ষাগুলো এ সময়ে এসেও অবশ্য বন্ধ হয়নি। তবে এসব পরীক্ষার গিনিপিগ হওয়া পাহাড়ি মানুষগুলো তাদের বাসস্থান থেকে উন্মূল হয়েছে, প্রথাগত বননির্ভর জীবন হারিয়েছে। ‘সাদা সোনা’ রাবারের যে লোভ দেখিয়ে তাদের আনা হয়েছিল, সেই রাবারবাগান এখন নিঃশেষ প্রায়। ধনঞ্জয় বলছিলেন, ‘লাভ তো কিছু হলো না। বনটা গেল, রাবারবাগানও গেল। আগে বন থেকে অনেক কিছু পেতাম। এখন তার সুযোগ নাই।’
পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র লড়াই চলাকালে ডেনমার্কভিত্তিক পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের ‘জীবন আমাদের নয়: বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি ও মানবাধিকার’ শীর্ষক এক মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে। সে সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার বিষয়ে এ প্রতিবেদনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। এই উচ্চভূমি বন্দোবস্তকরণ প্রকল্পের ব্যাপারে সেই কমিশনের মূল্যায়ন ছিল, ‘এসব প্রকল্প মূলত পাহাড়িদের অনেকটা স্বনির্ভর অর্থনীতির ভিত্তিকে পরনির্ভরশীল অর্থনীতিতে পরিবর্তন করার একটি কৌশল। ওই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়িদের মধ্য থেকে আসা মানুষদের একটি নির্ভরশীল শ্রমিক গোষ্ঠী তৈরির মাধ্যমে বাজারব্যবস্থার সম্প্রসারণ।’
সন্দেহ নেই, পাহাড়ে বাজার বিকশিত হয়েছে। দেশের অন্য এলাকার নিরিখে পিছিয়ে থাকলেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। তবে পাহাড় হারিয়েছে বিস্তীর্ণ ঘন বন, বহমান ঝিরি, নদী। বাঁশ ও কাঠের মতো মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদে পড়েছে বহিরাগতদের থাবা। বন লুণ্ঠনের এ প্রতিযোগিতা বন্ধ এখনো হয়নি। গত দুই দশকে (২০০২-২০২৩) পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ১০ শতাংশ বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। বননির্ভর পাহাড়ি মানুষের বনে অভিগম্যতা কমেছে ৭৫ শতাংশ। বন উজাড় এই পাহাড়িদের বিষণ্নতার চিত্র উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
এবারের আন্তর্জাতিক বন দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বন ও খাদ্য’। এ উপলক্ষে জাতিসংঘের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির স্তম্ভ হলো বন। এই বন লাখ লাখ পরিবারের আবাসস্থল। বননির্ভর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও গ্রামীণ মানুষের ফলসহ নানা খাদ্য, বীজ, মাংসের মৌলিক উৎস। তবে বন শুধু খাদ্যের এই সংস্থান করেই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে না, এটি জ্বালানিরও উৎস। বন জীববৈচিত্র্যের এক বড় আধার। মাটির পুষ্টি, কৃষির উৎকর্ষ আর জলবায়ুর নিয়ন্ত্রণে এ বনের ভূমিকা অনবদ্য।
জাতিসংঘ বলছে, বনের পানির আধার থেকে বিশ্বের মোট ৮৫ শতাংশের বেশি নগরবাসীর পানির চাহিদা মেটে। কঠিন সময়ে বন বিশ্বের অন্তত ২০ শতাংশ মানুষকে খাবারের সরবরাহ দেয়। কিন্তু এই বাস্তুতন্ত্র এখন এক জটিল অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে বলেই মনে করে জাতিসংঘ। বিশ্বে প্রতিবছর এক কোটি হেক্টর বনভূমি ধ্বংস হয়। বন সুরক্ষা এখন জরুরি। এই গ্রহ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যই বনের এই সুরক্ষা দরকার।
পাহাড়ের বন এবং বন বিনাশের কারণপার্বত্য চট্টগ্রামের ইংরেজ প্রশাসক ছিলেন আর এইচ স্নেইড হাচিনসন। তিনি প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ১৮৯০ সালে। এর ৩০ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা গঠিত হয় প্রথমবারের মতো। তাঁর বই অ্যান অ্যাকাউন্ট অব দ্য চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস–এ পাহাড়ের ‘রাজসিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের’ বর্ণনা তুলে ধরেছেন।
হাচিনসন লিখেছেন , ‘পুরো জেলা যেন ছবির মতো। পাড়া আর উপত্যকার এক মেলবন্ধন এখানে। এ পাহাড় মোড়া বিপুল সবুজে। সেখানে চলে আলো আর ছায়ার খেলা।.
সেই পাহাড়ের বনকে সেখানকার মানুষ নিজেদের সম্পদই ভাবতেন। পুরো অঞ্চলে ছিল তাদের অবাধ পদচারণ। ইচ্ছেমতো জুমে ফসল ফলাতে পারতেন। কিন্তু এ অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনের অধীন চলে আসার পরই বনের ওপর থেকে মানুষের অধিকার কমতে থাকে। পুরো পার্বত্য এলাকার আয়তন ৫ হাজার ৯৩ বর্গকিলোমিটার। পাহাড় ব্রিটিশের অধিকারে আসার পর ১৮৭৫ সালে প্রথম মাইনি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষিত হলো। এরপর একে একে সীতাপাহাড়, মাতামুহুরী, কাসালং, সাঙ্গু ও রাইংখং সংরক্ষিত বনাঞ্চল করে ফেলা হয়। পাহাড়ের অন্তত ২৪ শতাংশ বন এই সংরক্ষিত বনের মধ্যে পড়েছে। এখানে বনের মানুষের অধিকার একেবারেই সংকুচিত।
‘উন্নয়নের অভিঘাত’ব্রিটিশ আমলে পাহাড়ি বনে স্থানীয় মানুষের অধিকার সংকুচিত হলেও প্রকৃতির বিনাশ তত হয়নি। বিনাশের বড় ঘটনা ঘটে ১৯৬০–এর দশকে। কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে ১৯৬২ সালে তৈরি করা বাঁধে প্লাবিত হয় প্রায় ৬০০ কিলোমিটার এলাকা। চাকমা সার্কেলপ্রধান দেবাশীষ রায় তাঁর লেখা সাসটেইনেবল ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট ইন দ্য চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস বইতে লিখেছেন, ‘পাহাড়ি মানুষের ওপর মনুষ্য-সৃষ্টি সবচেয়ে বড় দুর্যোগ ছিল কাপ্তাই ড্যাম। এতে লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। ৫৪ হাজার একর সেরা চাষের জমি পানিতে তলিয়ে যায়। ৭০ বর্গকিলোমিটারের সংরক্ষিত বনও নষ্ট হয়।’
পাহাড়ে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় ১৯৫৩ সাল থেকে চালু হয় কর্ণফুলী পেপার মিল। এর প্রধান কাঁচামাল ছিল পাহাড়ের বনের বাঁশ। পরে এ কারখানার কাঁচামালের জোগান দিতে পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় সৃষ্টি হয় নরম কাঠের (পাল্পউড) বনবাগান। প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার একর জমিতে এ চাষ হয়। এর মধ্যে ১৭ হাজার একরের সংরক্ষিত বনও ছিল।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ নিয়ে লেখা দ্য চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস: ম্যান-নেচার নেক্সাস টর্ন শীর্ষক বইয়ে পরিবেশবিদ ফিলিপ গাইন লিখেছেন, ‘এই পাল্পউড বা নরম কাঠের চাষ একধরনের মনোকালচার। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশগত এবং সামাজিক উদ্বেগের বিষয় হলো এই মনোকালচার।’
পার্বত্য চট্টগ্রামকে বলা হয় পৃথিবীর কয়েকটি বহু বৈচিত্র্যের বড় এলাকার (মেগা ডাইভারসিটি হটস্পট) একটি। এ বৈচিত্র্য তার বৃক্ষে, প্রাণীতে, নদীতে, এমনকি মানুষে। এখানে থাকা ১১টি জাতিসত্তার মানুষ সেই বৈচিত্র্য ধারণ করে। সেই বৈচিত্র্য নষ্ট করে ফেলা হয় ১৯৮০–এর দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় উৎসাহে বাঙালি পুনর্বাসনে। প্রায় চার লাখ বাঙালিকে সে সময় পাহাড়ে নিয়ে যায় সরকার। দেবাশীষ রায় বলেন, ‘এ পাহাড়, এ ঝিরি পুনর্বাসিত মানুষদের কাছে অপরিচিত। এভাবে জোর করে অভিবাসন পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বড় অভিঘাত তৈরি করেছে।’
বন বিনাশ বন্ধ হয়নি, কমেছে বনবাসীর অভিগম্যতা
পাহাড়ের সাম্প্রতিক বন বিনাশের চিত্র উঠে এসেছে ‘ভ্যালুয়েশন অব ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস ফ্রম বিলেজ কমন ফরেস্টস ইন চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস’ শীর্ষক এক গবেষণায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি সায়েন্স বিভাগের অধীন এই পিএইচডি গবেষণা করেছেন মংহ্লা ম্যান্ট। তাঁর গবেষণায় এসেছে, তিন জেলার ২০০২ থেকে ২০২৩ সালের বন বিনাশের চিত্রে দেখা গেছে, এ সময় তিন পার্বত্য জেলার ৬ হাজার ৯৭০ হেক্টর প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়ে গেছে। এর মধ্যে রাঙামাটিতে ১০ শতাংশ, খাগড়াছড়ির ৭ দশমিক ৩ শতাংশ এবং বান্দরবানে ১২ শতাংশ বন ধ্বংস হয়েছে। বন বিনাশের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বনবাসী মানুষ। গবেষণায় বলা হয়েছে, পাহাড়ের বনে পাহাড়ি মানুষের অভিগম্যতা গত দুই দশকে অন্তত ৭৫ শতাংশ কমেছে।
কিসের ভিত্তিতে এই অভিগম্যতার মূল্যায়ন হলোমংহ্লা ম্যান্ট বলেছিলেন, দৈনিক ও সাপ্তাহিক খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ, মাসিক জ্বালানি সংগ্রহ, ঝিরি থেকে মাছ ও শামুকসহ নানা খাদ্য সংগ্রহ, পশুচারণ এবং বিভিন্ন ঋতুতে পাহাড়িদের ঔষধি গাছের সংগ্রহের ধারা দেখে অভিগম্যতা কমে যাওয়ার এ চিত্র পাওয়া গেছে।
নগরায়ণ দ্রুত হচ্ছে। পাল্টাচ্ছে পাহাড়ি জীবনধরন। বাণিজ্যিক ধারার চাষাবাদও এখন পাহাড়ে বিরল নয়। কিন্তু এসবের পরও সবজি, মাছসহ নানা খাদ্যের জন্য পাহাড়ের মানুষদের বড় অংশ এখনো বনের ওপর নির্ভর করেন।
গবেষক অরুনেন্দু ত্রিপুরা যেমনটা বলছিলেন, বাড়ির পাশে সবজির আবাদের সংস্কৃতি পাহাড়ে নেই। সবজির আবাদের চেষ্টা করে অনেক এনজিও সফল হয়নি। পাহাড়ি মানুষের খাদ্যের জন্য এ বননির্ভরতা তার সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু সে নির্ভরতা কমছে বা কমাতে বাধ্য করা হচ্ছে।
বনের বিপন্নতার প্রভাব পানিসম্পদেগত শতকের ১৯৭০–এর দশকে রাঙামাটি থেকে লঞ্চে করে জেলা বাঘাইছড়ি সদর পর্যন্ত যাওয়া যেত সারা বছর। এখন বছরের অর্ধেক সময় সদর পর্যন্ত তো দূরের কথা, নদীর অর্ধেকটা পথই যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, কাসালং নদের প্রবাহ অনেকটাই কমে গেছে।
এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীর প্রবাহে বনের প্রভাব আছে। বন থাকলে থাকে ঝরনা বা ঝিরি, সেখানে পানির প্রবাহ থাকে। বন পানির সংরক্ষণাগার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু কাচালং সংরক্ষিত বন হওয়ার পরও এর বড় অংশ এখন বিরান। বনের গাছ যেমন নেই, নেই পাহাড়ের বনের বড় উপাদান বাঁশ। এতে শুধু বন বা নদীর মতো প্রাকৃতিক সম্পদই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। পানির কষ্ট, পেশা হারানোর মতো সমস্যায় পড়েছেন বনবাসী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা।
পানিবিশেষজ্ঞ ম ইনামুল হক বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন এভাবে, ‘বনের গাছগুলো ছাতার মতো দাঁড়িয়ে মাটিতে সঞ্চিত পানিকে আগলে রাখে। সেই ছাতা উবে গেলে পানির সঞ্চয় কম হয়। পাহাড়ে এই জটিল ও সূক্ষ্ম প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় ছেদ পড়েছে বড় আকারে।’
২০০৮ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে পাহাড়ের ৭১টি ঝরনার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটার এইড। তাদের পর্যবেক্ষণ, তিনটি বাদে সব কটির প্রবাহ কমে গেছে। প্রতিবছর গ্রীষ্ম মৌসুমে সুপেয় পানির জন্য পাহাড়ি মানুষের কষ্ট বাড়ে। মাটি খুঁড়ে পানি সংগ্রহ করে সেই পানি দূর গ্রামে নিয়ে যাচ্ছেন পাহাড়ি নারী, এমন দৃশ্য পাহাড়ে খুবই সাধারণ।
‘আর এদ নয় সি-দিন’সময়ের আবর্তে মানুষ গ্রাম থেকে শহরমুখী হয়। কৃষি থেকে শিল্পের দিকে ঝুঁকে পড়ে উন্নয়নের গতিধারা। সব সমাজের মতো পাহাড়েও আসছে পরিবর্তন। পাহাড়ের বনের স্থানে এখন ফলবাগানের বিস্তার ঘটছে। তিন জেলায় প্রায় ৪০ হাজার ছোট-বড় উদ্যোক্তা ফলের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা পাহাড়ি এলাকায় আম, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে, আনারস, কমলাসহ ৪৪ জাতের ফল উৎপাদন করছেন। দেশের মোট ফলের চাহিদার ১৫ শতাংশ মেটাচ্ছে পাহাড়। পাহাড়ে নগরায়ণও হচ্ছে যথেষ্ট।
কিন্তু এ উন্নয়ন যখন বন, ঝিরি, পাহাড়ের বিনাশ করে হয়, তখন তা কতটুকু টেকসই হতে পারে? প্রকৃতি বিনাশের অভিঘাত পাহাড়ে কম নয়। ২০১৭ সালের জুন মাসে মাত্র তিন দিনের বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে প্রাণ যায় ১২০ জনের। নানা উন্নয়ন উদ্যোগ, জোর করে জনসংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তনের ভোগান্তি বেশি পোহাতে হয় পাহাড়ের মানুষদেরই, ক্ষতিকর উন্নয়ন উদ্যোগে যাঁদের অবদান অনেকটাই কম।
বর্ণিল দিন, জুমের জীবনে ফিরে যাওয়ার আকুতি ফুটে উঠেছে পাহাড়ের কবি রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যার কবিতায়। তিনি লিখছেন, ‘পুদি পজ্জন বার মাজ, জাদি মেলাত রেইঙ নাজ, জুম্মো বাঝি খেংখরং, আর ন-শুনিবং ই-দেজত’ (পুঁথি কিসসা বারো মাস, চৈত্র মেলায় উল্লাস নাচ, জুমিয়া বাঁশি বেঙবাজনা, আর শুনতে পাব না এ দেশে)। কবিতার শিরোনাম ‘আর এদ নয় সি-দিন’, অর্থাৎ আর আসবে না সেদিন। পাহাড়ের প্রকৃতি সেই রূপে আর ফিরবে না, এটাও এক বাস্তবতা।
পার্থ শঙ্কর সাহা সহকারী বার্তা সম্পাদক, প্রথম আলো
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ ল ট র য ক টস বন ব ন শ র প হ ড় র বন প রকল প র র প রব হ ধ ব স হয় ন র ভর হয় ছ ল র জন য পর ব শ ত ক বন র দশক র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনে কর্মকর্তা নিয়োগ, বেতন ৫১,০০০ টাকা
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ৩টি পদে জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। স্থায়ী ভিত্তিতে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। আবেদনের শেষ সময় ১৫ নভেম্বর ২০২৫।
পদের নাম ও বিবরণ
১. সহকারী ব্যবস্থাপক (সিস্টেম)
পদসংখ্যা: ০১
২. সহকারী ব্যবস্থাপক (সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন)
পদসংখ্যা: ০১
৩. সহকারী ব্যবস্থাপক (জিআইএস অ্যান্ড রিমোট সেন্সিং)
পদসংখ্যা: ০১
বেতন-ভাতা (সব পদের জন্য): ৫১,০০০ টাকা।
বয়সসীমা (সব পদের জন্য): সর্বোচ্চ ৩২ বছর।
আবেদনের শেষ সময়
১৫ নভেম্বর ২০২৫
আগ্রহী প্রার্থীগণকে উল্লিখিত পদগুলোর Terms of Reference (ToR) দেখার জন্য পিকেএসএফ ওয়েবসাইট ভিজিট করার অনুরোধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন৪৮তম বিশেষ বিসিএসে আর পদ বাড়ানোর সুযোগ নেই৩০ অক্টোবর ২০২৫আরও পড়ুন১০ ব্যাংক ও ১ আর্থিক প্রতিষ্ঠান নেবে ১৮৮০ অফিসার, ফি ২০০৩০ অক্টোবর ২০২৫