বেতন-ভাতা-পেনশন বাড়ল ভারতীয় এমপিদের
Published: 24th, March 2025 GMT
অষ্টম বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) প্রতীক্ষার মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার সংসদ সদস্যদের (এমপি) জন্য একটি বড় সুখবর নিয়ে এসেছে। লোকসভা ও রাজ্যসভার বর্তমান এবং সাবেক এমপিদের বেতন, ভাতা এবং পেনশনে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এই সিদ্ধান্তের ফলে এমপিদের মাসিক বেতন ২৪,০০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে, পেনশন ৬,০০০ টাকা বেড়েছে এবং অতিরিক্ত ভাতা ও পেনশনে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলো ২০২৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে।
সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “ইনকাম ট্যাক্স আইন, ১৯৬১ (১৯৬১-এর ৪৩ নং আইন)-এর ধারা ৪৮-এর ব্যাখ্যার (V) উপধারার অধীনে মূল্যস্ফীতির সূচকের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার এমপি এবং সাবকে এমপিদের বেতন, দৈনিক ভাতা, পেনশন এবং অতিরিক্ত পেনশন বৃদ্ধির নির্দেশ জারি করেছে।”
এই ঘোষণা এমপিদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সহায়তা করবে।
আরো পড়ুন:
হাসিনাবিরোধী অভ্যুত্থান সম্পর্কে জানলেও ভারতের কিছু করার ছিল না: জয়শঙ্কর
নাগপুর দাঙ্গা নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন মমতা
বেতন ও ভাতার নতুন হার
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এমপিদের বেতন ও ভাতায় নিম্নলিখিত পরিবর্তন এসেছে:
বেতন: ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর ১,০০,০০০ টাকা মাসিক বেতন ২০২৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২৪,০০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১,২৪,০০০ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
দৈনিক ভাতা: এটি ২,০০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ২,৫০০ টাকা হয়েছে।
পেনশন: প্রাক্তন এমপিদের জন্য পেনশন ২৫,০০০ টাকা থেকে ৬,০০০ টাকা বেড়ে ৩১,০০০ টাকা মাসিক হয়েছে।
অতিরিক্ত পেনশন: পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের জন্য প্রতি বছরের অতিরিক্ত পেনশন ২,০০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ২,৫০০ টাকা হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যসভায় সর্বাধিক ২৫০ জন সদস্য থাকতে পারেন। এর মধ্যে ২৩৮ জন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিনিধি এবং ১২ জন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত। রাজ্যসভা একটি স্থায়ী সংস্থা, যা ভেঙে যায় না। প্রতি দুই বছরে এর এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর নেন এবং নতুন নির্বাচিত সদস্যরা তাদের স্থান পূরণ করেন। প্রতিটি সদস্যের মেয়াদ ছয় বছর। অন্যদিকে, লোকসভায় সর্বাধিক ৫৫০ জন সদস্য থাকতে পারেন, যার মধ্যে ৫৩০ জন রাজ্যের এবং ২০ জন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিনিধি। বর্তমানে লোকসভায় ৫৪৩টি আসন রয়েছে, যা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পূর্ণ।
এই বেতন বৃদ্ধি এমন এক সময়ে এসেছে যখন অষ্টম বেতন কমিশনের প্রত্যাশা তুঙ্গে। সরকারি কর্মীদের জন্য এই কমিশনের বাস্তবায়নের প্রত্যাশিত তারিখ ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি। ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে প্রতি দশকে একটি করে বেতন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশন সরকারি কর্মী ও পেনশনভোগীদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন ও ভাতার সুপারিশ করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি অষ্টম বেতন কমিশনের অনুমোদন দিয়েছেন। ১৯৪৭ সালে প্রথম কমিশন গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সাতটি বেতন কমিশন কার্যকর হয়েছে। সর্বশেষ সপ্তম বেতন কমিশন ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছিল, যেখানে বেতন ও ভাতায় প্রায় ২৩.
এই বেতন বৃদ্ধি এমপিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের কারণে তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নতুন বেতন কাঠামো তাদের দায়িত্ব পালনে আরও সহায়তা করবে। পশ্চিমবঙ্গের সাংসদদের জন্যও এটি একটি স্বস্তির খবর। রাজ্য থেকে নির্বাচিত এমপিরা এই বৃদ্ধির ফলে তাদের নির্বাচনী এলাকায় কাজকর্ম আরো ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারবেন।
অষ্টম বেতন কমিশনের সম্ভাবনা
ক্লিয়ারট্যাক্স-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, অষ্টম বেতন কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য বেতন কাঠামো, ভাতা এবং পেনশন-সংক্রান্ত সুবিধায় বড় পরিবর্তন আনবে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের কথা মাথায় রেখে এই কমিশন একটি ন্যায্য প্যাকেজ তৈরি করার লক্ষ্য নিয়েছে। যদিও চূড়ান্ত সুপারিশ এখনও প্রকাশিত হয়নি, তবে সম্ভাব্য বেতন বৃদ্ধি এবং নীতিগত পরিবর্তন সরকারি কর্মী ও পেনশনভোগীদের জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অষ্টম বেতন কমিশন সরকারি কর্মীদের জন্য আরো শক্তিশালী আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। সপ্তম বেতন কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭, যা বেতনকে ২.৫৭ গুণ বাড়িয়েছিল। অষ্টম কমিশনে এই ফ্যাক্টর ২.৮৬-এর কাছাকাছি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ন্যূনতম বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে ৫১,৪৮০ টাকায় উন্নীত করতে পারে। এমপিদের জন্য এই সাম্প্রতিক বৃদ্ধি এই প্রত্যাশাকে আরো জোরদার করেছে।
ঢাকা/সুচরিতা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ বনয ত র র দ র জন য ৫০০ ট ক ০০০ ট ক এমপ দ র ক র যকর সদস য সরক র প নশন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য
প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।
ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।
আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছেপ্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।
তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩