জাতীয় রাজনীতিতে দাক্ষিণাত্যের কণ্ঠরোধ রুখতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম স্ট্যালিন। তিনি বলেন, লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাসের অপচেষ্টা এক হয়ে রুখতে না পারলে জাতীয় রাজনীতিতে গোটা দাক্ষিণাত্য অপাঙ্‌ক্তেয় হয়ে যাবে।

স্রেফ জনসংখ্যার নিরিখে আসন পুনর্বিন্যাস রুখতে তামিলনাড়ুতে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে স্ট্যালিন এক ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’ (জেএসি) গঠন করেছিলেন। আজ শনিবার চেন্নাইয়ে জেএসির প্রথম বৈঠক বসে। সেখানে ঠিক হয়েছে, আসন পুনর্বিন্যাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ‘একতরফা’ যা করতে চলেছে, তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পাশাপাশি আইনের সাহায্যও নেওয়া দরকার।

বৈঠকে যোগ দিতে স্ট্যালিন দক্ষিণের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পাঞ্জাব, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদেরও। ওডিশার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেডি নেতা নবীন পট্টনায়েক এবং অন্ধ্র প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএসআর কংগ্রেস নেতা জগনমোহনকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

নবীন পট্টনায়েক নিজে যোগ না দিলেও দুই শীর্ষ নেতাকে চেন্নাইয়ে পাঠান। নিজে ভার্চু৵য়ালি সম্মেলনে ভাষণ দেন। জগনমোহন রেড্ডি এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছেন। তাতে তাঁর প্রস্তাব, সংবিধান সংশোধন করে আনুপাতিক হারে সব রাজ্যের আসন বাড়ানো হোক, যাতে প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সেই চিঠি তিনি মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনকেও পাঠিয়ে দিয়েছেন।

আজ শনিবার বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তেলেঙ্গানার কংগ্রেসদলীয় মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি, কেরালার সিপিএম মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, কর্ণাটকের কংগ্রেসের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার এবং আম আদমি পার্টি শাসিত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান।

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমুল কংগ্রেস কিন্তু দলের কাউকেই চেন্নাই পাঠায়নি। কেন পাঠায়নি, তার কোনো গ্রহণযোগ্য যুক্তিও দলের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে এই অনৈক্য বিজেপিকে উৎসাহিত করেছে। তারা মনে করে, এই বৈঠক দেশকে উত্তর–দক্ষিণে বিভাজিত করার শামিল। এই কাজ দেশের ঐক্যের পরিপন্থী।

স্ট্যালিন তাঁর ভাষণে ঐক্যের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, উত্তরের হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোর আধিপত্যবাদ কায়েমের চেষ্টা হচ্ছে। এটা রুখতে রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি আইনি লড়াইও লড়তে হবে। সে জন্য তিনি আইনজ্ঞদের এক প্যানেল গঠনের প্রস্তাব রাখেন।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেন, মোদি সরকার কারও সঙ্গে আলোচনা না করে দক্ষিণের ঘাড়ে আসন পুনর্বিন্যাসের খাঁড়া ঝুলিয়ে দিয়েছে। বিজেপি যা করতে চলেছে, তা সাংবিধানিক বিধি ও গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।

তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি বলেন, বিজেপির ছক কার্যকর হলে জাতীয় রাজনীতিতে চিরকালের জন্য দক্ষিণের কন্ঠরোধ হয়ে যাবে।

কর্ণটকের উপমুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমার বলেন, যেকোনো মূল্যে এই অপচেষ্টা রুখতে হবে। দাক্ষিণ্যত্য অর্থনৈতিক দিক থেকে যেমন দেশকে সমৃদ্ধ করে চলেছে, তেমনই সব সময় দেশের স্বার্থ রক্ষা করেছে।

দক্ষিণের উদ্যোগে পাঞ্জাবের শামিল হওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মান। তাঁর রাজ্য থেকে শিরোমণি অকালি দলের কার্যনির্বাহী সভাপতি বলবিন্দর সিং ভুন্দের যোগ দিয়েছিলেন। আর এসেছিলেন কেরালার ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের সাধারণ সম্পাদক পিএমএ সালাম।

অন্ধ্র প্রদেশের শাসক দল তেলেগু দেশম পার্টির নেতা মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু বৈঠকে যোগ দেননি। রাজ্যে বিজেপি তাঁর শরিক, তিনি কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের শরিক।

নাইডুর মতে, দক্ষিণ যাতে বঞ্চিত না হয় প্রধানমন্ত্রী তা নিশ্চিত করবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তা জানিয়েও দিয়েছেন। তাই উত্তর–দক্ষিণে বিভাজনের রাজনীতি করা উচিত নয়। কিছু কিছু সময় দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

ভাষা শিক্ষা ও লোকসভার আসন বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে তামিলনাড়ুর উদ্যোগে দক্ষিণে বিজেপি বেশ কোণঠাসা। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) চিন্তিত। কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে আরএসএসের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বোচ্চ কমিটি অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার তিন দিনের বৈঠক গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে।

বৈঠকে সংঘের অন্যতম শীর্ষ নেতা সি আর মুকুন্দ বলেন, আসন পুনর্বিন্যাসকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র–রাজ্য ভুল–বোঝাবুঝি এড়াতে আলোচনা প্রয়োজন। ভাষাশিক্ষার প্রশ্নও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এসব নিয়ে বিজেপি যে চাপে আছে, তা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, ভুল–বোঝাবুঝি এড়াতে সংঘ তামিলনাড়ুর ঘরে ঘরে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ম খ যমন ত র র জন ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মেয়র পদ নিয়ে ইশরাকের মামলায় ইসির ভূমিকায় এনসিপির উদ্বেগ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদ নিয়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মামলা, একতরফা রায় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কার্যক্রম ও তৎপরতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়। এতে বলা হয়, বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার বিষয়ে এনসিপি সর্বোচ্চ মনোযোগ দাবি করছে।

বিবৃতিতে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি, উল্লিখিত মামলার প্রথম তিন বছর পাঁচ মাসে ৩২টি তারিখ নির্ধারণ করা হলেও ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে মাত্র চার মাসে ১৭টি তারিখ দিয়ে মামলাটি তড়িঘড়ি করে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। কিন্তু একই সময়ে অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে এত দ্রুততার সঙ্গে তারিখ ধার্য করা হয়নি। ফলে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল শুধু এই মামলার একটি পক্ষকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে অন্যায্য সুবিধা প্রদান করেছেন কি না, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।’

এ মামলায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা রহস্যজনক ছিল দাবি করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এই মামলার বিবাদী হওয়া সত্ত্বেও মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। ফলে একতরফা রায় প্রদান করা হয়েছে। এমনকি রায়ের পরে তারা উচ্চ আদালতে প্রতিকার প্রার্থনা না করে মামলার বাদীকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘কমিশনের এমন তৎপরতা অস্বাভাবিক ও উদ্বেগজনক। এর আগেও আমরা দেখেছি নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষ আচরণ বজায় রাখার পরিবর্তে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে, যা একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দিচ্ছে বলে জনগণ মনে করে।’

এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘এই রায় ঘোষণার আগেই সংশ্লিষ্ট আইনের অধীন গত ১৯ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে পুরো মামলাটিই অকার্যকর হয়ে গেছে। এরপরও রায় ও তড়িঘড়ি করে কমিশন কর্তৃক গেজেট প্রকাশের পেছনে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা জনসাধারণের সামনে পরিষ্কার করতে হবে।’

আরও পড়ুনইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ ইসির২৭ এপ্রিল ২০২৫

২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল বাতিল এবং ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন আদালত। ইশরাক ২০২০ সালের ৩ মার্চ নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেছিলেন। রোববার রাতে তাঁকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।

আরও পড়ুনঅবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে, মেয়র পদে বসা নিয়ে বললেন উপদেষ্টা২৬ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেয়র পদ নিয়ে ইশরাকের মামলায় ইসির ভূমিকায় এনসিপির উদ্বেগ
  • ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে বেইজিং: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী