Samakal:
2025-06-16@06:16:36 GMT

ওমর খৈয়াম রুবাইয়াতের খোঁজে

Published: 21st, March 2025 GMT

ওমর খৈয়াম রুবাইয়াতের খোঁজে

‘নগদ যা পাও হাত পেতে নাও/বাকির খাতা শূন্য থাক/দূরের বাদ্য লাভ কি শুনে/মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক।’ চমৎকার চরণগুলো ওমর খৈয়াম রুবাইয়ের অনুবাদ। ‘রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম’ পারস্য সাহিত্যের এক সমৃদ্ধ নাম। রুবাই বলতে বোঝায় চার লাইনের কবিতা বিশেষ। এর বহুবচন হলো রুবাইয়াত। একটিমাত্র ভাবকে হৃদয়গ্রাহী করে ফুটিয়ে তোলা হয় চার চরণের মধ্যে। এর অন্ত্যমিলে লক্ষ্য করা যায় বিশেষ বৈশিষ্ট্য। প্রেম, দ্রোহ, আনন্দ, বেদনা, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে রুবাইয়ের ছত্রে ছত্রে। পণ্ডিতরা এগুলোকে ওমরের দার্শনিক সত্তার প্রকাশ বলেই মানেন। হাজার বছর আগের মানুষ ওমর খৈয়ামের জন্ম ইরানের খোরাসানের নিশাপুর শহরে। পুরো নাম গিয়াস উদ্দিন আবুল ফাতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল খৈয়াম। পরিচিতি পেয়েছেন ওমর খৈয়াম নামে। জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন ও গণিতশাস্ত্রের পাশাপাশি নাম লিখিয়েছেন সাহিত্যের খাতায়। উপমা, রূপক আর ভাবগাম্ভীর্যের কবিতাগুলোকে করেছেন ক্ষুরধার।  
খৈয়ামের এই চৌপদি কবিতা পাঠক মহলে বেশ সমাদৃত। দুষ্প্রাপ্য অনুবাদগুলো বিক্রি হয় চড়া দামে। অনেকের কাছেই রুবাইয়াত সংগ্রহ দারুণ শখের বিষয়। তেমনই এক সংগ্রাহক ইউসুফ আলী সরকার। দীর্ঘ ২০ বছর থেকে খোঁজে ফিরছেন ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াত। কোথাও ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াতের সন্ধান পেলে সংগ্রহ করার জন্য ওঠেপড়ে লাগেন। একেক করে সংগ্রহ করছেন ৪৯টি বাংলা এবং ২০টি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদকৃত রুবাইয়াত; যার বেশির ভাগই বর্তমানে দুর্লভ। ইউসুফ আলী সরকারের জন্ম ১৯৮৬ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার আবুদিয়া গ্রামে। তাঁর বাবা তারিকুল ইসলাম ও মা বীণা বেগম। ঢাকা কলেজ থেকে ভূগোল বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে একটি ব্যাংকে কর্মরত। 
বইপাড়ায় ইউসুফ আলী সরকারের বেশ নামডাক। পুরোনো বই বিক্রেতা ও পাঠকদের কাছে তিনি পরিচিত মুখ। ইউসুফ আলী সরকার বলেন, দাদা হবিবর রহমান ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বই পড়ার শুরুটা হয় স্কুলশিক্ষক এই দাদার হাত ধরেই। শৈশবেই পেয়ে বসে বই সংগ্রহের নেশা। একেক করে প্রায় সাড়ে চার হাজার বই নিয়ে নিজবাড়িতে গড়ে তুলেছেন একটি ব্যক্তিগত পাঠাগার। সংগ্রহের বেশির ভাগ বই দুষ্প্রাপ্য। বাড়ির একটি কক্ষে কয়েকটি আলমারিতে স্তরে স্তরে সাজানো পুরোনো বইপত্র। মনে হয় যেন এক প্রাচীন গ্রন্থশালার পুঁথিঘর। বাতাসে পুরোনো কাগজের গন্ধ। ২০০৫ কি ২০০৬ সাল। তখন টিউশনির টাকায় বই সংগ্রহ করেন ইউসুফ। নীলক্ষেতের দুর্লভ একটি বই ২ হাজার টাকা দাম হাঁকলে তিনি রক্ত বিক্রি করে টাকা নিয়ে ফিরে এসে দেখেন বইটি নেই। তবে বই সংগ্রহের শখ শিকেয় ওঠেনি মোটেও। রুবাইয়াত সংগ্রহ শুরু করেন ২০০৪ সাল থেকে। তাঁর কথায়, ‘রুবাইয়াতগুলোর তাৎপর্য অনেক গভীর। প্রতিটি রুবাইয়ের সঙ্গে জীবনের কোনো না মিল খুঁজে পাওয়া যায়। রুবাইয়ের সঙ্গে মিল রেখে আঁকা ছবি ও অলংকরণ বইগুলোকে বিশেষ মাত্রায় রূপ দিয়েছে। ১৯০০ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে যেসব বই ছাপা হয়েছে, সেগুলো আকারে বেশ ছোট এবং অলংকরণ খুব আকর্ষণীয়। বইয়ের জগতে এসব অমর সৃষ্টি। তাই এগুলো সংগ্রাহকদের সংগ্রহের প্রথম তালিকায় থাকে।’
ইউসুফ আলী সরকারের ব্যক্তিগত সংগ্রহে ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াতের যেসব বাংলা অনুবাদ রয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য লেখক হলেন– পণ্ডিত শ্রী শ্যামাচরণ কবিরত্ন, নরেন্দ্র দেব, কান্তি চন্দ্র ঘোষ, ড.

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সুরেন রায়, হিতেন্দ্র মোহন বসু, সতীশচন্দ্র মিত্র, হেমেন্দ্র কুমার রায়, প্রিয়নাথ সেন, শ্যামাপদ চক্রবর্তী, বিজয় কৃষ্ণ ঘোষ, বাহু বলিন্দ্র, বিমল ঘোষ, সিকানদার আবু জাফর, কাজী নজরুল ইসলাম, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল চন্দ্র দত্ত, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, কানাই লাল নাথ, নূরজাহান বেগম প্রমুখ। কেবল রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম নামে নয়; ওমরগীতি, সুরা সাকি, ওমর প্রসাদ, ওমর মজলিশ বিভিন্ন নামে এই রুবাইগুলো অনুবাদ করা হয়েছে। 
ইউসুফের জীবনে ওমর খৈয়াম গভীর প্রভাব বিস্তার করেছেন। ইউসুফ নিজেও রুবাই লিখেছেন। শোনালেন গভীর জীবনবোধ নিয়ে লেখা একটি রুবাই– ‘হয়তো তোমাদের দিয়েছি কষ্ট, শত সে মনে ব্যথা।/দেখিবে যে দিন দিবা-রাত্রি জেগেও, কইব না আর কথা।/নিশ্চুপ মনে চলিব একাকী অনাগত সে পথে।/সন্ধ্যা তারার সিক্ত আলোতে ভিজাই নয়ন রথে।’
‘বঙ্গীয় ভাষায় ওমর খৈয়াম’ নামে একটি বই প্রকাশের আগ্রহ এবং ভবিষ্যতে পাঠাগার ও ডিজিটাল আর্কাইভে তাঁর সংগ্রহ উন্মুক্ত করা কথা জানান। যেখানে ওমর অনুরাগীরা পাবেন প্রিয়ার বিনোদ বেণীর ঠাট।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ওমর খ য় ম র অন ব দ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ