সংরক্ষিত টেংরাগিরি বন সংলগ্ন পায়রা নদীর ৫০ কিলোমিটারজুড়ে অবৈধ চরঘেরা (চরগড়া) জালে অবাধে চলছে মাছ নিধন। বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে মাছ শিকারে সহায়তা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে দেশি প্রজাতির মাছ ও জলজপ্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি বনাঞ্চল থেকে শুরু হয়ে পটুয়াখালীর পায়রাকুঞ্জ পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হাজার হাজার জেলে পরিবারের বসবাস। পায়রা নদীর ওপর নির্ভর তাদের জীবন ও জীবিকা। মাছ ধরতে এ নদীর দু’পারে ছোট ফাঁসের চরঘেরা জাল ব্যবহার করেন তাদের অনেকেই। জাল পাতার কাজে ব্যবহৃত খুঁটি সংগ্রহ করা হয় টেংরাগিরি ও গুলিশাখালীর সরকারি ছৈলার চরের বনাঞ্চলের গাছ কেটে। 
জাল পাতার সবচেয়ে বড় স্পট তালতলীর জয়াল ভাঙ্গা, নলবুনিয়া, নিদ্রারচর, টেংরাগিরি ও পায়রার মোহনা। আমতলী উপজেলায় গুলিশাখালী চর, আঙুলকাটা, বালিয়াতলী ও পশুরবুনিয়া। শুক্র ও শনিবার গুলিশাখালী, আঙুলকাটা, বৈঠাকাটা, লোছা, বালিয়াতলী লোছাসহ নলবুনিয়া, টেংরাগিরিসহ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ১৫০ থেকে ২০০টি চরঘেরা জাল পাতা হয়েছে। একেকটি জাল ৩০০ থেকে ৪০০ ফুট লম্বা। 
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই জাল রাতেই বেশি পাতা হয়। জোয়ারের সময় জাল নদীর এক তীরে বসানো হয় বলে এই জালের নাম চরঘেরা। জালের প্রান্তে বাঁশ বা খুঁটি থাকে, সেগুলো ছয়-সাত ইঞ্চি মাটিতে পোঁতা থাকে। ভাটার সময় জাল টেনে তোলা হয়। হালকা ও মিহি বুননের হওয়ায় একবার কোনো মাছ জালে ঢুকলে আর বের হতে পারে না। এতে আইড়, পোয়া, তপসী, ইলিশসহ নানা প্রজাতির বড় মাছের সঙ্গে ধরা পড়ছে পোনাও। বাদ যায় না জলজ প্রজাতির কোনো জীব। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলিশাখালীর এক জেলে জানান, গুলিশাখালীর জেলে নুরুল ইসলাম, ইউসুব প্যাদা, আবুল হোসেন, ইব্রাহিম প্যাদাসহ অর্ধশতাধিক জেলে রাত থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত চরঘেরা জাল পেতে মাছ শিকার করছেন। মৎস্য বিভাগ মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। জেলেরা আগে থেকেই খবর পেয়ে যায়। এসব কারণে অবৈধ জালে মাছ ধরা বন্ধ হচ্ছে না। আর নির্বিচারে শিকার করায় পায়রা নদী এখন মাছশূন্য হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, জাল পাতার খুঁটির জন্য উজাড় করা হচ্ছে ছৈলার চর ও টেংরাগিরি বনের গাছ। টেংরাগিরি বনাঞ্চলের বনরক্ষী জহিরুল হক টাকার বিনিময়ে বনের গাছ কাটতে দেওয়ার পাশাপাশি বন সংলগ্ন নদীতে জেলেদের অবৈধ চরঘেরা জাল দিয়ে মাছ শিকারের সুযোগ করে দিচ্ছেন। তবে জহিরুল হক এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বন বিভাগের তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, বনের গাছ কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
আমতলী উপজেলা বন কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, গুলিশাখালীর ছৈলার চরটি নদীর মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় সব সময় যোগাযোগ করা যায় না। গাছ কাটার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন বলেন, ছোট ফাঁসের চরঘেরা জালে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। আগে একাধিক অভিযান পরিচালনা করে জাল জব্দ করা হয়েছে। এলাকায় সোর্স লাগানো আছে। এই জাল পাতার খবর পাওয়া মাত্র আমারা সেখানে অভিযান পরিচালনা করব।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ছ ন ধন উপজ ল ত লতল

এছাড়াও পড়ুন:

আলীকদমে নিখোঁজ আরেক পর্যটকের লাশ উদ্ধার

বান্দরবানের আলীকদমে নিখোঁজ হওয়া তিন পর্যটকের মধ্যে আরেকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা লাশটি স্মৃতি আক্তারের (২৪) বলে তাঁর সঙ্গী পর্যটকেরা শনাক্ত করেছেন।

আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আলীকদম উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে তৈনখালের আমতলি ঘাট এলাকায় ভাসমান অবস্থায় লাশটি পাওয়া যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এ নিয়ে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হলো।

আলীকদম ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানিয়েছেন, সকালে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে লাশের সংবাদ পাওয়া যায়। আমতলি ঘাট থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বেঁচে ফিরে আসা ১৯ পর্যটককে আলীকদম থানায় রাখা হয়েছে।

পর্যটকদের মধ্যে রাহাত হোসেন নামের একজন জানান, আজকে উদ্ধার হওয়া লাশটি স্মৃতি আক্তারের। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায়। স্মৃতি আক্তার ও মো. হাসান পর্যটন ব্যবস্থাপনা সংস্থা ট্যুর এক্সপার্টের সহপরিচালক। তাঁদের ব্যবস্থাপনায় এই ভ্রমণ আয়োজিত হয়।

৮ জুন দুটি দলে ৩৩ জন পর্যটক আলীকদম ও থানচি উপজেলার মধ্যবর্তী দুর্গম ক্রিস্টং পাহাড়ে গিয়েছিলেন। পাঁচ দিনের ভ্রমণে এক দলে ১১ জন ও তিন দিনের ভ্রমণের আরেক দলে ২২ জন পর্যটক ছিলেন। গত বুধবার তিন দিনের ভ্রমণ শেষে ২২ জনের দলটি ফিরে আসার পথে প্রবল বৃষ্টিতে হঠাৎ শামুকঝিরি ঝরনায় পাহাড়ি ঢল নামে। তাঁদের মধ্যে ১৯ জন ফিরে এলেও জুবাইরুল, হাসান ও স্মৃতি পেছনের দিকে থাকায় নিখোঁজ হন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, নিখোঁজ তিন পর্যটকের মধ্যে আজ স্মৃতি আক্তার ও গতকাল জুবাইরুল ইসলামের লাশ পাওয়া গেছে। লাশ দুটি বান্দরবান সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। মো. হাসানের লাশ এখনো পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিখোঁজ তিনজনকে শনাক্তের জন্য মানবিক কারণে ১৯ জন পর্যটককে থানায় রাখা হয়েছে। তাঁরা না হলে নিখোঁজ তিনজনকে শনাক্ত করার কেউ থাকবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলীকদমে নিখোঁজ আরেক পর্যটকের লাশ উদ্ধার