দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত বৈষম্য নিরসন করে অ্যাকসেসরিজ রপ্তানিতে ন্যায্যহারে নগদ প্রণোদনার দাবি জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের পশ্চাদ সংযোগ শিল্প মালিকদের সংগঠন চট্টগ্রাম গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যাসোসিয়েশন (সিজিএএ)। একই সঙ্গে অটোমেশন প্রক্রিয়া চালু করে ব্যবসার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনারও দাবি জানিয়েছে এ খাতের সংগঠনটি। 

এ খাতের ব্যবসায়ীদের পক্ষে এনবিআর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ওই চিঠি দেন চট্টগ্রাম ভিত্তিক সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ব্রিটানিয়া লেবেল বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামিল আহমেদ। এতে তিনি বলেছেন, অ্যাকসেসরিজ ছাড়া পোশাক তৈরি বা রপ্তানি সম্ভব নয়। ক্রেতারা অ্যাকসেসরিজের জন্য মাস্টার এলসির মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করেন। ফলে পোশাক মালিকদের ওই অংশটুকু অ্যাকসেসরিজ ব্যবসায়ীদের ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। ফলে যুক্তিসঙ্গতভাবে অ্যাকসেসরিজ অংশের উপর নগদ প্রণোদনা দিতে হবে। 

এ খাতের উদ্যোক্তাদের দাবি, আশির দশকে পোশাকের কাঁচামাল তথা অ্যাকসেসরিজ পণ্য ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হতো। এতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা ও সময় ব্যয় হতো। ধীরে ধীরে নিজস্ব অর্থায়ন, কঠোর পরিশ্রম এবং যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে এসব খাতের ব্যবসা শুরু করেছেন দেশি উদ্যোক্তারা। এতে বৈদেশিক ব্র্যান্ডগুলোর অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে উদ্যোক্তাদের। দেশে এভাবে একের পর এক অ্যাকসেসরিজ কারখানা গড়ে উঠায় পোশাক রপ্তানিতে লিড টাইম কমে আসছে। কিন্তু পোশাক প্রস্তুতকারকরা বিভিন্নভাবে প্রণোদনা পাচ্ছেন। কিন্তু অ্যাকসেসরিজ খাত বঞ্চিত হচ্ছে। এ খাত কতটুকু প্রণোদনা পাওয়া উচিত সেটি যাচাই-বাছাই করতে একটি কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। এ খাতের বিদ্যমান নীতি ও নিয়ম পুনর্গঠন করা দরকার। 

অটোমেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবসার প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছে সিজিএএ। সংগঠনটি বলেছে, বিভিন্ন বিনিয়োগের ওপর কর প্রণোদনা যেমন, যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) প্রবর্তন, উদ্ভাবনের জন্য যেকোনো গবেষণা ও প্রশিক্ষণ, কর্মীদের কল্যাণে সহায়তা করার জন্য সিএসআর ও অনলাইন সিসিটিভি সিস্টেম চালু করা দরকার।  

অ্যাকসেসরিজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ খাত দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। তাই বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ স্কুল গঠনের মাধ্যমে আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রাপাতির জন্য দক্ষ অপারেটর গড়ে তোলার পথ সুগম করা দরকার।

তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকরা রপ্তানিতে প্রণোদনাসহ সব ধরণের সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু অ্যাকসেসরিজ এবং প্যাকেজিং শিল্প দীর্ঘদিন ধরে বাংলাশের পোশাক রপ্তানির জন্য একটি ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প হিসাবে নিরলসভাবে কাজ করলেও প্রণোদনা পাচ্ছে না।

রপ্তানিতে লিড টাইম কমাতে এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্য ধরে রাখতে পশ্চাদসংযোগ শিল্পের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতের প্রচ্ছন্ন রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮ বিলিয়িন ডলার। এরপরও এ শিল্প সরকারের চোখের আড়ালে থেকে যাচ্ছে। জাতীয় শিল্প নীতিতে ২৪টি অগ্রাধিকারমূলক শিল্পকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ সেখানে পোশাক অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প অন্তর্ভুক্ত নেই। এটি স্পষ্ট বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত। 

তৈরি পোশাক খাতের বড় দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যদের জন্য রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা রাখা হয়েছে। কিন্তু অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং খাতের ব্যবসায়ীরা তা পাচ্ছে না। 

গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ খাত লাইসেন্স, বন্ডসহ ব্যবসা সংক্রান্ত যেকোন সেবা পেতে গেলে কাস্টমস, ভ্যাট বিভাগসহ প্রতিটি সরকারি সংস্থা এবং স্থানীয় সরকারের দুর্নীতির রোষানলে পড়তে হয়েছে। এসব কারণে এই শিল্প অবহেলিত হয়ে পড়ছে। একদিকে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে প্রণোদনাও পাচ্ছেন না। এতে অনেকেই এ খাতে নতুন বিনিয়োগের ঝুঁকি নিচ্ছেন না। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় র ব যবস র জন য স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

শিশু নাঈমের পাশে ইবি ক্রিকেট ক্লাব

শিক্ষা বঞ্চিত ৬ বছর বয়সী ছোট্ট নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করে পাশে দাঁড়িয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্রিকেট ক্লাব। তাকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন ব্লু বার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্লে শ্রেণিতে ভর্তি করে দেয় সংগঠনটি। 

জানা যায়, নাঈমের বাবা অন্তর দ্বিতীয় বিয়ে করে অনত্র চলে যান। নাইমের মা নুপুর গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন।

নাইমকে লালন-পালন করছেন তার নানী হাজেরা খাতুন। তিনি ক্যাম্পাসের একটা দোকানে কাজ করে জীবিকানির্বাহ করছেন।

আরো পড়ুন:

তরুণদের শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে: জবি উপাচার্য

শিক্ষার গতিপথ ও উন্নয়ন নিয়ে ঢাবিতে সেমিনার

বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষ থেকে সংগঠনটির সভাপতি শেখ সাকলাইন ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা সুশিক্ষার উদ্দেশ্যে নাঈমকে স্কুলে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন।

পরে নাঈমকে ব্লু বার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্লে শ্রেণিতে ভর্তি করে সংগঠনটি। এছাড়া নাঈমের পড়াশোনার জন্য আনুষঙ্গিক বই, পোশাক এবং ১ মাসের অগ্রিম বেতন প্রদান করা হয়।

নাঈমের নানী হাজেরা খাতুন বলেন, “অর্থের অভাবে নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছিলাম না। পরে ক্যাম্পাসের এই মামাদের জানালে তারা আমাকে আশ্বস্ত করেন এবং নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। এতে আমি খুশি। আমি চাই নাঈম ঠিকমতো পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হোক।”

ছোট্ট নাঈম জানায়, বড় ভাইয়েরা তাকে স্কুলে ভর্তি করাইছে। এতে সে অনেক খুশি। সে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে চায়।

ক্রিকেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, “আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, তাদের প্রতি সমাজের অনেক প্রত্যাশা থাকে শুধু জ্ঞানে নয়, মানবিকতাও। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমাদের ক্লাব একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এক অসহায় ও দরিদ্র শিশুর শিক্ষা জীবনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য তাকে কেবল একটি শিক্ষার সুযোগ দেওয়া নয়, বরং একটি সম্মানজনক জীবনের পথে এগিয়ে নেওয়া। আমরা বিশ্বাস করি, সমাজের প্রতিটি শিশুরই সম্ভাবনা আছে ভালো কিছু করার, শুধু দরকার একটি সুযোগ। আর সেই সুযোগটা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। এটা শুধু একটি শিশুর গল্প নয়, এটা আমাদের ক্লাবের ভবিষ্যতের গল্প।”

ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি শেখ সাকলাইন বলেন, “ইবি ক্যাম্পাসে ক্রিকেটারদের খুব আদরের নাঈম। ছোট থেকেই সে তার নানীর কাছে থাকে। তার নানী আমাদের ক্যাম্পাসে একটা দোকানে কাজ করে। আমরা ইবি ক্রিকেট ক্লাব যখন মাঠে খেলি, তখন ছোট নাঈম আমাদের দেখলেই ছুটে আসে। আমরা আদর করে তাকে অনেক কিছু কিনে দেই।”

তিনি বলেন, “একদিন তার নানী আমাকে জানান, নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করতে হবে। আমি তাকে আশ্বস্ত করি, নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করব। ইবি ক্রিকেট ক্লাব, শুধু ক্রিকেটে সীমাবদ্ধ নয়। আমরা সুযোগ পেলে অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। খেলাধুলা মানুষের উন্নত মন মানসিকতার বিকাশ ঘটায়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে নাঈম একদিন অনেক বড় হবে এবং সে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবে, ইনশাআল্লাহ।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের থেকে তরুণদের দূরে থাকতে হবে: মজিবুর রহমান
  • শিশু নাঈমের পাশে ইবি ক্রিকেট ক্লাব