বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ (প্রিন্স) বলেছেন, সেনাবাহিনীকে নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পরিকল্পিতভাবে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করার অপচেষ্টা হচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনী জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও গুজব সৃষ্টি করে কার ফাঁদে পা দিচ্ছেন, তা চিন্তা করে কথা বলা উচিত। সেনাবাহিনী জাতির স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করে দুর্বল করলে জাতীয় স্বাধীনতা বিপন্ন হবে।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের পুটিমারী বাজারে দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমরান সালেহ এ কথাগুলো বলেন। ইফতারের আগে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির এই নেতা।

সৈয়দ এমরান সালেহ বলেন, অহেতুক উত্তেজনা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা লাভের দিন শেষ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে রাজনীতি ও রাষ্ট্রের পরিবর্তন আনতে হলে জননির্ভর গঠনমূলক রাজনীতি করতে হবে। দেশের বর্তমান জটিল পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য যখন আরও সুদৃঢ় ও মজবুত হওয়া প্রয়োজন, তখন ক্রমাগত জাতীয় ঐক্যবিরোধী তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনে আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংসদ ও সরকার কায়েমের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে বিজয় সুসংহত করতে হবে।

পরিপূর্ণ বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের সতর্কভাবে রাজপথে থাকার আহ্বান জানিয়ে এমরান সালেহ বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি জটিল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। নির্বাচনকে প্রলম্বিত করে নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতাবান হওয়ার প্রচেষ্টা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী। প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।’ তিনি সবার প্রতি জাতীয় ঐক্য অটুট রেখে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা তথা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বাস্তবায়নে তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

স্থানীয় বিএনপির সভাপতি আবদুল মোতালেবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আযহারুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিসুর রহমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন খান, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাশেম, মাহবুবুল আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এমর ন স ল হ ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ