বাজার সংস্কৃতিতে গত পাঁচ দশকে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এই পরির্তনের হাওয়া লেগেছে গ্রাম, মফস্বলের হাট-বাজারেও। বর্তমানে ঈদ সামনে রেখে গ্রামের হাটকেন্দ্রিক মার্কেটগুলোতে ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। আশির দশকের কথা বলতে পারি, গ্রামীণ জীবনধারার অর্থনৈতিক চাকা ঘুরতো হাটকে কেন্দ্র করে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা রাখতে হাটের অনেক ভূমিকা ছিল। বলতে গেলে কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় গতিশীলতা বজায় রাখার জন্য হাটের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তখনও টেলিফোন, মোবাইলের ব্যবহার গ্রাম পর্যায়ে বিকাশ লাভ করেনি। ফলত, হাট ছিল সামাজিক যোগাযোগেরও একটা বড় মাধ্যম। দেখা যেত যে ১০ থেকে ১৫ বর্গ মাইলজুড়ে বসবাসরত মানুষেরা একটি হাটে কেনাবেচা করতো। িতখনকার দিনে নিকটবর্তী গ্রামের মানুষের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠতো। যেহেতু ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ছিল না, হাটবারে এক আত্মীয় অন্য আত্মীয়ের ভালো-মন্দ খবর পেতো। সপ্তাহে সাধারণত দুই বা একদিন হাট বসতো। তখন গ্রামে তেমন কোনো দোকান দেখা যেত না। হঠাৎ কোথাও কোনো দোকান থাকলেও কেরোসিন, লবণ, দড়ি, তামুক, চকলেট; এই সব পাওয়া যেত।

হাটের নিয়মিত চিত্র: হাটে ক্রয় করার সংস্কৃতিটা অনেকটা বিনিময় প্রথার মতো ছিল। স্থানীয় কৃষক ধান, পাট, সবজি, মসলা, হাঁস, মুরগী, নারকেল, সুপারি নিয়ে আসতেন। হাটে নিয়মিত বাঁশও বিক্রি হতো। দেখা যেত হাটবারে দুইজন মানুষ একটি বাঁশের দুইপাশ ধরে দেহো দুলিয়ে দুলিয়ে হেঁটে গ্রামের পথ ধরে হাটে পৌঁছাতেন। আবার কেউ একাই বাঁশ বহন করতেন। হাটে অনেক ভ্রাম্যমাণ দোকান বসতো। যেমন নাপিতের দোকান, দর্জির দোকান, কর্মকারের দোকান। সপ্তাহের ওই একটি দিন বাড়ির ছেলেরা, পুরুষেরা হাটে গিয়ে নাপিতের সামনে টুলে বসে চুল, দাঁড়ি কাটাতেন। দর্জি একটা মেশিন মাথায় করে নিয়ে আসতো। বাজার থেকে লুঙ্গি কিনে দর্জির কাছ থেকে সেলাই করতো মানুষ। কেউ কেউ হাটে যাওয়ার সময় একটা ব্যাগে পুরনো, ছেঁড়া কাপড় নিয়ে যেতেন সেলাই করানোর জন্য। হাটে বিশেষ ব্যস্ততা থাকতো কামারের ঘরে। কাঁচি, ছুরি, দা, বটি, কোদাল, নিড়ানী ধার কাটানোর কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করতেন কামার।

মাছ খুব বেশি বেচা-কেনা হতো না: স্থানীয়ভাবে উৎপাদিন সবজি, মাছ, মুরগী বিক্রি হতো হাটে। বেচাকেনার ক্ষেত্রে মাছ খুব একটা ভূমিকা রাখতো না। কারণ তখন বিলে, পুকুরে, ডোবায় মাছ পাওয়া যেতো, বাড়ির পুরুষেরা মাছ ধরতেন। 

ছোটরা হাটে যাওয়া বায়না ধরতো: বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েরা বাবা, দাদা, নানাদের হাত ধরে হাটে যাওয়ার জন্য খুব উৎসাহ প্রকাশ করতো। হাটে গেলে মুড়ি, মুড়কি, আকরি, মদন কটকটি খাওয়ার সুযোগ মিলতো তাদের। বাড়ি ফেরার সময় কাগজের ঠোঙায় এসব খাবার কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরতো তারা। আবার আখ কিনেও বাড়ি ফিরতে দেখা যেত।
 
হৃদ্যতা তৈরি করতো হাট: তখনকার দিনে হাট থেকে বেশিরভাগ মানুষ হেঁটে বাড়ি ফিরতো। তাদের মাথায় থাকতো ঝুরি আর ঝুরিভর্তি সদাই। হাটটা একটা আড্ডারও জায়গা ছিল। দেখা যেতো যে কেউ হাটে যেয়েই বাড়ি ফিরে যেত না। তারা হাটে পরিচিতজনদের সঙ্গে আড্ডা, গল্পে মেতে উঠতো। তারপর সন্ধ্যার দিকে একসঙ্গে অনেকে গল্প করতে করতে বাড়ি ফিরতো। কখনও কখনও সামাজিক কোনো সমস্যার সমাধানে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একসঙ্গে বসে সমাধান করতেন। কেউ কেউ সাইকেলে যাতায়াত করতেন। আর বর্ষায় সবার যাতায়াতের বাহন ছিল নৌকা। দেখা যেত, এক সঙ্গে অনেকে গান গাইতে গাইতে হাটে যেতেন। 

ঈদের হাট যেমন ছিল: ঈদ আসলে মানুষ সেটুকু কেনাকাটা করতো, যেটুকু না করলেই নয়। ঈদের দিন বাড়িতে বাড়িতে পায়েস, হাতে  কাটা সেমাই রান্না হতো। তবে এখনকার মতো চিনি দিয়ে নয়, গুড় দিয়ে রান্না হতো সেসব। ঈদের আগে হাট থেকে গুড় কেনার হিড়িক পরতো। ঈদের দুই একদিন আগে হাটে গরু জবাই হতো। এখনকার দিনের মতো মানুষ কেজি-কেজি মাংস কিনতো না। মাংসের ভাগ কিনতো। হয়তো তিরিশ টাকায় মিলে যেতো এক ভাগ মাংস। ঈদের আগে হাটে নতুন কাপড় বেচা কেনা বাড়তো। কাপড় কিনে খলিফার (দর্জি) কাছে সেলাই করতে দিতো। তখন দুই চার গ্রামে একজন খলিফা থাকতেন। ঈদের দিন সকালেও তার বাড়িতে লোকজন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতো পোশাক নেওয়ার জন্য। 

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

গান নিয়েই আমার সব ভাবনা

কর্নিয়া। তারকা কণ্ঠশিল্পী। অনলাইনে প্রকাশ পাচ্ছে বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া তাঁর দ্বৈত গান ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। এ আয়োজন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে–

‘ভাঙা ঘর’ ও ‘আদর’-এর পর প্রকাশ পাচ্ছে ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। একনাগাড়ে দ্বৈত গান গেয়ে যাচ্ছেন, কারণ কী? 

শ্রোতাদের চাওয়া আর নিজের ভালো লাগা থেকেই দ্বৈত গান গাওয়া, এর বাইরে আলাদা কোনো কারণ নেই। কারণ, সব সময় ভাবনায় এটাই থাকে, যে কাজটি করছি, তা শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ করবে কিনা। সেটি একক, না দ্বৈত গান– তা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। তা ছাড়া রুবেল খন্দকারের সঙ্গে গাওয়া ‘ভাঙা ঘর’ ও অশোক সিংয়ের সঙ্গে গাওয়া ‘আদর’ গান দুটি যেমন ভিন্ন ধরনের, তেমনি বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’ অনেকটা আলাদা। আসল কথা হলো, যা কিছু করি, তার পেছনে শ্রোতার ভালো লাগা-মন্দ লাগার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। 

দ্বৈত গানের সহশিল্পী হিসেবে নতুনদের প্রাধান্য দেওয়ার কারণ?

সহশিল্পীর কণ্ঠ ও গায়কি যদি শ্রোতার মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার মতো হয়, তাহলে সে তরুণ, নাকি তারকা– তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। এমন তো নয় যে, নতুন শিল্পীরা ভালো গাইতে পারে না। তা ছাড়া তারকা শিল্পী ছাড়া দ্বৈত গান গাইব না– এই কথাও কখনও বলিনি। তাই দ্বৈত গানে তারকাদের পাশাপাশি নতুনদের সহশিল্পী হিসেবে বেছে নিতে কখনও আপত্তি করিনি। 

প্রতিটি আয়োজনে নিজেকে নতুন রূপে তুলে ধরার যে চেষ্টা, তা কি ভার্সেটাইল শিল্পী প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য? 

হ্যাঁ, শুরু থেকেই ভার্সেটাইল শিল্পী হিসেবে পরিচিতি গড়ে তুলতে চেয়েছি। এ কারণে কখনও টেকনো, কখনও হার্ডরক, আবার কখনও ফোক ফিউশনের মতো মেলোডি গান কণ্ঠে তুলেছি। গায়কির মধ্য দিয়ে নিজেকে বারবার ভাঙার চেষ্টা করছি। সব সময়ই নিরীক্ষাধর্মী গান করতে ভালো লাগে। একই ধরনের কাজ বারবার করতে চাই না বলেই নানা ধরনের গান করছি। নিজেকে ভেঙে সব সময়ই নতুনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা জারি রাখছি।

প্রযোজক হিসেবে নিজের চ্যানেলের জন্য নতুন কী আয়োজন করছেন? 

আয়োজন থেমে নেই। তবে কবে নতুন গান প্রকাশ করব– তা এখনই বলতে পারছি না। কারণ একটাই, অন্যান্য কাজের মতো গান তো ঘড়ি ধরে কিংবা সময় বেঁধে তৈরি করা যায় না। একেকটি গানের পেছনে অনেক সময় দিতে হয়। কোনো কোনো গানের কথা-সুর-সংগীতের কাটাছেঁড়া চলে দিনের পর দিন। এরপর যখন তা সময়োপযোগী হয়েছে বলে মনে হয়, তাখনই প্রকাশ করি। 

গান গাওয়ার পাশাপাশি মডেলিং বা অভিনয় করার ইচ্ছা আছে? 

সত্যি এটাই, গান নিয়েই আমার সব ভাবনা। তারপরও অনেকের অনুরোধে কয়েকটি পত্রিকার ফ্যাশন পাতার জন্য মডেল হিসেবে কাজ করেছি। তবে মডেল হব– এমন ইচ্ছা নিয়ে কাজ করিনি। অভিনয় নিয়েও কিছু ভাবি না। অন্য কোনো পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • ‘আগে সাকিব ভাই করতেন, এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি’
  • বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা চেয়ারম্যানের
  • নোবিপ্রবির পুকুরে ছাত্র-ছাত্রীদের গোসলের ছবি ভাইরাল, ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন
  • শততম ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখতে চান ইয়ামাল
  • নির্মাতার ঘোষণার অপেক্ষায় চিত্রাঙ্গদা
  • শিশুর মাথা ঘামে কেন
  • কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত হাওয়া
  • গান নিয়েই আমার সব ভাবনা