অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বহিষ্কার করা নিয়ে দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে ব্যাপক অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শিন বেতের প্রধানকে বৃহস্পতিবার মন্ত্রীসভার মাধ্যমে বহিষ্কার করেছেন। তবে ইসরায়েলের হাইকোর্ট আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করেছে। তা সত্ত্বেও নেতানিয়াহু জোরপূর্বক এটি কার্যকরের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এমন সময় দখলদার ইসরায়েলের শ্রমিক ইউনিয়ন হিসতাদ্রুতের প্রধান আরমোন বার-ডেভিড হুমকি দিয়েছেন, যদি নেতানিয়াহুর সরকার আদালতের আদেশ অমান্য করে এটি কার্যকর করে তাহলে তিনি ‘বসে’ থাকবেন না। মূলত ইসরায়েলজুড়ে ধর্মঘটের ইঙ্গিত দিয়েছেন আরমোন।

তিনি বলেন, আমি আশা করি ইসরায়েলি সরকার আদালতের প্রত্যেকটি নির্দেশ মানবে। যেমনটা সরকার তার নাগরিকদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে। হিসতাদ্রুত, অন্যান্য সংগঠন এবং ইসরায়েল আইনের (দেশ)। সরকার আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নৈরাজ্যে পতিত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে আছি। আমি ইসরায়েলি সমাজ ধ্বংস হতে দেব না। ইসরায়েলি সরকার আদালতের নির্দেশ মানতে চায় না, এটি অগ্রহণযোগ্য।

নেতানিয়াহুর প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের এ নেতা বলেছেন, সরকার যেন সীমা অতিক্রম না করে।

এরআগে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহারন বারাক বলেন, শিন বেতের প্রধান এবং অ্যাটর্নি জেনারেলকে বহিষ্কারের মাধ্যমে নেতানিয়াহুর সরকার ইসরায়েলে গৃহযুদ্ধ ডেকে আনছেন। তার এ মন্তব্যের পর যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু শুক্রবার একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, কোনো গৃহযুদ্ধ বাধবে না। ইসরায়েল হলো আইন ও শাসনের (দেশ)। আর ইসরায়েলি সরকারই সিদ্ধান্ত নেয় শিন বেতের প্রধান কে হবেন।

এদিকে শিন বেতের প্রধানকে বহিষ্কার করা নিয়ে সাধারণ ইসরায়েলিরা ব্যাপক বিক্ষোভ করছেন। তারা বলছেন, নেতানিয়াহু স্বৈরশাসকে পরিণত হয়েছেন। এ কারণে বিরোধী মতের রোনেন বারকে তিনি বহিষ্কার করছেন। যেন কেউ তার কাজে বাধা না দিতে পারে।

সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ইসর য় ল ইসর য় ল র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভূমি দখলদার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং গ্রামে কোল জনগোষ্ঠীর পাঁচটি পরিবারকে যেভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা খুবই অমানবিক। যে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের ঘরবাড়ি একেবারে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই উচ্ছেদ কার্যক্রমে আইনি আদেশ পালন করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মানবিকতার প্রতিটি শর্তকে এক্সকাভেটরের আঘাতে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমি সংরক্ষণের জন্য তাদের জমি বিক্রি বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। অভিযোগ ওঠে, সেই প্রক্রিয়া এড়াতে দখলদার চক্র জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। উচ্ছেদের শিকার কোল পরিবারের সদস্যদের দাবি, এই জমির আসল মালিক ছিলেন তাঁদেরই ‘জাত-ভাই’। অথচ তাঁদের হিন্দু সাজিয়ে জাল দলিল তৈরির মাধ্যমে এই জমির মালিকানা হাতিয়ে নিয়েছে ভূমি দখলদার চক্র। এরপর গরিব কোল পরিবারগুলো যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পারায় আদালতের একতরফা রায় যায় দখলদার চক্রের পক্ষে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারগুলোকে গত সোমবার উচ্ছেদ করা হয়।

কয়েক দশক ধরে বসবাস করে আসা পরিবারগুলো ভিটা ছাড়তে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় চেয়েও পায়নি। কিন্তু উচ্ছেদকারী দল, আদালতের প্রতিনিধি ও পুলিশের উপস্থিতিতে সেই মানবিক আবেদন উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে গরু বিক্রির অর্থ, আসবাব, এমনকি রান্না করা খাবারও চাপা পড়েছে মাটির নিচে। পরবর্তী সময়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে পরিবারগুলো বাঁশঝাড়ের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

আদালত প্রতিনিধির বক্তব্য অনুযায়ী, বাদীপক্ষ সমঝোতায় রাজি হয়নি। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে উচ্ছেদকারী দলের নৈতিক দায়িত্ব ছিল কেবল দখল বুঝিয়ে দেওয়া নয়, বরং মানবিক বিপর্যয় এড়ানো। একটি গরিব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবারকে অভুক্ত অবস্থায় মশার কামড় খেতে বাঁশঝাড়ের নিচে ফেলে আসা কোনোভাবেই সভ্য সমাজের আইন প্রয়োগ হতে পারে না।

উচ্ছেদের দুই দিন পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, এই উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে তাঁকে জানানোই হয়নি। ফলে এখানে আইনি আদেশের স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক সমন্বয়ের অভাব নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। কেন স্থানীয় প্রশাসনকে এ উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে অন্ধকারে রাখা হলো? উপজেলা প্রশাসন ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে চাল ও অল্প অর্থসহায়তা দিয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাসও দিয়েছে। কিন্তু সেটি তো সময়সাপেক্ষ। পরিবারগুলো নারী ও শিশুদের নিয়ে এখন কোথায় যাবে?

সমতলের ভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ভূমি সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আইনকে অপব্যবহার করে যে চক্র পরিবারগুলোকে উদ্বাস্তু করে দিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে গোটা বিষয়টি তদন্ত করা হোক। আমরা আশা করব, কোল পরিবারগুলোকে তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাম্প কি সত্যি ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করতে চান
  • ভূমি দখলদার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন