বসন্ত এসে গেছে। প্রকৃতিতে ফুল ও সৌন্দর্য নিয়ে আসার পাশাপাশি বসন্ত ঋতু কিছু রোগবালাইও নিয়ে আসে। এর মধ্যে একটি হলো জলবসন্ত বা চিকেন পক্স। এখনই চিকেন পক্স হওয়ার মৌসুম।
চিকেন পক্স একটি ছোঁয়াচে রোগ। সাধারণত ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ১০ থেকে ২১ দিনের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। চিকেন পক্সে শরীরে ছোট ছোট লালচে তরলযুক্ত ফোসকা ওঠে। সঙ্গে দেখা দেয় মাথাব্যথা আর জ্বর। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। চিকেন পক্সের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো লালচে ফোসকার সঙ্গে মারাত্মক চুলকানি। এটি বেশ যন্ত্রণাদায়ক; বিশেষ করে ছোটদের জন্য। ফোসকা ফেটে গেলে তা থেকে আরও বেশি ফুসকুড়ির মতো উঠতে শুরু করে। তেমন কোনো চিকিৎসা ছাড়াই ঘরোয়া যত্নেই রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
কিছু নিয়ম মেনে চলুনচিকেন পক্স থেকে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এগুলো হলো:
● রোগীর শরীর ঠান্ডা রাখা উচিত। তাই নিয়মিত গোসল করা জরুরি। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিতে নয়।
● নিমপাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
● এ সময় জ্বর আসতে পারে। তাই প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তবে ছোটদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
● প্রতিদিন দুবেলা জামাকাপড় বদলানো উচিত। তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। সুতি ছাড়া অন্য কাপড়ের পোশাক পরবেন না, তাতে চুলকানি বা অস্বস্তি বেড়ে যেতে পারে।
● পক্সে চুলকানি হলে কখনো তাতে নখ ছোঁয়াবেন না। এতে ত্বকে স্থায়ীভাবে পক্সের দাগ থেকে যেতে পারে। আবার তা থেকে সংক্রমণও ছড়াতে পারে।
● চুলকানি কমাতে অলিভ অয়েল বা ক্যালামাইন লোশন লাগান, আরাম পাবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান।
কী খাবেন, কী খাবেন না● চর্বিজাতীয় খাবার যেমন মাখন, তেল, বাদাম, পনির, নারকেল বা চকলেটে অতিরিক্ত ফ্যাট থাকে, যা পক্সের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে। অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবারও খাবেন না।
● আখরোট, চিনাবাদাম, কিশমিশের মতো খাবারে অর্গিনিন নামক একপ্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা চিকেন পক্সের জীবাণুর বংশবিস্তার করে। এমনিতে এই অ্যাসিড শরীরের পক্ষে ভালো হলেও বসন্তের সময় তা একেবারেই খাবেন না।
● রোগীকে বেশি ক্যালরি, ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। তবে মুখে স্বাদ আনতে পাতলা স্যুপও খাওয়াতে পারেন। ইলিশ ও চিংড়িজাতীয় মাছ ছাড়া যেকোনো মাছের পাতলা ঝোল আর ভাতও খেতে পারবে রোগী। তবে এর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
●ডাল খাওয়া খুবই উপকারী। বিশেষ করে ডালের পানি যদি চুমুক দিয়ে খাওয়ানো যায়, তবে শরীর খুব ঠান্ডা থাকে। রোগীকে ফলের রসও খাওয়াতে পারেন, এটি শরীরে পুষ্টি জোগাবে। তবে লেবুর রস খাওয়া যাবে না।
ডা.
জাহেদ পারভেজ, চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস