মোদি সরকারের ‘একতরফা’ আসন পুনর্বিন্যাস রুখতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক স্ট্যালিনের
Published: 22nd, March 2025 GMT
জাতীয় রাজনীতিতে দাক্ষিণাত্যের কণ্ঠরোধ রুখতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম স্ট্যালিন। তিনি বলেন, লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাসের অপচেষ্টা এক হয়ে রুখতে না পারলে জাতীয় রাজনীতিতে গোটা দাক্ষিণাত্য অপাঙ্ক্তেয় হয়ে যাবে।
স্রেফ জনসংখ্যার নিরিখে আসন পুনর্বিন্যাস রুখতে তামিলনাড়ুতে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে স্ট্যালিন এক ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’ (জেএসি) গঠন করেছিলেন। আজ শনিবার চেন্নাইয়ে জেএসির প্রথম বৈঠক বসে। সেখানে ঠিক হয়েছে, আসন পুনর্বিন্যাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ‘একতরফা’ যা করতে চলেছে, তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পাশাপাশি আইনের সাহায্যও নেওয়া দরকার।
বৈঠকে যোগ দিতে স্ট্যালিন দক্ষিণের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পাঞ্জাব, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদেরও। ওডিশার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেডি নেতা নবীন পট্টনায়েক এবং অন্ধ্র প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএসআর কংগ্রেস নেতা জগনমোহনকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
নবীন পট্টনায়েক নিজে যোগ না দিলেও দুই শীর্ষ নেতাকে চেন্নাইয়ে পাঠান। নিজে ভার্চু৵য়ালি সম্মেলনে ভাষণ দেন। জগনমোহন রেড্ডি এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছেন। তাতে তাঁর প্রস্তাব, সংবিধান সংশোধন করে আনুপাতিক হারে সব রাজ্যের আসন বাড়ানো হোক, যাতে প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সেই চিঠি তিনি মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনকেও পাঠিয়ে দিয়েছেন।
আজ শনিবার বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তেলেঙ্গানার কংগ্রেসদলীয় মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি, কেরালার সিপিএম মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, কর্ণাটকের কংগ্রেসের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার এবং আম আদমি পার্টি শাসিত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান।
পশ্চিমবঙ্গের তৃণমুল কংগ্রেস কিন্তু দলের কাউকেই চেন্নাই পাঠায়নি। কেন পাঠায়নি, তার কোনো গ্রহণযোগ্য যুক্তিও দলের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে এই অনৈক্য বিজেপিকে উৎসাহিত করেছে। তারা মনে করে, এই বৈঠক দেশকে উত্তর–দক্ষিণে বিভাজিত করার শামিল। এই কাজ দেশের ঐক্যের পরিপন্থী।
স্ট্যালিন তাঁর ভাষণে ঐক্যের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, উত্তরের হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোর আধিপত্যবাদ কায়েমের চেষ্টা হচ্ছে। এটা রুখতে রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি আইনি লড়াইও লড়তে হবে। সে জন্য তিনি আইনজ্ঞদের এক প্যানেল গঠনের প্রস্তাব রাখেন।
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেন, মোদি সরকার কারও সঙ্গে আলোচনা না করে দক্ষিণের ঘাড়ে আসন পুনর্বিন্যাসের খাঁড়া ঝুলিয়ে দিয়েছে। বিজেপি যা করতে চলেছে, তা সাংবিধানিক বিধি ও গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।
তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি বলেন, বিজেপির ছক কার্যকর হলে জাতীয় রাজনীতিতে চিরকালের জন্য দক্ষিণের কন্ঠরোধ হয়ে যাবে।
কর্ণটকের উপমুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমার বলেন, যেকোনো মূল্যে এই অপচেষ্টা রুখতে হবে। দাক্ষিণ্যত্য অর্থনৈতিক দিক থেকে যেমন দেশকে সমৃদ্ধ করে চলেছে, তেমনই সব সময় দেশের স্বার্থ রক্ষা করেছে।
দক্ষিণের উদ্যোগে পাঞ্জাবের শামিল হওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মান। তাঁর রাজ্য থেকে শিরোমণি অকালি দলের কার্যনির্বাহী সভাপতি বলবিন্দর সিং ভুন্দের যোগ দিয়েছিলেন। আর এসেছিলেন কেরালার ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের সাধারণ সম্পাদক পিএমএ সালাম।
অন্ধ্র প্রদেশের শাসক দল তেলেগু দেশম পার্টির নেতা মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু বৈঠকে যোগ দেননি। রাজ্যে বিজেপি তাঁর শরিক, তিনি কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের শরিক।
নাইডুর মতে, দক্ষিণ যাতে বঞ্চিত না হয় প্রধানমন্ত্রী তা নিশ্চিত করবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তা জানিয়েও দিয়েছেন। তাই উত্তর–দক্ষিণে বিভাজনের রাজনীতি করা উচিত নয়। কিছু কিছু সময় দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
ভাষা শিক্ষা ও লোকসভার আসন বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে তামিলনাড়ুর উদ্যোগে দক্ষিণে বিজেপি বেশ কোণঠাসা। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) চিন্তিত। কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে আরএসএসের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বোচ্চ কমিটি অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার তিন দিনের বৈঠক গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে।
বৈঠকে সংঘের অন্যতম শীর্ষ নেতা সি আর মুকুন্দ বলেন, আসন পুনর্বিন্যাসকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র–রাজ্য ভুল–বোঝাবুঝি এড়াতে আলোচনা প্রয়োজন। ভাষাশিক্ষার প্রশ্নও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এসব নিয়ে বিজেপি যে চাপে আছে, তা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, ভুল–বোঝাবুঝি এড়াতে সংঘ তামিলনাড়ুর ঘরে ঘরে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ম খ যমন ত র র জন ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’
মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।
শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।