ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ১০ তারিখের মধ্যে দিতে নির্দেশ
Published: 25th, March 2025 GMT
ক্রেডিট কার্ডের রিপোর্টকৃত মাসের তথ্য বিবরণী পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিটি লেনদেনের তথ্য-উপাত্ত অটোমেশন ও সঠিকতার সাথে সংগ্রহ, সংকলন, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ এবং কার্ড ও এর লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত অপারেশনাল ম্যানুয়ালে প্রদত্ত ডাটা টেমপ্লেট অনুযায়ী মাসিকভিত্তিতে নিয়মিতভাবে পাঠাতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। আগামী ১ এপ্রিল থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী লেনদেনের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে কার্ড। বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে কার্ডের ব্যবহার এবং চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বর্ধিত চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করে কার্ড সংক্রান্ত তথ্য/উপাত্ত আরো বিস্তৃতভাবে সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কার্ডের লেনদেন সংক্রান্ত এই বিস্তৃত তথ্য/উপাত্ত সংগ্রহের ফলে অত্র বিভাগের বিং ডাটা সংক্রান্ত তথ্য ভাণ্ডার আরো সমৃদ্ধ হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক, কমার্শিয়াল ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, গবেষকগণ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীদারগণ এই তথ্য/উপাত্ত ব্যবহার করে কাস্টমার স্পেন্ডিং বিহেবিয়ারাল প্যাটার্ন এনালাইসিস ইনসাইটফুল ইনফরমেশন আহরণের মাধ্যমে সময়োপযোগী বিভিন্ন ইনোভেটিভ প্রডাক্ট লাঞ্চিং এবং প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে সক্ষম হবেন। এ লক্ষ্যে, দেশে কার্যরত কার্ড সেবা প্রদানকারী সকল তফসিলি ব্যাংক/নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে কার্ডভিত্তিক প্রতিটি লেনদেনের তথ্য/উপাত্ত অটোমেশন ও সঠিকতার সাথে সংগ্রহ, সংকলন, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ এবং কার্ড ও এর লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য/উপাত্ত পোর্টালে রিপোর্ট এর সুবিধার্থে একটি অপারেশনাল ম্যানুয়াল চূড়ান্ত করা হয়েছে। (https://www.
এমতাবস্থায় সংযুক্ত অপারেশনাল ম্যানুয়ালে প্রদত্ত ডাটা টেমপ্লেট অনুযায়ী কার্ড সংক্রান্ত তথ্যাদি মাসিকভিত্তিতে (রিপোর্টকৃত মাসের বিবরণী পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে) পোর্টালের মাধ্যমে (https://ereturns.bb.org.bd/ccrud/upload bigdata) নিয়মিতভাবে প্রেরণ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ধারা ৪৫ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এবং ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর ধারা ৩৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ঢাকা/এনএফ/এনএইচ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে তিন গুণ
নীতি সহায়তার নামে মন্দ ঋণ নিয়মিত দেখানোর সুযোগ বন্ধের পর যেন লাফিয়ে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। গত ১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। মার্চ প্রান্তিক শেষে বিরূপ মানে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
খেলাপি ঋণ যে এভাবে লাফিয়ে বাড়বে তা আগেই ধারণা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গত আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ অনেক বাড়বে। গত ফেব্রুয়ারিতে আগের সেই কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে। কোনো তথ্য লুকিয়ে রাখা হবে না। তবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর এটা আবার কমবে। এ ছাড়া নতুন করে বিতরণ করা ঋণ যেন খেলাপি না হয় সে জন্য বিভিন্ন আইনি কঠোরতা আনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করেছে। সেখানে এভাবে খেলাপি বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, মেয়াদি ঋণখেলাপির সময় পুনর্নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে কিছু বড় অঙ্কের ঋণ বিরূপমানে শ্রেণিকৃত হওয়ায় এভাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ ছাড়া গ্রাহকের চলতি ঋণ নবায়ন না হওয়া, পুনঃতপশিল করা ঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ না হওয়া এবং বিদ্যমান খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে সুদ যোগ হয়ে বেড়েছে খেলাপি।
বিগত সরকারের সময়ে নানা নীতি সহায়তার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হতো। অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর সংস্থাটি নীতি সহায়তা তুলে দেওয়ার শর্ত দেয়। বিশেষ করে মেয়াদি ঋণ অনাদায়ী থাকার ৬ মাস পর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ হিসাব করার বিধান বাতিল এবং ঋণ পরিশোধ না করেও নিয়মিত দেখানোর সুযোগ বন্ধ করতে বলে সংস্থাটি। এর মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন হয়। বিভিন্ন জালিয়াতি করে ঋণের নামে বিপুল অর্থ বের করে নেওয়া শীর্ষ ঋণগ্রহীতাদের বেশির ভাগই এখন পলাতক। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়ে
জেলে আছেন। এসব কারণেই খেলাপি ঋণ লাফিয়ে বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। এর মানে শেষ তিন মাসে ঋণ বেড়েছে মাত্র ৩০ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। যেখানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে যেখানে খেলাপি দেখানো হয়েছিল মাত্র ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এর মানে ১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। আর সরকার পরিবর্তনের আগে গত জুন শেষে খেলাপি ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। সে তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। শেষ ৯ মাসে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে। এর অন্যতম কারণ বিগত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন ব্যাংক দখল করে ঋণের নামে বিপুল অর্থ লুট হয়। সেই টাকা আর ফেরত আসছে না। দখল করা কোনো কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার এখন ৯৮ শতাংশে ঠেকেছে। এক সময় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের যেখানে ৫ শতাংশের কম ছিল খেলাপি। চলতি বছরের মার্চ শেষে বেসরকারি ব্যাংকের ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এসব ব্যাংকের মোট ঋণের যা ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা বা ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। আর বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ৬
হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা, যা ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৩ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ ঋণ খেলাপি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। বিগত সরকারের শুরুর দিকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রীতিনীতির আলোকে ব্যাংক খাত পরিচালিত হচ্ছিল। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগ থেকে বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পুনঃতপশিল চালু হয়। এরপর থেকে নানা শিথিলতায় খেলাপি ঋণ কম দেখানো হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রে কখনও বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতপশিল, কখনও ঋণ ফেরত না দিলেও নিয়মিত দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। গুটিকয়েক ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে গিয়ে পুরো ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। এতদিন লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ এখন বেরিয়ে আসছে। এতে করে দ্রুত বাড়ছে।