Samakal:
2025-08-01@04:35:31 GMT

হামার কুমড়ায় রোজা, কুমড়ায় ঈদ

Published: 21st, March 2025 GMT

হামার কুমড়ায় রোজা, কুমড়ায় ঈদ

রংপুরের গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর বাজারের পূর্বদিকে বিজয় বাঁধ। তিস্তার এই বাঁধের ওপর নদীভাঙনে নিঃস্ব হওয়া বেশ কিছু ভূমিহীন পরিবারের বাস। এই চরে মিষ্টিকুমড়া চাষে কর্মসংস্থান হয়েছে এখানকার ব্যবসায়ী, শ্রমিক-মজুর, ভ্যানচালকসহ চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের। চরের উৎপাদিত কুমড়া পাল্টে দিয়েছে স্থানীয় অর্থনীতির চিত্র।
পূর্ব প্রান্তে গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক চরের সীমানার বাসিন্দা জহিরন বেওয়া (৬০) গতকাল শুক্রবার দুপুরে বাঁধে বসেই বঁটিতে মিষ্টিকুমড়া ফালি করছিলেন। তাঁর হাতের কাছে বস্তায় ছিল আরও বেশ কয়েকটি কুমড়া। গাঢ় হলুদ রঙের কুমড়ার ফালি দেখে জিজ্ঞেস করলে জানান, সিদ্ধ করে মিষ্টি কুমড়ার ফালি দিয়ে তিনি ইফতার করবেন। শুধু তিনিই নন, চরাঞ্চলের অভাবি পরিবারগুলো সহজে হাতের কাছে পাওয়ায় প্রথম রোজা থেকেই সিদ্ধ মিষ্টিকুমড়ার ফালি দিয়ে ইফতার করছেন। ভাতের সঙ্গে তরকারিতেও প্রতিদিন সবজি হিসেবে থাকছে এই মিষ্টিকুমড়া।
গল্পের ফাঁকে মুখে এক ফালি হাসি দিয়ে জহিরন বেওয়া বলেন, ‘এবার হামার কুমড়ায় রোজা, কুমড়ায় ঈদ। সংসারে অভাব থাকলেও এই কুমড়ার তকনে (জন্য) ভালো আচি। কুমড়ায় হামাক ভালো থুইচে।’ কুমড়া বিক্রির টাকায় রোজা ও ঈদ পার করবেন– স্বস্তির এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তিনি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে রোজার শুরুতে চরাঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের সংসারে যখন চলছিল হাজারো টানাপোড়েন, ঠিক তখনই তিস্তার চরে শীতকালে আবাদ করা মিষ্টিকুমড়া তাদের ঘরে ওঠে। যাকে ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে ব্যবসায়ী, শ্রমিক-মজুর, ভ্যানচালকসহ চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের। চরের উৎপাদিত কুমড়া পাল্টে দিয়েছে এলাকার অর্থনীতির চিত্র। আলুতে লোকসান হলেও বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় চাষকৃত মিষ্টিকুমড়ায় রোজা-ঈদ পার করার স্বপ্ন দেখছেন এবার তিস্তার চরের মানুষ।
সরেজমিন গঙ্গাচড়ার গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক চর, রাজবল্লভ, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর, শংকরদহ, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, মটুকপুরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে দেখা যায়, ছোট ছোট ঘরে থরে থরে সাজানো রয়েছে মিষ্টিকুমড়া। বর্তমানে কুমড়া বিক্রির টাকায় সংসার চলছে অভাবি পরিবারগুলোর। পাইকারি হিসাবে প্রতি কেজি ১২ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কুমড়ার বাম্পার ফলনে স্থানীয়রা তিস্তার চরকে এখন ‘সাদা সোনার দেশ’ বলে থাকেন। অক্টোবরের প্রথম দিকে লাগানো এই কুমড়া মার্চ-এপ্রিল মাসে কৃষকদের ঘরে ওঠে। চরের ভূমিহীন পরিবারগুলো চাহিদা মেটাচ্ছেন কুমড়া চাষে। কয়েক বছর ধরে চরের আবাদ করা মিষ্টিকুমড়া দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রপ্তানি হচ্ছে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে।
চর ইছলী এলাকার বাসিন্দা রহমত আলী তিন বিঘা জমিতে কুমড়ার আবাদ করেছেন। এ পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছেন। ঘরে থাকা কুমড়া আরও ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন।
বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেল, নারী-পুরুষ মিলে শ্রমিকরা ক্ষেত থেকে কুমড়া তুলছেন। বাছাই করে তা ট্রাকে তোলা হয়। এ কাজে শ্রমিকরা প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে পান। কুমড়া আনা-নেওয়ার কাজে ভ্যান ও ঘোড়ার গাড়িরও কদর বেড়েছে। 
মহিপুর সেতুর উত্তর প্রান্তে প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে প্রতিটি দোকানের সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে মিষ্টিকুমড়া। খুচরা ব্যবসায়ীসহ পথচারীরা সেখান থেকে কুমড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখান থেকেই প্যাকেট হয়ে ট্রাকে সরাসরি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে কুমড়া।
গঙ্গাচড়ার বিভিন্ন চরে এ বছর ১২০ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার তিস্তার চরের প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়ার আবাদ হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম

উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।

এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে  ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ