রাজনীতির পালাবদলে বদলে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঞ্জাবির বাজারও
Published: 24th, March 2025 GMT
রাজনীতির পালাবদলে বদলে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঈদের পাঞ্জাবির বাজার। আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে নেই, নেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কিছু চালকলের মালিকও। ফলে এবার পাঞ্জাবির বাজারে আগের বছরগুলোর মতো উত্তাপ নেই। পাঞ্জাবি বিক্রেতাদের বক্তব্যেই উঠে এসেছে এমন কথা।
এই মার্কেটের কয়েকজন পাঞ্জাবি বিক্রেতা বলেন, প্রতিবছরই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওদুদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মোখলেসুর রহমান, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি, শিবগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা সামিল উদ্দিন আহমেদ ওরফে শিমুল, গোলাম রাব্বানীসহ আরও অনেক রাজনৈতিক নেতা কর্মী-সমর্থকদের ঈদে পাঞ্জাবি উপহার দিতেন। এবার তাঁরা নেই। হয় আটক হয়েছেন, নইলে আত্মগোপনে আছেন। ফলে এবার পাঞ্জাবির বিক্রি অনেকটাই কম।
শুক্রবার রাতে নিউমার্কেটের পাঞ্জাবির দোকান ‘চাঁপাই স্টোর’–এর মালিক বলেন, এবার প্যাকেজ মাল বিক্রি করতে পারেননি। শুধু সিঙ্গেল বিক্রি করেছেন। এতে করে বিক্রি বেশি এগোয় না। প্যাকেজ বলতে কী বোঝাচ্ছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, একই দরে একসঙ্গে এক রকমের মাল বিক্রি বোঝায়। গত বছর কেবল গোলাম রাব্বানীর কাছেই দেড় শতাধিক পাঞ্জাবি বিক্রি করেছেন তিনি। এমন ১৫-২০ জনের কাছে তিনি প্যাকেজ মাল বিক্রি করেছেন গত বছরের ঈদে।
কথা হয় একই মার্কেটের এমআর গার্মেন্টসের মজিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, একসময় ঝাঁক বেঁধে রাজনৈতিক দলের কর্মীরা এসে পাঞ্জাবি ও শার্ট কিনে নিয়ে যেতেন। এবার সেটা নেই।
এই মার্কেটের ‘সাঈদ বয়েজ কালেকশন’ নামের দোকানের মালিক গোলাম মর্তুজা দিলেন আরেকটি তথ্য। থানার ওসিরাও স্লিপ পাঠিয়ে উপহারের পোশাক দিতে বলতেন রাজনৈতিক কর্মীদের। এবার সেটা নেই।
নিউমার্কেটে আসা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য লতিফুর রহমান কর্মীদের ঈদ উপহার দেওয়া প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার সে রকমভাবে দিচ্ছি না। তবে সাত-আটজনকে না দিয়ে পারা যায়নি। সবাইকে এক হাজার টাকা করে দিয়েছি পাঞ্জাবি কেনার জন্য।’
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম শুক্রবার রাতে বলেন, এখনো কর্মীদের ঈদ উপহার দেওয়া শুরু করেননি। দেখা যাক কী হয়!
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ইনব বগঞ জ র জন ত সদস য উপহ র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।