চোখের জটিল রোগ গ্লুকোমা শিশুদেরও হতে পারে, যেমন জন্মগত গ্লুকোমা। গ্লুকোমা হলে চোখের প্রেশার বা চাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি থাকে। ফলে রেটিনাল নার্ভ বা রেটিনার স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অন্ধত্ব নেমে আসে। একটি শিশু গ্লুকোমা নিয়েও জন্মগ্রহণ করতে পারে। 

এ শিশুর জন্মের পর চোখের আকার বড় হয় অন্য শিশুদের তুলনায়। খুব ডাগর চোখ ও চোখজুড়ে কালো মণির অংশ বেশি। কর্নিয়াটা মনে হবে চোখজুড়েই রয়েছে। অনেক ভারী ও ভেজাভাব থাকে। চোখ দিয়ে পানি পড়ে ও আলো সহ্য করতে পারে না। এক দিনের শিশুও আলো দেখতে পারে না। আলো দেখলেই সে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এ ছাড়া অনেক শিশুর অ্যালার্জির প্রবণতা থাকে। ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে জন্মগত নয়; অন্য কোনো কারণে যেমন স্টেরয়েডের জন্য গ্লুকোমা হতে পারে।

শিশুদের চোখের পরীক্ষা করা কঠিন, চোখের প্রেশার মাপাও কঠিন। এসব ঝামেলায় অনেক অভিভাবক চিকিৎসকের কাছে আসেন না। বাজার থেকে ওষুধ কিনে নিজেরাই ব্যবহার করেন। এটি খুব খারাপ। মনে রাখবেন, গ্লুকোমা অন্ধত্বের কারণ। 

লক্ষণ

● শিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়ে।

● সরাসরি আলোর দিকে তাকাতে পারে না। 

● চোখের মণি ঘোলা হয়ে যায়। সমস্যা বাড়তে থাকলে দেখা যায়, মণি বড় হয়ে গেছে। 

● চোখের প্রেশার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে চোখের যে নালিটা মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, সেটিতে চাপ পড়ে ও নষ্ট হয়ে যায়। এটি নষ্ট হলে স্থায়ীভাবে অন্ধত্বের দিকে চলে যায়।

শনাক্তকরণ

● চোখের ইন্ট্রাকুলার চাপ মেপে দেখা; যাকে বলে টনোমেট্রি। 

● অপটিক নার্ভ ড্যামেজ পরীক্ষা। এতে ডায়ালেটেড আই এক্সামিনেশন ও ইমাজিং টেস্ট করা হয়। 

● ভিশন লস পরীক্ষা বা ভিজুয়াল ফিল্ড টেস্ট। 

● কর্নিয়ার পুরুত্ব পরীক্ষা। একে বলে প্যাকিমেট্রি। 

● চোখের ড্রেনেজ অ্যাঙ্গেল পরীক্ষা; যাকে বলে গোনিওস্কোপি। 

চিকিৎসা

● ওষুধ প্রয়োগ কিংবা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। সাধারণত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চোখের ড্রপের মাধ্যমে বাচ্চাদের গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। 

● আরও কিছু চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে আছে লেজার থেরাপি, ফিলটারিং সার্জারি, ড্রেনেজ টিউবস, মিনিমালি ইনভ্যাসিভ গ্লুকোমা সার্জারি। 

রোগীর সমস্যা বুঝে ও পরীক্ষা করে তবেই চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন, কোন পদ্ধতিটি কার্যকর হবে। চিকিৎসা করতে অহেতুক দেরি করলে দৃষ্টি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরে অস্ত্রোপচার করেও লাভ হয় না। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করালে গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই শিশুর চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বড় মনে হলেই শিশু চক্ষু গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।


অধ্যাপক ডা.

ইফতেখার মো. মুনির, পরিচালক ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট, বাংলাদেশ আই হসপিটাল, মালিবাগ, ঢাকা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ