পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় মাঠা তৈরির ইতিহাস দীর্ঘদিনের। স্থানীয়দের কাছে ঘোল বা মাঠা একটি অপরিহার্য পণ্য। তাই এই রোজায় মাঠার চাহিদা তুঙ্গে। সরেজমিন সাঁথিয়ার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন দুপুর থেকে সাঁথিয়া বাজারের মোড়ে মোড়ে বিক্রি করা হচ্ছে ঘোল ও মাঠা। দুপুর ১২টা থেকেই মাঠার অস্থায়ী দোকান থেকে ক্রেতাদের মাঠা কিনতে দেখা যায়। 
মাঠা মূলত দুধ থেকে তৈরি করা বিশেষ ধরনের ঘোল। তবে সাঁথিয়া ও বেড়ার এই ঘোলের স্বাদ ও বর্ণ দেশের অন্য এলাকার চেয়ে আলাদা। এই মাঠা আলাদা স্বকীয়তায় ভরা এবং ইতোমধ্যে এটি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পানীয়।  
মাঠা তৈরিতে প্রয়োজন হয় দুধ, চিনি, লবণ, আমন্ড, পেস্তাবাদাম বাটা ও লেবু। মাঠা তৈরির জন্য আগের দিন বিকেলের মধ্যে দুধ সংগ্রহ করে জ্বাল দিয়ে দইয়ের মতো জমানো হয়। এরপর রাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে শুরু হয় মাঠা তৈরির মূল প্রক্রিয়া। জমানো দুধ বড় পাত্রে রেখে তা ভালোভাবে ব্লেন্ড করতে হয়। মাঠা তৈরির কারিগর বা ঘোষেরা তা নিজস্ব পদ্ধতিতে ব্লেন্ড করে থাকেন। স্থানীয়ভাবে একে ‘টানা’ বলা হয়। জমানো দুধ টানার কাজটি অত্যন্ত পরিশ্রমের। এভাবে সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে মাঠা তৈরির কাজ শেষ হয়। দুপুর ১২টার মধ্যে সেই মাঠা বাজারে নিয়ে আসা হয়।
রমজান মাসের শুরুতে বেড়ার ঐতিহ্যবাহী বিশু ঘোষের মাঠা প্রতি লিটার ৭০ টাকা, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সলপ গ্রামের আব্দুল খালেক খান ও সাদেক খানের মাঠা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। দুধের দাম বেড়ে যাওয়াতেই মাঠার দাম বেড়েছে বলে উৎপাদনকারীরা জানান।
বেড়া পৌরসভার বনগ্রাম মহল্লার বিশু ঘোষ প্রায় ৫২ বছর ধরে মাঠা বিক্রি করে আসছেন। তাঁর তৈরি মাঠার সুনাম রয়েছে বেড়া, সাঁথিয়াসহ আশপাশের উপজেলাগুলোয়। সাধারণত বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টার দিকে তিনি প্রতিদিন প্রায় ১০ মণ মাঠা নিয়ে বাজারে বসার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় সারি ধরে ক্রেতার মাঠা কেনা। দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায় তাঁর সব মাঠা। রমজানের আগে তাঁর মাঠা ৬০ টাকা প্রতি লিটার বিক্রি হলেও, এখন তিনি ৭০ টাকায় প্রতি লিটার বিক্রি করছেন।
বিশু ঘোষ বলেন, ‘রমজানের আগে গরুর দুধের দাম ৬০ টাকা থাকলেও এখন ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে মাঠার দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আমার মাঠা সবাই পছন্দ করেন। এ এলাকায় আমিই মাঠাকে এত জনপ্রিয় করতে পেরেছি বলে আমার বিশ্বাস। এখন অনেকেই মাঠা বানিয়ে বিক্রি করছেন।’
সাঁথিয়া-বেড়ার পাশের উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ গ্রামে তৈরি হওয়া মাঠারও বেশ সুনাম রয়েছে। অনেকেই সেখান থেকে এই মাঠা এনে বিক্রি করেন। সাঁথিয়া বাজারে সলপের মাঠা বিক্রেতা সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘দুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদনকারী মাঠার দাম বাড়িয়েছেন। সাঁথিয়া ও বেড়ার মাঠার চাহিদার পাশাপাশি রয়েছে সলপের মাঠার চাহিদা। উল্লাপাড়ার সলপের মাঠা ১২০ টাকা এবং ১০০ টাকা কেজিতে ঘোল বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮ মণ মাঠা বিক্রি করছি।’
সাঁথিয়া বাজারের আরেক মাঠা বিক্রেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মুদি দোকানের পাশাপাশি প্রতিদিন প্রায় তিন মণ মাঠা বিক্রি করি; যা রমজান মাসে বাড়তি আয় করতে সহায়ক হয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেকেই মাঠা ও ঘোল 
বিক্রি করছেন।’
সাঁথিয়ার জোড়গাছা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন উল্লাস বলেন, ‘রোজা থাকার পর আমাদের শরীরে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। ঘোল ও মাঠা পানে অনেকটাই ভালো লাগে। পরিবারের সবাই অন্য সময় না খেলেও, এ রমজানে ঘোল ও মাঠা পান করেন। ইফতারে শীতল মাঠা দিয়ে বানানো শরবতের স্পর্শ ছাড়া মনই ভরে না।’
সাঁথিয়ার শালঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম রিপন জানান, মাঠার সঙ্গে লেবু ও বরফের কুচি মিশিয়ে ইফতারে শরবত বানানো সাঁথিয়া ও বেড়ার পুরোনো ঐতিহ্য। এখন ইফতারে কিংবা অন্য আয়োজনে মাঠা একটি ঐতিহ্যবাহী উপকরণ। এই এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাঠা এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে।’ 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'

সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'

আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।

থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।

জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।

অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন।  আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।

মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ