সেকালের হাট এবং ঈদের ব্যস্ততা নিয়ে কিছু কথা
Published: 25th, March 2025 GMT
বাজার সংস্কৃতিতে গত পাঁচ দশকে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এই পরির্তনের হাওয়া লেগেছে গ্রাম, মফস্বলের হাট-বাজারেও। বর্তমানে ঈদ সামনে রেখে গ্রামের হাটকেন্দ্রিক মার্কেটগুলোতে ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। আশির দশকের কথা বলতে পারি, গ্রামীণ জীবনধারার অর্থনৈতিক চাকা ঘুরতো হাটকে কেন্দ্র করে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা রাখতে হাটের অনেক ভূমিকা ছিল। বলতে গেলে কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় গতিশীলতা বজায় রাখার জন্য হাটের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তখনও টেলিফোন, মোবাইলের ব্যবহার গ্রাম পর্যায়ে বিকাশ লাভ করেনি। ফলত, হাট ছিল সামাজিক যোগাযোগেরও একটা বড় মাধ্যম। দেখা যেত যে ১০ থেকে ১৫ বর্গ মাইলজুড়ে বসবাসরত মানুষেরা একটি হাটে কেনাবেচা করতো। িতখনকার দিনে নিকটবর্তী গ্রামের মানুষের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠতো। যেহেতু ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ছিল না, হাটবারে এক আত্মীয় অন্য আত্মীয়ের ভালো-মন্দ খবর পেতো। সপ্তাহে সাধারণত দুই বা একদিন হাট বসতো। তখন গ্রামে তেমন কোনো দোকান দেখা যেত না। হঠাৎ কোথাও কোনো দোকান থাকলেও কেরোসিন, লবণ, দড়ি, তামুক, চকলেট; এই সব পাওয়া যেত।
হাটের নিয়মিত চিত্র: হাটে ক্রয় করার সংস্কৃতিটা অনেকটা বিনিময় প্রথার মতো ছিল। স্থানীয় কৃষক ধান, পাট, সবজি, মসলা, হাঁস, মুরগী, নারকেল, সুপারি নিয়ে আসতেন। হাটে নিয়মিত বাঁশও বিক্রি হতো। দেখা যেত হাটবারে দুইজন মানুষ একটি বাঁশের দুইপাশ ধরে দেহো দুলিয়ে দুলিয়ে হেঁটে গ্রামের পথ ধরে হাটে পৌঁছাতেন। আবার কেউ একাই বাঁশ বহন করতেন। হাটে অনেক ভ্রাম্যমাণ দোকান বসতো। যেমন নাপিতের দোকান, দর্জির দোকান, কর্মকারের দোকান। সপ্তাহের ওই একটি দিন বাড়ির ছেলেরা, পুরুষেরা হাটে গিয়ে নাপিতের সামনে টুলে বসে চুল, দাঁড়ি কাটাতেন। দর্জি একটা মেশিন মাথায় করে নিয়ে আসতো। বাজার থেকে লুঙ্গি কিনে দর্জির কাছ থেকে সেলাই করতো মানুষ। কেউ কেউ হাটে যাওয়ার সময় একটা ব্যাগে পুরনো, ছেঁড়া কাপড় নিয়ে যেতেন সেলাই করানোর জন্য। হাটে বিশেষ ব্যস্ততা থাকতো কামারের ঘরে। কাঁচি, ছুরি, দা, বটি, কোদাল, নিড়ানী ধার কাটানোর কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করতেন কামার।
মাছ খুব বেশি বেচা-কেনা হতো না: স্থানীয়ভাবে উৎপাদিন সবজি, মাছ, মুরগী বিক্রি হতো হাটে। বেচাকেনার ক্ষেত্রে মাছ খুব একটা ভূমিকা রাখতো না। কারণ তখন বিলে, পুকুরে, ডোবায় মাছ পাওয়া যেতো, বাড়ির পুরুষেরা মাছ ধরতেন।
ছোটরা হাটে যাওয়া বায়না ধরতো: বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েরা বাবা, দাদা, নানাদের হাত ধরে হাটে যাওয়ার জন্য খুব উৎসাহ প্রকাশ করতো। হাটে গেলে মুড়ি, মুড়কি, আকরি, মদন কটকটি খাওয়ার সুযোগ মিলতো তাদের। বাড়ি ফেরার সময় কাগজের ঠোঙায় এসব খাবার কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরতো তারা। আবার আখ কিনেও বাড়ি ফিরতে দেখা যেত।
হৃদ্যতা তৈরি করতো হাট: তখনকার দিনে হাট থেকে বেশিরভাগ মানুষ হেঁটে বাড়ি ফিরতো। তাদের মাথায় থাকতো ঝুরি আর ঝুরিভর্তি সদাই। হাটটা একটা আড্ডারও জায়গা ছিল। দেখা যেতো যে কেউ হাটে যেয়েই বাড়ি ফিরে যেত না। তারা হাটে পরিচিতজনদের সঙ্গে আড্ডা, গল্পে মেতে উঠতো। তারপর সন্ধ্যার দিকে একসঙ্গে অনেকে গল্প করতে করতে বাড়ি ফিরতো। কখনও কখনও সামাজিক কোনো সমস্যার সমাধানে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একসঙ্গে বসে সমাধান করতেন। কেউ কেউ সাইকেলে যাতায়াত করতেন। আর বর্ষায় সবার যাতায়াতের বাহন ছিল নৌকা। দেখা যেত, এক সঙ্গে অনেকে গান গাইতে গাইতে হাটে যেতেন।
ঈদের হাট যেমন ছিল: ঈদ আসলে মানুষ সেটুকু কেনাকাটা করতো, যেটুকু না করলেই নয়। ঈদের দিন বাড়িতে বাড়িতে পায়েস, হাতে কাটা সেমাই রান্না হতো। তবে এখনকার মতো চিনি দিয়ে নয়, গুড় দিয়ে রান্না হতো সেসব। ঈদের আগে হাট থেকে গুড় কেনার হিড়িক পরতো। ঈদের দুই একদিন আগে হাটে গরু জবাই হতো। এখনকার দিনের মতো মানুষ কেজি-কেজি মাংস কিনতো না। মাংসের ভাগ কিনতো। হয়তো তিরিশ টাকায় মিলে যেতো এক ভাগ মাংস। ঈদের আগে হাটে নতুন কাপড় বেচা কেনা বাড়তো। কাপড় কিনে খলিফার (দর্জি) কাছে সেলাই করতে দিতো। তখন দুই চার গ্রামে একজন খলিফা থাকতেন। ঈদের দিন সকালেও তার বাড়িতে লোকজন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতো পোশাক নেওয়ার জন্য।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নবম ব্যাচের (নবনীতক ৯) শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সমাপনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলায় এক মঞ্চে আসীন হন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান সাত উপাচার্য।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেক।
আরো পড়ুন:
নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি
শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
এক মঞ্চে একইসঙ্গে এতজন উপাচার্যকে পেয়ে সমাপনী ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এভাবে একসঙ্গে পুরো সেশনের শিক্ষা সমাপনী আয়োজনের আইডিয়াটি অত্যন্ত চমৎকার। এতে করে একটি ব্যাচের একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ ঘটে। যেখানে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং কোনো সেশন জট থাকে না। আমি এই আইডিয়াটি আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”
খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এখানে এসেছি সংহতি জানানোর জন্য। আমি নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে সফলতা কামনা করছি।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস দেওয়া, বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বা ব্যবসা করার লক্ষ্য থাকে। তবে জীবনে কোনো না কোনো কিছু করতেই হবে। এক্ষেত্রে অবসর বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়।”
পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কখনোই দেখিনি। আর বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে কখনো একসঙ্গে সাতজন উপাচার্যকেও বসতে দেখিনি, এটা অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর করে দেখিয়েছেন।”
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, আমাদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এমন কিছু করার মানসিকতা রাখতে হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “শিক্ষা সমাপনী মানেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে অ্যালামনাই থেকে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই নিজেকে বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করার দায়িত্ব নিতে হবে।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিজেকে চেনাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনই বলে দেবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে।”
প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আগত উপাচার্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তুলে ধরাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং অচিরে দাঁড়াবেই।”
তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসির দুইটি হিট প্রকল্প পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো পাব। আমরা আশা করছি, বি ক্যাটাগরি থেকে আগামী অর্থবছরের আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।”
গোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের সভাপতিত্বে এতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রাধ্যক্ষগণ, দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বুধবার ছাত্রদের কালার ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী