নিরাপত্তা শঙ্কায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
Published: 25th, March 2025 GMT
বহিরাগতদের দৌরাত্মসহ চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিক নিরাপত্তা শঙ্কায় রয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস। একইসঙ্গে নিয়মানুযায়ী দিনে ৮ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও জনবল সংকটের কারণে বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে আনসার সদস্যদের। অল্প সময় বিরতি নিয়ে প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টাও দায়িত্ব পালন করছেন তারা।
এদিকে, ঈদের ছুটি উপলক্ষে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বন্ধের আগেই চুরির ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মাঝে নিরাপত্তা শঙ্কা, আতঙ্ক ও উদ্বেগ আরো দ্বিগুণ হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ রেঞ্জের মোট ৯৪ জন আনসার সদস্য কর্মরত আছেন। এর মধ্যে সাতজন কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরে গাড়ি পাহারার কাজে নিয়োজিত। ক্যাম্পাসে তদারকির দায়িত্বে উভয় রেঞ্জের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) ও সহকারী প্লাটুন কমান্ডারসহ (এপিসি) মোট চারজন রয়েছেন।
আরো পড়ুন:
অভ্যুত্থান বিরোধীদের তথ্য চেয়ে ইবি প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তি
গাজায় হামলার প্রতিবাদে ইবি ও কুবিতে বিক্ষোভ
বাকি ৮৩ জন বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে চক্রাকারে ছয় থেকে সাতজন ছুটিতে থাকেন। এতে প্রতিদিন দায়িত্ব পালনকারী আনসারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৬-৭৭ জন। অথচ তিন শিফটে অন্তত ৯৮টি পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করতে হয় নিরাপত্তাকর্মীদের।
অভিযোগ রয়েছে, অনেক নিরাপত্তাকর্মী দ্বিগুণ সময় দায়িত্ব পালন করেন। তবে তাদের অনেকেই রাতের ডিউটিতে ঘুমিয়ে সময় কাটান। শুধু রাতেই নয়, দিনের বেলাতেও দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। ভবন ও হলের নিরাপত্তায় চৌকির ব্যবস্থা থাকায় অনেকে বিশ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসেন।
রমজান মাসে ক্যাম্পাস বন্ধের শুরুতেই গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে জুলাই ৩৬ হল সংলগ্ন দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এ সময় দোকানের প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে হল, আবাসিক এলাকা, প্রাধ্যক্ষের বাসভবন ও কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে চুরির ঘটনা ঘটেছে।
বহিরাগত ও অবকাঠামো কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের যোগসাজশে ছিনতাই, মেয়েদের হলের পাইপ বেয়ে ওপরে ওঠা ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শনের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ক্যাম্পাস বন্ধের পর এসব অপরাধ প্রবণতা বাড়ে। এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অপরাধীরা আরও বড় কিছু ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল অভিযোগ করে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বলেন, “হল ও একাডেমিক ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তার প্রদানের দ্রুত সমাধান না হলে যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার এমন পরিস্থিতির কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ও আবাসিক হলগুলোতে চুরি বেড়ে যায়। ফলে বন্ধের মধ্যে বাড়ি গেলেও শঙ্কার মধ্যে থাকতে হয় আমাদের।”
তবে সংকট দ্রুত মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, “প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম থাকায় সমস্যা হচ্ছে। অতিরিক্ত কাজের চাপ ও বিশ্রামের অভাবে অনেক আনসার সদস্যের পুরো রাত জাগা সম্ভব হয় না। তবুও এগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।”
তিনি বলেন, “যেসব জায়গায় চৌকি ছিল, সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাতে নিরাপত্তাকর্মীরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন কিনা, তা তদারকি করা হয়। টহলও বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা নেই।”
প্রক্টর অধ্যাপক শাহীনুজ্জামান বলেন, “প্লাটুন কমান্ডারদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো আনসারকে ঘুমে পাওয়া গেলে, তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ২৫ জন আনসার চেয়ে প্রশাসনকে নোট দেওয়া হয়েছে। সেটি সিন্ডিকেট হয়ে ইউজিসিতে গেছে। নতুন জনবল পেলে সংকট কেটে যাবে।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক য ম প স বন ধ ব যবস থ বন ধ র আনস র
এছাড়াও পড়ুন:
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।
হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।
যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।
একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।