বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বাহিনীর আনসার ব্যাটালিয়নের সিপাহি পদে শুধু পুরুষ প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়েছে। আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
আবেদনের যোগ্যতাআবেদনের জন্য প্রার্থীকে কমপক্ষে এসএসসি বা সমমান পাস হতে হবে। ২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল বয়স ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যে থাকতে হবে। শারীরিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে উচ্চতা সাধারণ ও অন্যান্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্রার্থীর ক্ষেত্রে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি হতে হবে। সাধারণ ও অন্যান্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে ওজন ৪৯ দশমিক ৮৯৫ কেজি, বুকের মাপ ৩২-৩৪ ইঞ্চি এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী প্রার্থীর ক্ষেত্রে ওজন ৪৭ দশমিক ১৭৩ কেজি, বুকের মাপ ৩০-৩২ ইঞ্চি। সব প্রার্থীর দৃষ্টিশক্তি লাগবে ৬/৬।
প্রার্থীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে। তালিকাভুক্ত আনসার-ভিডিপি সদস্য ও ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য কৃতিত্বের অধিকারী প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
আরও পড়ুনবাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে এমওডিসি পদে চাকরির সুযোগ২২ মার্চ ২০২৫যেভাবে আবেদনইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) অথবা যেকোনো অনলাইন সুবিধাসম্পন্ন কম্পিউটার থেকে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ওয়েবসাইটে ‘আনসার ব্যাটালিয়নের সিপাহি পদের জন্য আবেদন’ লিংকে ক্লিক করে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। লিংকটি ২৪ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত সক্রিয় থাকবে। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনকালীন নির্ধারিত ফি আবেদন পোর্টালে প্রদর্শিত মানি ট্রান্সফার পদ্ধতি অনুসরণ করে অর্থ জমা দিতে হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন হলে অনলাইন থেকে আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করতে হবে। আবেদনকালে প্রার্থীর নিজ মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে প্রাপ্ত ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করতে হবে, যা পরে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে প্রয়োজন হবে। অনলাইনে আবেদন ও ফি পরিশোধসংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে পরামর্শের জন্য ০৯৬৭৭১১২২৪৪ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। এই লিংকে নিয়োগসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।
বাছাইয়ের স্থান, তারিখ ও সময়বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমি, সফিপুর, গাজীপুরে প্রার্থী বাছাই হবে। অনলাইনে দাখিলকৃত আবেদনে উল্লিখিত মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুনবিসিআইসিতে বড় নিয়োগ, পদ ৬৮৯২১ মার্চ ২০২৫প্রার্থী বাছাইনির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের পর্যায়ক্রমে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা এবং চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। পরবর্তী সময়ে পুলিশ ভিআর-সম্পন্ন হওয়ার পর সঠিক তদন্ত প্রতিবেদনপ্রাপ্তি সাপেক্ষে নিয়োগপত্র দেওয়া হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রযাচাই-বাছাইয়ে অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল/সাময়িক সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, ৬ (ছয়) কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত রঙিন ছবি, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/পৌরসভা চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্ব সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, অভিভাবক কর্তৃক স্বাক্ষরিত সম্মতিসূচক সনদ, যা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/পৌরসভা চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক প্রতি স্বাক্ষরিত, প্রার্থী অবিবাহিত মর্মে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার চেয়ারম্যান বা সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত সনদ, প্রিন্ট করা আবেদনপত্র ও প্রবেশপত্র এবং প্রার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কলম সঙ্গে আনতে হবে।
প্রশিক্ষণনির্বাচিত প্রার্থীদের বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমি, সফিপুর, গাজীপুরে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। ট্রেইনি রিক্রুট সিপাহি হিসেবে ছয় মাস মেয়াদি মৌলিখ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে সন্তোষজনকভাবে সমাপ্ত করতে হবে। প্রশিক্ষণকালীন বিধি মোতাবেক পোশাক সামগ্রীসহ থাকা–খাওয়া ও চিকিৎসা সুবিধা প্রাপ্য হবেন।
আরও পড়ুনপ্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীনে বড় নিয়োগ, পদ ২৫৫২৩ মার্চ ২০২৫নিয়োগ ও চাকরির সুবিধাসাফল্যের সঙ্গে প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী সদস্যদের ১৭তম গ্রেডে ৯,০০০–২১,৮০০ টাকা স্কেলে বেতন দেওয়া হবে। এ ছাড়া বিধি মোতাবেক প্রাপ্য অন্যান্য বেতন–ভাতাদিসহ আনসার ব্যাটালিয়নের সিপাহি পদে নিয়োদ দেওয়া হবে। ট্রেইনি রিক্রুট সিপাহি পদে নির্বাচিত প্রার্থীর মৌলিক প্রশিক্ষণ সমফলভাবে শেষে আনসার ব্যাটালিয়নে যোগদানের তারিখ থেকে তাঁর দুই বছরের শিক্ষানবিশকাল শুরু হবে। দুই বছর সন্তোষজনকভাবে চাকরি পূর্ণ হলে তাঁর সিপাহি পদে স্থায়ী করা হবে।
নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীরা বিনা মূল্যে পোশাকসামগ্রী, ঝুঁকি ভাতা, চিকিৎসা সুবিধা এবং পারিবারিক রেশনসামগ্রী প্রাপ্য হবেন।
আবেদনের শেষ সময়: ১২ এপ্রিল ২০২৫।
ইউনিভার্সিটি অব লুক্সেমবার্গের বৃত্তি, স্নাতক–স্নাতকোত্তরে প্রয়োজন নেই আইইএলটিএসইতালির বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি, আবেদন স্নাতক-স্নাতকোত্তরে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল দ শ আনস র ও পর ক ষ র জন য কর ত ক গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
মুহাম্মদ ইলিয়াসের তাবলিগি দর্শন
মানুষের হৃদয়ে ঈমানের আগুন জ্বালানোর প্রয়াসে শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভী (১৮৮৫-১৯৪৪) গড়ে তুলেছিলেন জামায়াতে তাবলিগ, যা বিশ্বব্যাপী দাওয়াতের এক অপূর্ব নজির। তাঁর বাণী ও উপদেশের সংকলন ‘মালফুজাত’ নামে আরবি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে, যা তাঁর দাওয়াতি দর্শন ও তরবিয়তি পদ্ধতির এক জীবন্ত দলিল। দামেস্কের দারুল কলম থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থ, শায়খ আদিল হাররাজি আল-ইয়ামানি আন-নাদভির তত্ত্বাবধানে সম্পাদিত, তাবলিগ জামায়াতে মূল দর্শনের প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধু মুহাম্মদ ইলিয়াসের বাণীর সংকলন নয় বরং একটি ঐতিহাসিক ও দাওয়াতি দলিল, যা আধুনিক ইসলামি আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্মূল্যায়নের দাবি রাখে।
‘মালফুজাত’-এর শিক্ষা
শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াসের মজলিস মালফুজাত সংরক্ষণ করেছেন তাঁর শিষ্য মুহাম্মদ মানজুর। তাবলিগ জামায়াতে ছয়টি মূলনীতি—কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকর, ইকরামুল মুসলিমিন, ইখলাস ও নিয়ত এবং আল্লাহর পথে বের হওয়ার ভিত্তিতে গ্রন্থটি রচিত। তিনি তাওহিদকে (আল্লাহর একত্ব) নাজাতের মূল ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তাওহিদের দুর্বলতা মুসলিমদের অধঃপতনের কারণ’। তিনি ফরজ ইবাদতের প্রাধান্য, জিকিরের প্রাচুর্য এবং তাকওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ফরজগুলোর মর্যাদা নফলের চেয়ে অনেক উঁচুতে। নফলের উদ্দেশ্য ফরজগুলোর ঘাটতি পূরণ করা’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
তাঁর দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল সরল কিন্তু গভীর। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে আত্মশুদ্ধির মাধ্যম হিসেবে দেখতেন, যা তাবলিগের একটি বৈশিষ্ট্য। তিনি রিয়া (লোকদেখানো) ও বিতর্ক এড়ানোর পরামর্শ দেন, বলেন, ‘ইখলাস (খাঁটি আল্লাহর জন্য) ছাড়া কোনো কাজ কবুল হয় না।’ তাঁর দৃষ্টিতে, দাওয়াতের লক্ষ্য হলো আল্লাহর আদেশকে মানুষের স্বভাবে পরিণত করা, যাতে নিষিদ্ধ কাজ তার কাছে অপছন্দনীয় হয়। তিনি জিকিরকে এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচনা করতেন।
শায়খ ইলিয়াসের দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল তাওয়াজ্জুহ বা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের পরিবর্তে তাজকিয়া (আত্মশুদ্ধি) ও ইখলাসের ওপর কেন্দ্রীভূত। তিনি জটিল তাত্ত্বিক আলোচনার পরিবর্তে সরল নসিহতের ওপর জোর দিতেন। তাঁর মতে, দাওয়াত হবে এমন, যেন ‘আল্লাহর আদেশ মানুষের স্বভাব হয়ে যায়’। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে তুলনা করতেন সাহাবিদের ত্যাগের সঙ্গে, যা দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক উন্নতি আনে। তিনি বলেন, ‘দাওয়াতে আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার ফরজ, কিন্তু কতজন এই ফরজ পালন করে?’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
আরও পড়ুনসুরা হুমাজাতে চারটি পাপের শাস্তির বর্ণনা০৬ মে ২০২৫ঐতিহাসিক পটভূমি
মুহাম্মদ ইলিয়াস ভারতের কান্ধলায় একটি আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দেওবন্দি সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে তাঁর শৈশব কাটে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন, সাধারণ মুসলিমদের ধর্মীয় অজ্ঞতা এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ তাঁর দাওয়াতি চিন্তার পটভূমি। তিনি বিশ্বাস করতেন, শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মুসলিমদের সংস্কার করতে পারবে না। তাই তিনি একটি জনগণভিত্তিক, বিকেন্দ্রীকৃত আন্দোলন শুরু করেন, যেখানে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা দাওয়াতে অংশ নেয়। তিনি নবীর (সা.) মক্কার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হন, যেখানে তিনি ঘুরে ঘুরে মানুষকে দাওয়াত দিতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মক্কায় তাওয়াফ করে মানুষকে হকের দাওয়াত দিতেন’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
গ্রন্থের গঠন ও সম্পাদনা
মালফুজাত তাঁর মজলিসের সংকলন হলেও এটি একটি সুশৃঙ্খল দাওয়াতি দলিল। সম্পাদনা করেছেন আবুল হাসান আলী নাদভি (রহ.)-এর শিষ্য শেখ আদিল হাররাজি। মুফতি মুহাম্মদ তকী উসমানী, ড. খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানি ও নূরুল হাসান রাশিদ কান্ধলভী প্রমুখের মতো পাকিস্তান ও ভারতের শীর্ষস্থানীয় ইসলামবেত্তাদের ভূমিকা গ্রন্থটিকে মহামূল্য করে তুলেছে। তাদের ভূমিকাগুলো গ্রন্থের দাওয়াতি ও ঐতিহাসিক পটভূমি বুঝতে সাহায্য করবে। আলী নাদভির সঙ্গে মুহাম্মাদ ইলিয়াসের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক এবং তাবলিগের বিশ্বব্যাপী প্রভাবও এতে তুলে ধরা হয়েছে।
আজ যখন মুসলিম বিশ্ব নানা সংকটের মুখোমুখি, এই গ্রন্থ আমাদের তাওহিদ, ইখলাস ও তাজকিয়ার প্রতি ফিরে যেতে আহ্বান জানায়। এটি প্রতিটি দাঈ ও মুসলিমের জন্য একটি পাঠ্য, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ‘দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনকে জীবন্ত করে তুলতে হবে।’
সূত্র: আল-জাজিরা ডটনেট
আরও পড়ুন সুরা ইউসুফের সারকথা১৫ জুলাই ২০২৪